Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
পাশেই সপা শিবির

সপাকে পাশে নিয়ে অচেনা মাঠে লড়াই শুরু মমতার

চেনা পথ ছেড়ে এ বার অচেনা পাড়ায় লড়াই শুরু হল তৃণমূল নেত্রীর। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁর দেশব্যাপী আন্দোলনের বোধন হয়েছে দিল্লিতে। কিন্তু আসল লড়াই শুরু হতে চলেছে আগামিকাল। উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে গোমতীনগরের ১০৯০ চক থেকে। ভুলভুলাইয়ার শহরে অভ্যর্থনা অবশ্য ভালই হল তৃণমূল নেত্রীর।

কলকাতায় মিছিল সেরে সোমবার রাতেই লখনউ যান মমতা। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান অখিলেশ যাদব। —নিজস্ব চিত্র

কলকাতায় মিছিল সেরে সোমবার রাতেই লখনউ যান মমতা। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান অখিলেশ যাদব। —নিজস্ব চিত্র

অনমিত্র সেনগুপ্ত
লখনউ শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫১
Share: Save:

চেনা পথ ছেড়ে এ বার অচেনা পাড়ায় লড়াই শুরু হল তৃণমূল নেত্রীর।

নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁর দেশব্যাপী আন্দোলনের বোধন হয়েছে দিল্লিতে। কিন্তু আসল লড়াই শুরু হতে চলেছে আগামিকাল। উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে গোমতীনগরের ১০৯০ চক থেকে। ভুলভুলাইয়ার শহরে অভ্যর্থনা অবশ্য ভালই হল তৃণমূল নেত্রীর। স্বাগত জানাতে হাজির হলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। কিন্তু তার পরের পথটা কেমন হবে তা নিয়ে সম্ভবত নিশ্চিত নন খোদ মমতাই।

দিল্লি-কলকাতা তাঁর চেনা মাঠ। স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে বিপক্ষের চোখে চোখ রেখেই লড়তে চান মমতা। সেই লড়াই শুরু করতেই আজ রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ লখনউয়ের চৌধুরী চরণ সিংহ বিমানবন্দরে নামেন মমতা। সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন অখিলেশ যাদব-সহ রাজ্যের বেশ কয়েক জন মন্ত্রী। বিমানবন্দরেই দশ মিনিট আলাদা ভাবে কথা বলেন মমতা-অখিলেশ। মোদী বিরোধিতার রণকৌশল নিয়েও কথা হয় তাঁদের। বৈঠক শেষে জনসভার প্রস্তুতিতে লখনউয়ে ঘাঁটি গেড়ে থাকা মুকুল রায়কে সঙ্গে নিয়ে সোজা সরকারি অতিথিশালায় চলে যান মমতা।

গো-বলয়ের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র উত্তরপ্রদেশ। আড়াই বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে কার্যত খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিলেন মোদী-বিরোধীরা। খোদ প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্র বারাণসীতে নোট বাতিলে ক্ষোভের বিপরীত চিত্র নিয়ে চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর সেই উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউকেই স্বেচ্ছায় অগ্নিপরীক্ষায় জন্য বেছে নিয়েছেন মমতা। অখিলেশ যাদব তথা সমাজবাদী পার্টিকে পাশে পেতে পারেন। কিন্তু দিনের শেষে লড়াইটা তাঁর ব্যক্তিগত।

কারণ নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গোটা দেশ জুড়ে যে বিরোধী স্বর প্রবল হয়ে উঠেছে তার শুরুটা করেছিলেন মমতাই। গোটা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে যে তিনি রয়েছেন তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে গত সপ্তাহে যন্তরমন্তরের সভাতেই। আর তাই এক দিকে রয়েছে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ। অন্য দিকে জাতীয় রাজনীতিতে মোদী-বিরোধী চরিত্রগুলির প্রধান মুখ হয়ে ওঠাও এখন তৃণমূল নেত্রীর অন্যতম লক্ষ্য। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “আসলে এ হল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী- বিরোধিতার ভিত তৈরির লড়াই।”

প্রশ্ন হল মমতার এই লড়াইয়ে সমাজবাদী পার্টির অবস্থান ঠিক কোথায় ?

পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সভা করার দায়িত্ব যাঁর ঘাড়়ে সেই মুকুল রায়ের কথায়, “আমি সংসদে অখিলেশ ও মুলায়মের সঙ্গে কথা বলেছি। দুজনেই নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন।” আজ মমতাকে অর্ভ্যথনা জানাতে অখিলেশ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আগামিকালের সভায় রাজনৈতিক কারণে তাঁর বা মুলায়মের পক্ষে মমতার সঙ্গে একই মঞ্চে আসা কতটা সম্ভব তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তৃণমূল শিবিরেও। কারণ পিতা বা পুত্র কেউ সভায় উপস্থিত হলেই মোদী- বিরোধিতার প্রশ্নে জাতীয় রাজনীতিতে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবেন মমতা। অনেকের মতে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখা মুলায়ম অন্তত নিজের শহরে সেই বাড়়তি জমিটুকু মমতাকে দিতে নারাজ। দিল্লিতে মমতার সভায় এসেছিলেন সপা সাংসদ জয়া বচ্চন। তেমনই এখানেও মাঝারি মাপের কোনও সপা নেতা উপস্থিত থাকতে পারেন।

তবে শীর্ষ নেতারা সভায় হাজির না থাকলেও এই জনসভা সফল করতে সপা শিবিরের যে সমর্থন রয়েছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর মুখে মমতার দু’টি বড় বড় হোর্ডিং। কলকাতার মতোই মেট্রোর লাইন বসছে শহরের শিরা-উপশিরা দিয়ে। প্রবল যানজট ঠেলে শহরের ভিতরে যত সেঁধিয়েছি ততই চোখে পড়েছে মমতার কাট আউট, পোস্টার, ব্যানার। সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ চক-চৌরাহা, সরকারি সমস্ত হোর্ডিং দখল করেছে মমতার মুখ। আশ্বস্ত তৃণমূল শিবিরের দাবি, সরকারের নির্দেশ না থাকলে এ ভাবে প্রশাসনের সাহায্য পাওয়া যেত না। এমনকী আগামিকাল ভিড়় জোগাড়ের পিছনে সপা নেতৃত্বের হাত থাকবে বলে ফেলেই জিভ কাটছেন অতি উৎসাহী তৃণমূল নেতারা।

নোট বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মোদী সরকারের মাথাব্যথা যে মমতাকে নিয়েই তা ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি মুখপাত্র শ্রীকান্ত শর্মার কটাক্ষ, “রাহুল গাঁধী, মমতা, অখিলেশ, অরবিন্দ কেজরীবাল- সকলেরই বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।” আর মমতা-অখিলেশের ঘনিষ্ঠতা প্রশ্নে শ্রীকান্তের মন্তব্য, “তৃণমূল নেত্রী সারদা কাণ্ডে মুখ পুড়িয়েছেন। আর অখিলেশ সরকার চালাচ্ছেন জমি ও খনি মাফিয়ার সাহায্যে। এখন সেই দু’জনে হাত মিলিয়েছেন। মানুষ এঁদের প্রত্যাখ্যান করবেন।”

নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ জুড়ে কেন্দ্র-বিরোধী লড়াই মমতাকে কতটা গতি দেবে তা হয়তো কিছুটা হলেও বলে দিতে পারে আগামিকালের লখনউ।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee demonetisation Rally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy