মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় শাসক দলের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই, শাসকের সঙ্গে শিল্পগোষ্ঠীর আঁতাঁতের অভিযোগ নিয়ে তাঁর লড়াইয়ের সঙ্গে ভারতীয় রাজনীতিতে মহিলাদের একটা নির্দিষ্ট মডেলে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে না চাওয়ার লড়াইটাও জুড়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন মহুয়া মৈত্র। একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে সম্প্রতি সোজাসাপ্টা নিজের মতামত জানিয়েছেন তিনি।
সংসদে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে এথিক্স কমিটি কার্যত তাঁর বস্ত্রহরণ করতে চেয়েছে বলে আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন মহুয়া। সাম্প্রতিক এই সাক্ষাৎকারে তিনি বিষয়টির পরিধিকে আরও বিস্তারিত করে বলেছেন, ভারতীয় রাজনীতিতে মহিলাদের ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে যে চালু মডেল আছে, তিনি তার সঙ্গে খাপ খান না। মডেল বলে যে, বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলাদের প্রকাশ্যে ডেট করতে নেই, সম্পর্কে জড়াতে নেই। পানীয়ের গেলাসে চুমুক বা ধূমপানও নৈব নৈব চ। ৪৯ বছরের মহুয়া কিন্তু সপাটে বলছেন, ‘‘মডেলে খাপ খাওয়ানোর জন্য আমি নিজেকে পরিবর্তন করব না। আমি যা, আমি তা। আমি রাজনীতি করতে এসেছি ঠিকই। কিন্তু প্রথম থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমি আমার মতো থেকেই সেটা করব।’’ মহুয়া খোলাখুলি বলছেন, ‘‘আমি নিজেকে কোনও অনুসরণীয় মডেল বলে মনে করি না। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন মডেলের নেত্রী যে আসা দরকার, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। দেশে আমি যদি প্রথম মহিলা রাজনীতিক হয়ে থাকি যে নিজের শর্তে বাঁচতে ভালবাসে, তাতে আমার কোনও অসুবিধা নেই।’’
মহুয়ার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হয়েছে— দামী উপহার নেওয়া ইত্যাদি— সেগুলো সার্বিক ভাবে ভারতীয় সমাজের নারীবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গির অংশ বলেই দাবি করছেন তৃণমূল সাংসদ। গত দশ বছরে এই দৃষ্টিভঙ্গি আরও পোক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। যে কারণে বার বার তাঁর দিকে ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী’, ‘আধিপত্যকামী’ এই জাতীয় বিশেষণ ধেয়ে এসেছে বলে দাবি করে মহুয়ার বক্তব্য, ‘‘আমি কলকাতার প্রগতিশীল পরিবারে বড় হয়েছি। ভারতীয় নারীর কেমন হওয়া উচিত, সেই সব ছকে বাঁধা কথা আমাকে শেখানো হয়নি। আমার রাজ্যে মেয়েদের শক্তির স্বরূপ বলে পুজো করা হয়। আমি যে দল করি, তাঁর নেত্রী এক জন মহিলা।’’
মহুয়া মনে করেন না, তৃণমূল স্তরে গিয়ে রাজনীতি করার জন্য তাঁকে গরিবিয়ানার সাজে নিজেকে সাজাতে হবে। ঘরের নিভৃতে দামি ঘড়ি-জুতো লুকিয়ে রেখে জনগণের সামনে নিজেকে অন্য রকম ভাবে হাজির করতে হবে। মহুয়ার বরং দাবি, ‘‘আমি যে রকম ভাবে নিজেকে দেখতে চাই, আমি সে ভাবেই থাকি। আমার সাংসদ এলাকার মানুষও আমাকে সে ভাবেই গ্রহণ করেন। আমাকে উস্কোখুস্কো দেখতে ওঁদের ভাল লাগে না। আমি যদি একঘেয়ে পোশাক পরি, ওঁরাই বরং আমাকে বলেন উজ্জ্বল রং পরতে।’’
এই মহুয়াকেই, তাঁর অভিযোগ, এথিক্স কমিটিতে প্রশ্ন করা হয়েছিল— আপনি রাতে কার সঙ্গে কথা বলেন? কত ক্ষণ কথা বলেন? আপনি যাঁকে বন্ধু বলছেন, তাঁর স্ত্রী কি জানেন? আপনার রাতের ফোনের কল লিস্ট দিন। আপনি কার সঙ্গে কোন হোটেলে থেকেছেন? তার পর জুড়ে দেওয়া হয়, ‘‘আপনি না চাইলে নাও বলতে পারেন!’’ মহুয়া উত্তরে বলেন, ‘‘আপনি কি প্রশ্ন করছেন যে আমি যৌনকর্মী কি না আর বলছেন যে আমি চাইলে না বলতে পারি?’’ মহুয়ার বিস্ময়, ‘‘কোনও ব্যক্তিগত আড্ডাও নয়, একটি সংসদীয় কমিটির চেয়ারে
বসে প্রকাশ্যে কেউ কী করে এমন ভাবে কথা
বলতে পারে?’’
একটাই আফশোস মহুয়ার। নিজের একটা জিনিসই বদলাতে চান তিনি। প্রাক্তন বন্ধুরা তাঁকে যে ভাবে ঝামেলায় ফেলেছেন, সেটা মনে রেখেই বোধহয় তিনি স্বীকার করলেন, ‘‘পুরুষ বন্ধু বাছার ক্ষেত্রে আমার পছন্দটা খুব গোলমেলে হয়ে পড়ে। সত্যি করে বলাই ভাল, এই সব ঝামেলায় মনঃসংযোগ নষ্ট হয়। নির্বাচনী এলাকায় যতটা সময় দেওয়া উচিত, দেওয়া হয় না। নিজের জীবনে কাকে প্রবেশ করতে দেবেন, সে ব্যাপারে আরও একটু ঝাড়াইবাছাই করা দরকার অবশ্যই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy