মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরবিন্দ কেজরীবাল।
নির্বাচিত সরকার নাকি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি উপরাজ্যপাল (লেফটেন্যান্ট গভর্নর)— দিল্লিতে প্রশাসনিক ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে টানাপড়েন অব্যাহত। সেই লড়াইয়ে এ বার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে পেলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। চিঠি লিখে সর্বতো ভাবে পাশে থাকবেন বলে তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, সাংবিধানিক পদাধিকারী উপরাজ্যপালের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে নির্বাচিত সরকারকে ‘ঠুঁটো’ করে রাখতে চাইছে কেন্দ্র। তাদের এই পদক্ষেপ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ছাড়া কিছু নয়।
দিল্লিতে ক্ষমতা দখল নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে টানাপড়েনে ইতিমধ্যেই কেজরীবালের সমর্থনে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিজেপি- বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। এর মধ্যে অগ্রগণ্য মমতার তৃণমূল। বুধবার কেজরীবালকে দেওয়া চিঠিতে মমতা জানান, দিল্লির নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা খর্ব করতে এবং উপরাজ্যপালের সামনে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে অধস্তন করে রাখতে কেন্দ্র যে ভাবে এগোচ্ছে, তা ‘অগণতান্ত্রিক’, ‘সংবিধান বিরোধী’ এবং ‘প্রতারণাপূর্ণ’। তিনি কেজরীবালের পাশে রয়েছেন এবং যে সমস্ত রাজ্যে অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, নিজে সকলকে চিঠি দেবেন। কেজরীবালকে সমর্থন জানানোর আর্জি জানাবেন।
চিঠিতে মমতা আরও লেখেন, ‘রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা হ্রাস এবং তাদের পুরসভার মতো ঠুঁটো করে রাখতে যে ভাবে দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং সংবিধানে আঘাত হানছে বিজেপি, একজোট হয়ে তার বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় এসেছে বলে মনে করি আমি। কেন্দ্র যে নয়া বিল এনেছে, তা সংবিধানে স্বীকৃত ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ছাড়া কিছু নয়’। বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত না থাকলে দিল্লি চলে আসতেন বলেও জানান মমতা। কেজরীবালের উদ্দেশে তিনি লেখেন, ‘এই লড়াইয়ে আপনি সফল হবেন। এমনটাই কামনা করছি। আপনার লড়াই আমার লড়াই’।
দিল্লিতে ক্ষমতার এই টানাপড়েন বেশ কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার নয়া আইন এনে উপরাজ্যপালের ক্ষমতাবৃদ্ধিকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করায় সেই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে। সম্প্রতি ‘দ্য গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল ক্যাপিটাল টেরিটোরি অব দিল্লি (সংশোধন) বিল ২০২১’ লোকসভায় পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ। তাতে বলা হয়েছে, ক) প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হোক বা মন্ত্রিসভায় সর্বসম্মতিতে গৃহীত কোনও সিদ্ধান্ত, সব ক্ষেত্রে উপরাজ্যপালের মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক, খ) বিধানসভায় নতুন কোনও আইন তৈরি হলে, তার উপর সরকারি সিলমোহর এবং উপরাজ্যপালের সিলমোহর, দুই সমান, অর্থাৎ উপরাজ্যপালের সিদ্ধান্তই সরকারি সিদ্ধান্ত বলে গৃহীত হবে, গ) কোন কোন বিষয়ে তাঁর পরামর্শ নিতে হবে নির্বাচিত সরকারকে, তা উপরাজ্যপালই ঠিক করে দেবেন, ঘ) বিধানসভা বা বিধানসভার কোনও কমিটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আলাদা করে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিতে পারবে না। কোনও ক্ষেত্রে যদি তেমন হয়, সেই নির্দেশ বৈধ বলে গণ্য হবে না।
উপরাজ্যপালের মাধ্যমে অমিত শাহ এবং কেন্দ্র দিল্লি সরকারের কাজে ‘অযথা হস্তক্ষেপ’ করছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ তুলে আসছেন কেজরীবাল। বিলটি সামনে আসার পর নেটমাধ্যমে কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। কেজরীবাল লেখেন, ‘বিলে বলা হয়েছে, ১) দিল্লিতে সরকার মানেই উপরাজ্যপাল। তা হলে নির্বাচিত সরকারের কাজ কী রইল? ২) সব ফাইলপত্র উপরাজ্যপালকে পাঠাতে বলা হয়েছে, যা কি না ২০১৮-র ৪ জুলাই সাংবিধানিক বেঞ্চ যে রায় দিয়েছিল, তার পরিপন্থী। কারণ ওই রায়ে বলা হয়েছিল, নির্বাচিত সরকারই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তার একটা কপি উপরাজ্যপালকে পাঠিয়ে দেবে। আগেভাগে কোনও ফাইল উপরাজ্যপালকে পাঠানোর প্রয়োজন নেই’।
রাজ্যপালের ক্ষমতার এক্তিয়ার নিয়ে এর আগে কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্ঘাত তৈরি হয়েছিল মমতারও। রাজ্যের প্রশাসনিক বিষয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ‘অযথা নাক গলাচ্ছেন’, সাংবিধানিক পদে বসে তিনি আসলে ‘বিজেপি-র এজেন্ট’ হয়ে কাজ করছেন বলে সেই সময় অভিযোগ করে তৃণমূল সরকার। সাংবিধানিক কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিতে ধনখড়কে চিঠিও লেখেন মমতা। তাতে জানিয়ে দেন, সংবিধানের ১৬৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাজ্যপালের ক্ষমতা ব্রিটেনের রানির মতো। রাজ্যের দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করার কোনও অধিকার নেই তাঁর। রাজ্যপাল একজন মনোনীত সাংবিধানক প্রধান আর মুখ্যমন্ত্রী জগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রশাসনিক প্রধান, সে কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেন মমতা।
কেজরীবালকে লেখা চিঠিতেও একই অভিযোগ করেন মমতা। তিনি লেখেন, ‘২০১৪ এবং ২০১৯-এর বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির হাতে শোচনীয় পরাজয় ঘটে বিজেপি-র। তা যে এখনও হজম করে উঠতে পারেননি নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। যে কারণে ঘুরপথে দিল্লি শাসন করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। নতুন বিলটি, তারই প্রতিফলন’। সমস্ত অ-বিজেপি রাজ্যেই মোদী-শাহ জুটি এই কাজ ঘটিয়ে চলেছেন বলে দাবি করেন মমতা। সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে নিরপেক্ষ থাকার পরিবর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালও ‘বিজেপি-র এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করছেন বলেও চিঠিতে আরও একবার অভিযোগ করেন মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy