গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
মহারাষ্ট্রে কি সরকার গঠনের ছক চূড়ান্ত করে ফেলল বিজেপি? শিবসেনা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর হাবেভাবে অন্তত তেমনটাই বোঝাতে চাইলেন বিজেপি নেতারা। খুব শীঘ্রই ‘সুসংবাদ’ মিলবে দাবি করে দলের নেতারা জানালেন, আগামিকাল বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন তাঁরা। কিন্তু সেই সুখবর কি শিবসেনার সঙ্গে জোট? রাজনৈতিক মহলে তেমনই জল্পনা থাকলেও শিবসেনা সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকেও ৫০:৫০ ফর্মুলাতেই অনড় ছিলেন দলের নেতারা। যদিও সেনার অন্য একটি সূত্রে খবর, এই দাবি থেকে কিছুটা হলেও সরে এসে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পদ নিয়ে দর কষাকষিতে ইতি টানতে পারেন উদ্ধব ঠাকরেরা।
চূড়ান্ত সময়সীমা ৯ নভেম্বর। তার মধ্যে কোনও দল সরকার গঠন না করতে পারলে মহারাষ্ট্রে জারি হবে রাষ্ট্রপতি শাসন। ঘাড়ের কাছে সেই সময় নিঃশ্বাস ফেললেও এখনও চূড়ান্ত রূপরেখা পায়নি সরকার গঠনের রাজনৈতিক কাঠামো। এই পরিস্থিতিতেই মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর এই প্রথম বৈঠকে বসল বিজেপি-শিবসেনা। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের ডাকা বৈঠকে যোগ দেন শিবসেনার ৬ মন্ত্রী। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল রাজ্যে অকাল বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্য। দুই দল সূত্রেই খবর, ওই বৈঠকে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকের পরেই ‘সুখবর’-এর কথা শুনিয়েছেন বিজেপি নেতারা। সুধীর মুঙ্গানতিওয়ার বলেন, ‘‘যতই চেষ্টা করুন, জলকে আলাদা করতে পারবেন না। শিবসেনা-বিজেপি এক সঙ্গেই আছে। খবরের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। যে কোনও সময় সুখবর আসতে পারে।’’ একই সঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘‘অন্য কেউ যাই বলুক বা ভাবুক, মহারাষ্ট্রে জোটই সরকার গঠন করবে।’’
কিন্তু কোন সূত্রে? তার কোনও সদুত্তর নেই। শিবসেনা ছাড়া বিজেপির হাতে বিকল্প কোনও রাজনৈতিক সমীকরণের চাবিকাঠিও দূর অস্ত। তাহলে? এখানেই নয়া জল্পনা বা সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। শেষ পর্যন্ত শিবসেনাই অবস্থান কিছুটা নমনীয় করেছে? এমন জল্পনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দলের একটি সূত্রে খবর, ৫০:৫০ ফর্মুলা থেকে কিছুটা সরে এসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মন্ত্রকের সূত্রে রফা হতে পারে বিজেপির সঙ্গে।
আরও পডু়ন: ‘বিদেশি গরু’র দুধেই মিলল সোনা! গবেষণার ‘তথ্য’ সাপ্লাই দিলেন দিলীপরাই
কেন এমন সম্ভাবনা? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপির সঙ্গে যাওয়া ছাড়া শিবসেনার হাতে বিকল্প প্রায় নেই বললেই চলে। শরদ পওয়ারের এনসিপির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা অবশ্য রয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে দু’দলের মিলিত আসন সংখ্যাও (শিবসেনার ৫৬, এনসিপির ৫৪) ম্যাজিক ফিগার (১৪৫) থেকে ৩৫ আসন কম থাকবে। কংগ্রেস (৪৪) বাইরে থেকে সমর্থনের একটা সম্ভাবনা উঠে আসছিল। কিন্তু তাতেও কার্যত জল ঢেলে দিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, শিবসেনার সঙ্গে জোটে গিয়ে সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। আবার শরদ পওয়ারের পক্ষেও কংগ্রেসের হাত ছেড়ে শিবসেনার সঙ্গে যাওয়া কার্যত অসম্ভব। তাছাড়া এনসিপি, কংগ্রেস কোনও দলই সরকার গঠন নিয়ে তেমন উৎসাহ বা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তৎপরতাও নেই কারও।
ফলে শিবসেনার হাতে বিকল্প কার্যত সেই বিজেপিই। এই প্রেক্ষিতেই এত দিন পর্যন্ত যিনি ৫০:৫০ ফর্মুলা নিয়ে জোর সওয়াল করে আসছিলেন, বুধবার সেই শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউতের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘উদ্ধব ঠাকরে (শিবসেনা প্রধান)যা বলবেন, আমরা সেটাই করব।’’ যদিও এদিনও তাঁর মুখে ৫০:৫০ ফর্মুলায় অনড় থাকার কথাই শোনা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘আর কারও কাছে যাওয়ার দরকার নেই’, অধ্যাপকসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ‘অর্থ’ বুঝতে চাইলেন রাজ্যপাল
আগামিকালই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করছে বিজেপি। সরকার গঠনের দাবি জানাতে পারেন ফডণবীসরা। এ প্রসঙ্গে সঞ্জয় রাউতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছি। রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়ার রামদাস অটোয়ালেও দেখা করেছেন। বিজেপি নেতারা যদি আগামিকাল দেখা করে সরকার গঠনের দাবি করেন, তাহলে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে তাঁরা সরকার গঠন করতে পারেন।’’
২৪ অক্টোবর ফল ঘোষণার পর থেকেই এনসিপির সঙ্গে জোট করে শিবসেনা সরকার গঠন করতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে। কিন্তু বুধবার সেই সম্ভাবনায় কার্যত জল ঢেলে দিয়েছেন শরদ পওয়ার। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘বিজেপি-সেনা ২৫ বছর ধরে জোটসঙ্গী। মহারাষ্ট্রকে সাংবিধানিক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেয়ে তাদের উচিত মহারাষ্ট্রকে নতুন সরকার দেওয়া।’’ এ দিন শিবসেনা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে শরদ পওয়ারের। যদিও তার পরেও উদ্ধব ঠাকরের দলের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন পওয়ার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy