Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

হোঁচট: জয়ে চিন্তার কাঁটা, চাঙ্গা হারার দল

আগে থেকেই এমনটা ভেবে নেওয়ায় জেতা দল যেমন ভাল করে জিততে পারল না, তেমনই হেরে যাওয়া দল এখন ভাবছে, আর একটু ভাল করে লড়লে হয়তো জেতা অসম্ভব ছিল না! 

মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও বিজেপির কার্যনির্বাহী সভাপতি জেপি নড্ডা। পিটিআই

মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও বিজেপির কার্যনির্বাহী সভাপতি জেপি নড্ডা। পিটিআই

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪৫
Share: Save:

এক দল ভেবেছিল, ‘জিতছিই’। আর এক দল ভেবেছিল, ‘হার অনিবার্য’।

আগে থেকেই এমনটা ভেবে নেওয়ায় জেতা দল যেমন ভাল করে জিততে পারল না, তেমনই হেরে যাওয়া দল এখন ভাবছে, আর একটু ভাল করে লড়লে হয়তো জেতা অসম্ভব ছিল না!

হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে মোটের উপরে এটাই হল বিজেপি আর কংগ্রেসের গল্প।

পাঁচ মাস আগে নরেন্দ্র মোদী ঝড়ে লোকসভায় তিনশোর বেশি আসন পেয়েছিল বিজেপি। বিধানসভার নিরিখে মহারাষ্ট্রে ২৮৮টির মধ্যে প্রায় ২৪০টি এবং হরিয়ানায় ৯০টির মধ্যে ৭৯টি আসনে এগিয়েছিল তারা। সুতরাং পাঁচ মাসের মাথায় দু’রাজ্যের বিধানসভা ভোট নিয়ে বিন্দুমাত্র উদ্বেগে ছিলেন না বিজেপি নেতারা। তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন, লোকসভা ভোটের ফর্মুলা দিয়ে কেল্লা ফতে করা যাবে। বেকারি, কৃষি সঙ্কট, বেহাল অর্থনীতির থেকে আমজনতার মুখ ঘোরাতে দেশভক্তিই যথেষ্ট।

উল্টো দিকে ধরাশায়ী কংগ্রেস। লোকসভায় হারের দায় নিয়ে সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাহুল গাঁধী। সনিয়া হাল ধরেছেন বটে, কিন্তু দলে নবীন-প্রবীণ কোন্দল তুঙ্গে। তার উপরে মোদী-অমিত শাহের দাপটে, কুঁকড়ে গিয়েছে দল। ফলে ভাল করে লড়া-ই হল না ভোটে। সনিয়া, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা প্রচারে গেলেন না। নমো-নমো করে প্রচার সারলেন রাহুল।

বৃহস্পতিবার দুই রাজ্যে ভোটের ফল বলছে, প্রত্যাশা মেলেনি। সত্যি হয়নি আশঙ্কাও। মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিবসেনা জোটের ক্ষমতায় আসতে কোনও সমস্যা হয়নি বটে, কিন্তু আসন কমেছে গত বারের তুলনায়। বিজেপির একার আসন একশো পেরোবে কি না, তা অনিশ্চিত ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত। মোদীর দলকে বিপাকে পড়তে দেখে মুখ্যমন্ত্রী পদ আড়াই বছর করে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে শুরু করলেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। বিজেপি সূত্র অবশ্য দাবি করছে, ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন দেবেন্দ্র ফডনবীশই।

হরিয়ানার অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে বিজেপি সব চেয়ে বেশি আসন পেলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অন্তত ৬টি আসন দূরে। ফলে সারা দিন ঘর ছেড়ে বেরোলেন না মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। শেষ পর্যন্ত গোপাল কান্ডা ও আরও কিছু নির্দলকে বিশেষ বিমানে দিল্লি পাঠিয়ে জোড়াতালির সরকার গঠনের প্রস্তুতি চালালেন। গোপালের ভাই গোবিন্দ বলেন, ‘‘অমিত শাহের সঙ্গে কথা হয়েছে। নির্দলদের নিয়ে সরকার হয়ে যাবে।’’ যা দেখে রাজধানী বলছে, ‘‘ধনতেরসে সোনার বদলে বিধায়ক কিনছে বিজেপি।’’

সন্ধ্যায় দিল্লিতে দলের সদর দফতরে এসে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার জয়কে ‘অভূতপূর্ব’ আখ্যা দিলেন মোদী। কিন্তু ঘটনা হল, ভোটের ফল দেখে মুষড়েই পড়েছে বিজেপি। কারণ, শুধু যে আসন-সংখ্যা কমেছে তা-ই নয়, দুই রাজ্যে ধরাশায়ী হয়েছেন একাধিক মন্ত্রী। সকালে ফলাফলের প্রবণতা দেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুষ্ঠানে যাওয়া বাতিল করে দেন অমিত শাহ। বিকেলে হরিয়ানায় সরকার গড়া নিশ্চিত করে খানিকটা নিশ্চিন্ত তিনি।

অন্য দিকে হেরেও চাঙ্গা কংগ্রেস। কর্মীরা বাজি ফাটিয়েছেন, বিলি হয়েছে মিষ্টি। মহারাষ্ট্রে ভোটের সব ভার এনসিপির উপরেই ছেড়ে দিয়েছিল সনিয়ার দল। দুই শরিকই গত বারের তুলনায় আসন বাড়িয়েছে। তাই জোটের অন্দরে আক্ষেপ, আর একটু যদি গা লাগিয়ে লড়া যেত!

হরিয়ানায় ভোটের মুখেও কংগ্রেস ব্যস্ত ছিল গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব নিয়ে। ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার চাপে শেষ মুহূর্তে রাহুল শিবিরের নেতা অশোক তানওয়ারকে সভাপতি পদ থেকে সরাতে বাধ্য হন সনিয়া। ভোটের ফল বলছে ‘বাজিগর’ হুডা-ই। আজ তাঁর আফসোস, ‘‘যদি আরও একটু বেশি সময় পেতাম...।’’

হরিয়ানায় আইএনএলডি থেকে বেরিয়ে নতুন দল গড়া দুষ্মন্ত চৌটালা পেয়েছেন দশটি আসন। রাতের খবর, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করে সরকার গড়ার একটা মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেস।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE