মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবিঃ পিটিআই।
মোদী সরকার তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর আগামিকাল নীতি আয়োগের বৈঠক বসছে। তাতে যোগ দিতে যাওয়ার ১৮ ঘণ্টা আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি আয়োগ উঠিয়ে দেওয়ার দাবি তুললেন। আজ নয়াদিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘এই নীতি আয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হোক, এর কোনও ক্ষমতাই নেই। দয়া করে যোজনা কমিশনকে ফিরিয়ে আনা হোক। দেশের পরিকাঠামো তৈরিতে যোজনা কমিশনের বড় ভূমিকা ছিল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যোজনা কমিশনের পরিকল্পনা করেছিলেন।’’ এর আগে তাঁর সরকার ঘোষণা করেছিল, সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজ্যের নিজস্ব যোজনা কমিশন গড়া হবে।
কেন্দ্রীয় বাজেটে বাংলা-সহ বিভিন্ন অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যকে বঞ্চনার অভিযোগেও নীতি আয়োগের সমালোচনা করেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, “নীতি আয়োগের আর্থিক ক্ষমতা নেই। আগে যখন যোজনা কমিশন ছিল, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিন বার বৈঠকে যোগ দিয়েছি। তখন রাজ্য থেকে মুখ্য অফিসারেরাও আসতেন। রাজ্য-কেন্দ্র ভাল সমন্বয় হত।’’
কলকাতা ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে যা বলে এসেছিলেন মমতা, দিল্লিতেও সাংবাদিকদের কাছে সে কথাগুলিই বিস্তারিত বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আগে যাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কিন্তু এদের যা আচরণ! আমাদের লিখিত বক্তব্য সাত দিন আগে পাঠাতে বলেছিল। তার পরে বাজেট হয়েছে। বাজেটে বাংলা-সহ বিরোধীরা ক্ষমতায় আছে যেখানে, সেই সব রাজ্যকে বঞ্চনা করা হয়েছে। এই বৈষম্য, রাজনৈতিক পক্ষপাত মানছি না। আমাদের বক্তব্য ‘রেকর্ড’ করতে দিলে করব, না হলে প্রতিবাদ করব, বেরিয়ে আসব। চেষ্টা করব, আমার রাজ্যের হয়ে কথা বলতে। হেমন্ত (সোরেন) যাচ্ছেন, ওঁর রাজ্যের হয়ে কথা বলতে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সবার হয়ে কথা বলব।’’
১০০ দিনের গ্রামীণ প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় কেন্দ্র টাকা বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক এবং কেন্দ্র-রাজ্য সচিব স্তরে বৈঠকের পরেও কেন্দ্রের ইতিবাচক সাড়া নেই— এই অভিযোগে আগামিকাল বৈঠকে সরব হবেন মমতা। আজ তাঁর কথায়, ‘‘১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে আমাদের পাওনা। তিন-চার বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দাবি জানিয়েছি। আমরা জিএসটি-কে সমর্থন করেছি এই ভেবে যে দেশে একটাই কর কাঠামো থাকবে এবং রাজ্যের ঘরে টাকা আসবে। এখন দেখছি আমাদের ভাগ কেটে নেওয়া হচ্ছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করার অভিযোগ এনেছেন। তাঁর কথায়, “ভৌগোলিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের চরিত্রটা নৌকার মতো, ফলে বন্যা উপদ্রুত এলাকা। ভুটান, নেপালের মতো পাহাড়ি এলাকা থেকে জল এসে মাঝখানে দাঁড়িয়ে যায়। ফরাক্কা ব্যারাজ আর ডিভিসি-তে পলি তোলার কাজ বন্ধ। জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে ব্যারাজগুলির। আমি শুনেছি, পলি পরিষ্কার করা গেলে ব্যারাজগুলি অতিরিক্ত ২ লক্ষ কিউসেক জল ধরে রাখতে পারবে।’’
সূত্রের খবর, আগামিকালের বৈঠকে গঙ্গা ভাঙন রোধে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি তুলতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। ফরাক্কা ব্যারাজ ও ডিভিসির একাধিক জলাধারের সংস্কার সাধন দ্রুত করার কথা বলা হবে। বৃষ্টি হলেই ঝাড়খণ্ড জল ছাড়ে। এর জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করার দাবি তোলা হবে। রাজ্যের আপত্তি খারিজ করে ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি কেন হচ্ছে, তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে রাজ্যের কী কী আপত্তি রয়েছে, তা নিয়েও সরব হবেন মমতা। তবে তার আগেই তাঁর কণ্ঠরোধ করে দেওয়া হচ্ছে অথবা কথা শোনা হচ্ছে না— এই অভিযোগে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়েও আসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
আগামিকাল রাষ্ট্রপতি ভবনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকের মূল আলোচ্য— ‘বিকশিত ভারত’। স্বাধীনতার শতবর্ষে। ২০৪৭ সালে ভারতকে উন্নত রাষ্ট্রের শ্রেণিতে নিয়ে যাওয়া এর লক্ষ্য। এর জন্য যে ‘ভিশন ডকুমেন্ট’ তৈরি হবে, তার ‘অ্যাপ্রোচ পেপার’ নিয়ে কাল আলোচনা হবে।
নীতি আয়োগের বক্তব্য, ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠলে, দেশের জিডিপি-র বহর ৫ লক্ষ কোটি ডলার ছুঁয়ে ফেলার পরে, ২০৪৭-এ ভারতের জিডিপি ৩০ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করা হবে। কেন্দ্র, রাজ্যের সহযোগিতা ছাড়া তা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে রাজ্যগুলির ভূমিকা কী হবে, কেন্দ্র ও রাজ্য কী ভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে, গ্রাম-শহরে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে আলোচনা হবে। গত বছর ডিসেম্বরে মুখ্যসচিবদের সম্মেলন থেকে যে সব সুপারিশ করা হয়েছিল, তা নিয়েও কথা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy