ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক শুক্রবার। কিন্তু বিরোধীদের শ্লেষ, এই বৈঠক আসলে বিজেপির শীর্ষ নেতার সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর। উদ্দেশ্য, ‘সেটিং’ বা রাজ্যে ইডি-সিবিআইয়ের তদন্ত ধামাচাপা দিতে ‘আঁতাঁত’। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য বিষয়টিকে ‘প্রশাসনিক বৈঠক’ হিসেবেই তুলে ধরছে। দাবি করছে, মূলত রাজ্যের বিপুল বকেয়া টাকার দাবি নিয়েই মোদীর সঙ্গে কথা হবে মমতার।
ইডি-র অভিযানে কালো টাকার পাহাড় উদ্ধার, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি— নিয়োগ দুর্নীতি ঘিরে রাজ্যে এমন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চার দিনের সফরে দিল্লি এসে পৌঁছলেন মমতা। সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিমানবন্দর থেকে সোজা মহাদেব রোডে সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের বাসভবনে গিয়ে তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করলেন নেত্রী। শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মমতার একান্ত বৈঠক মোদীর সঙ্গে। সন্ধ্যায় তিনি দেখা করবেন নতুন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গেও।
এ দিন দিল্লি বিমানবন্দরে এবং মহাদেব রোডের বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি মমতা এবং অভিষেক। এখনও পর্যন্ত এই সফরে সাংবাদিক বৈঠকের কর্মসূচি নেই বলেই জানা গিয়েছে। তবে আজ তৃণমূলের সেনাপতিরা মোদী-মমতার বৈঠককে বার বার ব্যাখ্যা করেছেন ‘প্রশাসনিক বৈঠক’ হিসেবে।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাংসদদের বৈঠকের পরে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন, তখন তা প্রশাসনিক স্তরের হয়। মুখ্যমন্ত্রী যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মোট ৯৭ হাজার কোটি বকেয়া টাকার দাবি নিয়ে। এর মধ্যে জিএসটি বাবদ কেন্দ্রের কাছে পাওনাও রয়েছে।” তাঁর কথায়, জুন পর্যন্ত রাজ্যগুলির জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩৫,২৬৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ১৬৩৭ কোটি। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের যদিও বক্তব্য, মে মাস পর্যন্ত যাবতীয় বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিপিএম এবং কংগ্রেস অবশ্য তৃণমূলের দাবি মানতে নারাজ। নীতি আয়োগের বৈঠকে এই প্রথম বার বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অংশগ্রহণ করতে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলছে তারা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কি নীতি আয়োগের বৈঠকে আগ্রহ, নাকি দুর্নীতি আয়োগে? এর আগে তো কখনও যাননি! ভুবনেশ্বরে তিন দিন আগে থেকে গিয়ে বসেছিলেন অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করার জন্য। রাজীব কুমার-পর্বের পরে দিল্লি গিয়ে লুকিয়ে-চুরিয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এখন নানা কিছুর পরেও কয়লা-কাণ্ডের চার্জশিটে ভাইপোর নাম নেই। সেটা ছিল প্রথম ‘সেটিং’। এ বার পার্থ-কাণ্ডের পরে বাকি সেটিং-গুলোও করতে হবে। সেই কাজটা করতে যাচ্ছেন।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কী ধরনের কেলেঙ্কারি ধরা পড়ছে, সবাই দেখতে পাচ্ছেন। বিপদে পড়ে এখন বাঁচার জন্য দিদি মোদীর দ্বারস্থ হচ্ছেন। আগে কখনও তো নীতি আয়োগের বৈঠকের কথা মনে হয়নি!’’
এই ‘সেটিং’-অভিযোগের পাল্টা রাজনৈতিক জবাব দিতে গিয়ে সুদীপ বলেন, “কিছুদিন আগেই আসানসোলে লোকসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল ৩ লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতেছে। যাঁরা তৃণমূলনেত্রীকে অপবাদ দিচ্ছেন, তাঁদের অন্তত ছ’মাস মুখে কুলুপ দিয়ে থাকা উচিত। মামলার নিষ্পত্তি না হলে মানিকতলার বিধানসভা উপনির্বাচন হবে না। আমরা চাই, সেই ভোটও দ্রুত হয়ে যাক। তা হলে মানুষ কাকে চাইছেন, তার ফয়সলা হয়ে যাবে।”
সুজনের বক্তব্য, ‘‘সত্যিই রাজ্যের স্বার্থে উনি (মমতা) কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক করলে খুশি হব। কিন্তু তার জন্য প্রস্তুতি লাগে, চিঠিপত্র আদান-প্রদান লাগে, ফাইল লাগে।’’ অতীতে সারদা-নারদ কাণ্ডে শ্লথ হয়ে যাওয়া তদন্তের উদাহরণ তুলে আগে থেকেই বিজেপি-তৃণমূলের আঁতাঁতের অভিযোগ করছে বাম এবং কংগ্রেসের একাংশ।
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কেন্দ্রে যখন কংগ্রেস সরকার ছিল, সিপিএম কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করত। তখন কি মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বৈঠক হয়নি? তখনও কি সেটিং হয়েছিল?’’ প্রথম বার নীতি আয়োগের বৈঠকে যাওয়া প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘কেন্দ্রের বঞ্চনা এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে, মমতাকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।’’
দলীয় সূত্রের খবর, সাংসদদের অনেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছেন, যে ‘অপ্রত্যাশিত ঘটনা’ সম্প্রতি রাজ্যে ঘটে গিয়েছে, তা কেউ কখনও ভাবতে পারেননি। তবু দল এবং সরকার যে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, তাকে ‘প্রশংসনীয়’ বলে মমতা এবং অভিষেককে সাধুবাদ জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদেরা।
জুনের পরে রাজ্যগুলির জিএসটি থেকে যথেষ্ট আয় না হলে, কেন্দ্র ক্ষতিপূরণ দেবে, এমন ইঙ্গিত এখনও মেলেনি। ফলে কোষাগারের কী হাল হবে, তা নিয়ে সব রাজ্যই চিন্তায়। মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি লিখে দাবি করেছিলেন, জুনের পরেও তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষতিপূরণের মেয়াদ বাড়ানো হোক। কিন্তু এখনও তার জবাব আসেনি। তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরব হবেন মমতা।
বৈঠকের পরে কাকলি ঘোষ দস্তিদার, দোলা সেনরা বলেন, সংসদ অধিবেশন চলছে। তা নিয়ে নেত্রীকে জানানো হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি এবং জিএসটি নিয়ে প্রথমদিন থেকে সংসদে আন্দোলন করছে তৃণমূল। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে লোকসভার আলোচনায় কাকলি কাঁচা বেগুনে কামড় বসিয়েছিলেন। আজ মমতা অবাক হয়ে কাকলির কাছে জানতে চেয়েছেন যে, তিনি কী ভাবে এটা করতে পারলেন! সুস্মিতা দেবের বক্তব্য, প্রত্যেক বিরোধীদল শাসিত রাজ্যে বিজেপি যে ভাবে সরকার ভাঙতে চাইছে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার এবং প্রতিবাদ করার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy