মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
কংগ্রেসের ডাকা শনিবারের ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের ভিডিয়ো বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, শেষ মুহূর্তে এই বৈঠকের বিষয়ে তাঁদের জানানো হয়েছে। নির্দিষ্ট করে কোনও আলোচ্যসূচিও দেওয়া হয়নি। কিছুটা রুষ্ট তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা এ কথা বলেছেন, “এ ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত জানানোর দেড় ঘণ্টা পরে কংগ্রেস তাদের আলোচ্যসূচি প্রকাশ করল। আর কী বলার আছে?”
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিষয়টিকে ঘিরে ইন্ডিয়া মঞ্চের মধ্যে বেসুর স্পষ্ট। শুধু মমতাই নন, এই বৈঠকে যোগ না-ও দিতে পারেন আরও এক জন নেতা, এমনটাই তৃণমূল সূত্রের খবর। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মমতা ছাড়াও রয়েছেন জেডিইউ-এর নীতীশ কুমার, আরজেডি-র তেজস্বী যাদব, ডিএমকে-র স্ট্যালিন, আপ-এর অরবিন্দ কেজরীওয়াল, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই-এর ডি রাজা, এনসি-র ওমর আবদুল্লা, পিডিপি-র মুফতি মহম্মদ সঈদ, জেএমএম-এর হেমন্ত সোরেনের মতো ১৪টি দলের শীর্ষ নেতা। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে থাকবেন রাহুল গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, আজ বিকেল পাঁচটা নাগাদ কংগ্রেসের কে সি বেণুগোপাল ফোন করেন তৃণমূলের এক শীর্ষ সাংসদকে, যিনি ইন্ডিয়ার জোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত। সেই ফোনের পর ওই সাংসদ মমতাকে জানান, শনিবার সকাল এগারোটার সময় ভিডিয়ো বৈঠকে প্রধান বিরোধী দলগুলির শুধু মাত্র সভাপতি বা প্রধানকেই যোগ দিতে বলা হচ্ছে। দলনেত্রীকে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই বার্তা জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে এবং কংগ্রেস আশা করছে তৃণমূল নেত্রী এই আমন্ত্রণ স্বীকার করবেন। সূত্রের খবর, মমতা তৃণমূলের সাংসদকে তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেন, ওই সময়ে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে। শেষ মুহূর্তে জানালে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়। তৃণমূলের আরও অভিযোগ, কোনও আলোচ্যসূচিও জানানো হয়নি তাদের।
এই ফোনালাপের অনেক পরে, শুক্রবার রাতে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বিবৃতি দিয়ে জানান, ‘ইন্ডিয়ার জোটভুক্ত দলগুলি ভিডিয়ো বৈঠকে বসে সদ্য শুরু হওয়া আসন রফা, ইম্ফল থেকে রবিবারশুরু হওয়া ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি খতিয়ে দেখবেন।’
সূত্রের খবর, যেটা বিবৃতিতে নেই, তা হল আগামীকাল বৈঠকে বিভিন্ন দলনেতাদের মধ্যে আসন সমঝোতার খতিয়ান নিয়ে আদানপ্রদানের পাশাপাশি জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারকে ইন্ডিয়া জোটের আহ্বায়ক করার প্রস্তাবটি নিয়েও কথা পাকা হওয়ার কথা রয়েছে। অথচ নীতীশকে জোটের আহ্বায়ক করা নিয়ে নিজেদের অমত জানিয়েছিল তৃণমূল। এখন যদি মমতার অনুপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর লাগিয়ে দেন কংগ্রেস এবং উপস্থিত বাকি দলের নেতারা? তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “সে ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ব্যাপারে আমাদের যা মতামত, তা আমরা ১৯ ডিসেম্বরের নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকেই জানিয়ে দিয়েছি।”
ঘটনা হল, দিন আষ্টেক আগেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়, কংগ্রেসের স্থির করা আহ্বায়ক হিসাবে নীতীশের নামে তাদের সমর্থন নেই। এটাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়াল যৌথ ভাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের নামই আহ্বায়ক এবং জোটের মুখ হিসাবে তুলে ধরার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এটিও কেজরীওয়াল হিসাব করে ওই বৈঠকে দেখিয়েছিলেন, খড়্গেকে
মুখ করলে অন্তত ৫৮টি আসনে সুবিধা পাওয়া যাবে যা দলিত অধ্যুষিত। কিন্তু সেটা কংগ্রেসই মানেনি। তৃণমূল নেতৃত্বের আজ বক্তব্য, ইন্ডিয়ামঞ্চের সব
দলের মধ্যে নীতীশের সেই গ্রহণযোগ্যতা নেই। ঘটনা হল, আগামীকাল মমতা না থাকলেও কেজরীওয়াল থাকবেন বৈঠকে। নীতীশকে আহ্বায়ক করার প্রশ্নেতিনিও মমতার পথেই হাঁটতে পারেন বলে খবর।
তৃণমূলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও কংগ্রেসের আসন রফার আলোচনা শুরু হয়নি। কিন্তু এসপি-র সঙ্গে একটি এবং আপ-এর সঙ্গে দু’দফা বৈঠক (যার মধ্যে দ্বিতীয় দফার আলোচনা ছিল আজ) হয়েছে কংগ্রেসের জোট বিষয়ক জাতীয় কমিটির। অখিলেশ সিংহ যাদবের নেতৃত্বাধীন এসপি-র সঙ্গে আরও একটি বৈঠক আজ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সূত্রের খবর, কংগ্রেস এখনও প্রস্তুত নয়।
জানা গিয়েছে, আগামী ১৫ তারিখ হবে কংগ্রেস-এসপি-র আসন রফার দ্বিতীয় বৈঠক। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-বিরোধী জোটে কংগ্রেস মায়াবতীকে পাশে রাখতে চাইলেও তাতে আপত্তি তুলেছে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি। মায়াবতীর সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে সমাজবাদী পার্টির নেতারা কংগ্রেস নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন, বহেনজির সঙ্গে জোটে তাঁদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ভাল নয়। এখন মায়াবতী পুরোপুরি বিজেপির দিকে ঝুঁকে রয়েছেন। তাঁকে ভোট দিতে বলা ও বিজেপিকে ভোট দিতে বলা একই বিষয়।
এসপি-র পাশাপাশি গত রবিবার কংগ্রেসের জাতীয় জোট কমিটি আরজেডি-র সঙ্গে বিহারে আসন সমঝোতা নিয়ে কথা বলেছিল। এর পর ওই কমিটি আম আদমি পার্টির নেতাদের সঙ্গে আজ দ্বিতীয় দফার বৈঠক করেছে। কেজরীওয়াল কংগ্রেসকে দিল্লিতে ৭টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৩টি, পঞ্জাবে ১৩টির মধ্যে ৬টি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছেন। তার বদলে তিনি গুজরাতে একটি, গোয়ায় একটি, হরিয়ানায় তিনটি আসন চান। এই নিয়ে কথা চলছে।
যে দলের নেতাকে ইন্ডিয়া জোটের আহ্বায়ক করার কথা ভাবা হচ্ছে, সেই জে়ডিইউ-এর সঙ্গেও কংগ্রেসের জোট নিয়ে যথেষ্ট স্নায়ুর লড়াই চলছে বলে খবর। সম্প্রতি দলের জাতীয় মুখপাত্র কে সি ত্যাগী বলেছেন, “কংগ্রেসের আরও তৎপরতা দেখানো উচিত,
সময় বয়ে যাচ্ছে। যে ভাবে কংগ্রেস সভাপতি জোটের আহ্বায়ক হওয়া নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, তাতে আমাদের খুব ভাল লাগেনি।” আজ বিহারের মন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা অশোক চৌধরি কিছুটা কড়া ভাবেই জানিয়েছেন, লোকসভায় ১৭টি আসনের নীচে সমঝোতা করবে না তাঁর দল।তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এখনই১৬ জন সাংসদ তাঁদের রয়েছেন। শনিবারের বঠকে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে বলেই জানাচ্ছে রাজনৈতিক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy