Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Child Death

অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি, মহারাষ্ট্রে দুই সন্তানের দেহ কোলে ১৫ কিমি হেঁটে হাসপাতাল থেকে গ্রামে ফিরলেন দম্পতি

পায়ে জুতো নেই। কাদাপথ ধরে হেঁটে চলেছেন পাশাপাশি। মাঝেমধ্যেই ডুঁকরে ডুঁকরে কেঁদে উঠছেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের কাঁধেই মাথা নোয়ানো দুই সন্তান।

দুই সন্তানের দেহ নিয়ে হেঁটে চলেছেন দম্পতি। ছবি: সংগৃহীত।

দুই সন্তানের দেহ নিয়ে হেঁটে চলেছেন দম্পতি। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪২
Share: Save:

অবসন্ন, শোকের পাথর হয়ে গিয়েছে মুখ। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জলও শুকিয়ে গিয়েছে। হেঁটেই চলেছেন তাঁরা। আর কিছুটা পথ পেরোলেই পৌঁছে যাবেন বাড়িতে। কিন্তু সেই চেনা পথও তাঁদের কাছে ক্রমে দুর্গম হয়ে উঠেছিল। পায়ে জুতো নেই। কাদাপথ ধরে হেঁটে চলেছেন পাশাপাশি। মাঝেমধ্যেই ডুঁকরে ডুঁকরে কেঁদে উঠছেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের কাঁধেই মাথা নোয়ানো দুই সন্তান। শরীরের উপরিভাগ সাদা কাপড় আর চাদর দিয়ে মোড়ানো। দুই সন্তানেরই পা উন্মুক্ত।

এ ভাবেই দুই সন্তানকে নিয়ে হেঁটে চলেছেন ওঁরা। না, ওদের সন্তানরা ঘুমোচ্ছে না। উঠে পড়ারও কোনও সম্ভাবনা নেই। ওদের ঠান্ডাও লাগছে না। কারণ ওরা দু’জনেই যে চিরঘুমে চলে গিয়েছে। দুই সন্তানের নিথর দেহ কাঁধে ফেলে হেঁটেই চলেছেন ওঁরা। আর এই দৃশ্যই অবিকল স্মৃতি উস্কে দিল আট বছর আগে ২০১৬ সালে ওড়িশার দানা মাঝির ঘটনা। ২০২২ সালের উত্তরপ্রদেশের কুশীনগর এবং প্রয়াগরাজের ঘটনা। তবে এই ঘটনা ওড়িশা বা উত্তরপ্রদেশ নয়। মহারাষ্ট্রের গঢ়চিরৌলির।

জ্বরে ভুগছিল দুই শিশুপুত্র। সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি দম্পতি। হাসপাতাল যে অনেক দূরে। অর্থও নেই যে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে নিয়ে যাবেন। তা-ও নিজেরাই ১৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে অসুস্থ দুই সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই সন্তানের অবস্থার আরও অবনতি হয়। সময়মতো চিকিৎসা না মেলায় মৃত্যু হয় দুই শিশুর। দুই সন্তানের মৃত্যুতে দিশাহারা হয়ে পড়েন দম্পতি। শেষমেশ সন্তানদের দেহ গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ করেন। কিন্তু তা-ও জোটেনি তাঁদের। উপায় না দেখে শেষে দুই সন্তানের দেহ কোলে নিয়েই বাড়ির পথে হেঁটে রওনা হন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সামলোচনা শুরু হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়েও। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ওড়িশার কালাহান্ডির বাসিন্দা দানা মাঝির স্ত্রীর মৃত্যু হয় এক সরকারি হাসপাতালে। অতিকষ্টে চিকিৎসার খরচটুকু জোগাড় করতে পারলেও স্ত্রীর মৃতদেহ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি হতদরিদ্র দানা মাঝি। হাসপাতালে বার বার অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। অগত্যা স্ত্রীর দেহ কাঁধে চাপিয়েই ৬৭ কিলোমিটার দূরে নিজের গ্রামে ফেরেন তিনি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশে। প্রয়াগরাজে এক ব্যক্তির পুত্রের মৃত্যু পর তাঁর দেহ বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি বলে অভিযোগ ওঠে। শেষে কাঁধে করেই সন্তানের দেহ নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফেরেন ওই ব্যক্তি।

অন্য বিষয়গুলি:

Child death Maharashtra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy