(বাঁ দিকে) মহম্মদ মুইজ্জু এবং নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
ক্রমশ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপ। সে দেশ যে চিনের হয়ে সরাসরি ভারতের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধেছে, তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। প্রথমে ভারতীয় সেনা অপসারণের বিষয়ে মোদী সরকারকে অনুরোধ জানানোর পর এ বার ভারতের সঙ্গে ৪ বছরের পুরনো একটি চুক্তি এ বার বাতিলের পথে মলদ্বীপের নতুন সরকার।
প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে একের পর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এ বার বাতিল করা হচ্ছে ভারতের সঙ্গে ৪ বছরের আগের পুরনো জল জরিপ সংক্রান্ত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনীর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সাহায্য করার জন্য মলদ্বীপের জলসীমায় 'হাইড্রোগ্রাফিক' সমীক্ষা চালানোর অনুমতি মিলত। চুক্তি বাতিলে এ বার তা বন্ধ হতে চলেছে।
বৃহস্পতিবার চুক্তি বাতিলের কথা ঘোষণা করেন মলদ্বীপের জননীতি বিষয়ক সচিব মোহাম্মদ ফিরুজুল আবদুল খলিল। সাংবাদিক বৈঠকে খলিল বলেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এটির নবীকরণ না করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন সরকার। ওই চুক্তি অনুযায়ী মলদ্বীপের জলসীমার উপর দুই দেশ যৌথ ভাবে সমীক্ষা চালাচ্ছিল। মূল কাজটি করছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। প্রাপ্ত তথ্য, নমুনা বিশ্লেষণের দায়িত্বও ছিল ভারতের উপর। মলদ্বীপের প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, জল সংক্রান্ত তথ্য অন্য দেশের হাতে থাকুক, চান না তিনি। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার জন্য বিপদজনক বলেই মনে করছেন মুইজ্জু।
এই চুক্তির আওতায় ভারতীয় নৌবাহিনী গত চার বছর বেশ কিছু সুবিধা ও সুযোগ পেয়েছে। ভারতের সঙ্গে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন ইব্রাহিম সলি, যিনি মুইজ্জুর আগে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মুইজ্জু আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ক্ষমতাসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলি ‘পর্যালোচনা’ করবেন। ভারতের সঙ্গে এই চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত মুইজ্জুর অধীনে মলদ্বীপের বিদেশ নীতিতে চিনের আধিপত্যকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। এই চুক্তি অনুসারে, কোনও এক পক্ষ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে মেয়াদ শেষ হওয়ার কম পক্ষে ছ’মাস আগে অপর পক্ষকে জানাতে হবে। পাঁচ বছর পর পর এ চুক্তিটি স্বয়ংক্রিয় ভাবেই নবায়ন হওয়ার কথা। মোহাম্মদ ফিরুজুল দাবি করেছেন, এ চুক্তিটি আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত
সম্পর্কে ভারতকে আগেই জানিয়েছে মলদ্বীপ।
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের একাধিপত্যের মোকাবিলা করতে অধুনা সক্রিয় মোদী সরকার। আমেরিকার নেতৃত্বে গড়া কোয়াড-এ তারা প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তার আগে সমুদ্রপথ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগে পড়ছে সাউথ ব্লক। গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মহম্মদ মুইজ্জু। চিন ঘনিষ্ঠ এই নেতার এই অবস্থানে কপালে ভাঁজ পড়েছে নয়াদিল্লির। যিনি গোড়াতেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর সরকার সলি-র মতো ‘ভারতই প্রথম’ নীতি নিয়ে চলবে না। সে দেশে এমনিতেই ভারত-বিরোধী একটি রাজনৈতিক হাওয়া বইতে শুরু করেছিল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। সে সময় মলদ্বীপের সঙ্গে তাদের একটি নৌ ঘাঁটির নির্মাণ, সহায়তা এবং রক্ষণবেক্ষণ সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেছিল নয়াদিল্লি। যদিও তা তৈরি হয়েছিল মলদ্বীপের জন্যই, কিন্তু প্রশ্ন উঠেছিল, আসলে ভারত নিজের কৌশলগত সুবিধার জন্য মলদ্বীপের জলপথ ব্যবহার করছে। সলি জাতীয় নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন বলে নির্বাচনী প্রচার করেন মহম্মদ মুইজ্জু। ভারতের মলদ্বীপকে উপহার দেওয়া দুটি ধ্রুব হেলিকপ্টার নিয়েও সলির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রচার চালিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy