কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। ফাইল চিত্র।
বাকি রইলেন শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিরোধী ঐক্যের স্বার্থে একে একে নীতীশ কুমার, তেজস্বী যাদব, শরদ পওয়ারের সঙ্গে কথা বলার পরে এ বার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে সিবিআই দিল্লির আবগারি দুর্নীতির তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কেজরীওয়ালকে সমন পাঠানোর পরেই খড়্গে তাঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।
কংগ্রেস নেতারা বলছেন, খড়্গে নিজে সম্ভবত বিআরএস প্রধান, তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে কথা বলবেন না। সে ক্ষেত্রে প্রধান বিরোধী দলগুলির মধ্যে একমাত্র তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই কংগ্রেস সভাপতির কথা বলা বাকি। সংসদের বাজেট অধিবেশনের শেষে মোট ২০টি দল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একই অবস্থানে এসেছিল। সেই ২০টি দলকে নিয়ে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে বিরোধী দলগুলির বৈঠক ডাকার পরিকল্পনা চলছে। তা নিয়েই মমতার সঙ্গে কথা বলা হবে।
এর আগে নীতীশ কুমার দিল্লিতে এসে খড়্গে ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের পরেই কেজরীওয়ালের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু সরাসরি কেজরীওয়ালকে খড়্গের ফোনের তাৎপর্য আলাদা বলে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি, দুই দলের নেতারাই মানছেন। কারণ কংগ্রেসই দিল্লির আবগারি দুর্নীতি নিয়ে প্রথম অভিযোগ তুলেছিল।
কেজরীওয়ালকে সিবিআইয়ের সমনকে দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস স্বাগত জানিয়েছে। কংগ্রেস আপ আদমি পার্টিকে ‘বিজেপির বি-টিম’ বলে তাদের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ভোট কাটার অভিযোগ তুলেছিল। অথচ অ-কংগ্রেসি দলগুলির মধ্যে কেজরীওয়ালই সর্বপ্রথম রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের বিরোধিতা করেছিলেন। এ বার কংগ্রেস হাই কমান্ড যে জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে স্থানীয় স্তরের বিরোধিতাকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে, খড়্গে কেজরীওয়ালকে নিজে ফোন করে সেই বার্তাই দিয়েছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বও কি একই ভাবে স্থানীয় স্তরের বিরোধিতা সরিয়ে রাখতে পারবেন?
কংগ্রেস সূত্র বলছে, তৃণমূলের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও জটিল। কারণ রাজ্য স্তরে সাগরদিঘি জয়ের পরে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের তিক্ততা বেড়েছে। রাহুল গান্ধী নিজে মেঘালয়ে গিয়ে তৃণমূলের ‘দুর্নীতি ও হিংসার রাজনীতি’-র প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তৃণমূল গোয়া-মেঘালয়ে কংগ্রেসের ভোট কেটে বিজেপিকে সুবিধা করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন। উল্টো দিকে তৃণমূলও সংসদে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে খড়্গের ডাকা বৈঠকে গরহাজির থেকেছে। রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের পরে কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে তারা গেলেও সেখানে প্রথম সারির কোনও নেতাকে পাঠায়নি।
এখানেই শরদ পওয়ারের এনসিপির সঙ্গে তৃণমূলের ফারাক করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। পওয়ার কংগ্রেসের সঙ্গে বৈঠক করে গেলেও কর্নাটকে এনসিপির প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস ও এনসিপির জোট থাকলেও গুজরাত, নাগাল্যান্ড, মণিপুর— অনেক রাজ্যেই এনসিপি আলাদা লড়ে। কিন্তু বিজেপি-বিরোধী ভোটে ভাগ বসিয়ে বিজেপিকে সুবিধা করে দেয় না। তৃণমূল গোয়া, মেঘালয়, ত্রিপুরাতে সেটাই করার চেষ্টা করেছে।”
ওই নেতার আরও বক্তব্য, “সংসদের অধিবেশনের সময়ে খড়্গের বাড়িতে নৈশভোজ বৈঠকে পওয়ার নিজে হাজির ছিলেন। আম আদমি পার্টি সঞ্জয় সিংহকে পাঠিয়েছিল। কে চন্দ্রশেখর রাও তাঁর ঘনিষ্ঠ কে কেশব রাওকে পাঠিয়েছিলেন বৈঠকে। কিন্তু তৃণমূল শুধু প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর সরকারদের পাঠিয়েছিল।”
এর পাশাপাশি কংগ্রেস নেতারা জানতে পেরেছেন, তৃণমূল নেতৃত্ব আনন্দ শর্মার মতো কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। এঁদের রাজ্যসভায় পাঠানোর ‘টোপ’ দেওয়া হচ্ছে বলে কংগ্রেস সূত্রের দাবি। সদ্য তৃণমূল ছাড়া লুইজ়িনহো ফেলেরোর রাজ্যসভার পদ কাকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। হিমাচলের নেতা আনন্দ শর্মা গত বছর রাজ্যসভা থেকে অবসর নিলেও এখনও সরকারি বাংলো ছাড়েননি। কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য মনে করছেন, আনন্দ রাজ্যসভার পদের জন্য তৃণমূলে যাবেন না। হিমাচলের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখুর সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে আগামী বছর হিমাচল থেকেই ফের রাজ্যসভায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে আনন্দের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy