প্রতীকী ছবি।
মুসলিম এক যুবক ভালবেসে বিয়ে করেছেন খ্রিস্টান বান্ধবীকে। সেই বিয়ে ঘিরেই ‘লাভ জেহাদ’ বিতর্ক। হিন্দি বলয়ের কোনও রাজ্য নয়, এমন বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে বাম-শাসিত কেরলে।
জোর করে অন্য ধর্মের তরুণীকে মুসলিম যুবক বিয়ে করেছেন, এই অভিযোগ তুলে বাজার গরম করছে বিজেপি। তাঁর পরিবারের একই রকম অভিযোগের ভিত্তিতে ওই তরুণীকে আগামী তিন দিনের মধ্যে আদালতে হাজিরা দিতে বলেছেন স্থানীয় বিচারক। বিতর্ক সামাল দিতে আসরে নামতে হয়েছে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকেও।
পাত্র শেজিন এবং পাত্রী জয়সনা মেরি জোসেফ অবশ্য জানাচ্ছেন, তাঁদের কাহিনিতে ‘লাভ’ই আছে। কোনও ‘জেহাদ’ নেই। পরস্পরের সম্মতিতেই তাঁরা বিয়ে করেছেন বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন জয়সনা। ইস্টার উপলক্ষে গির্জায় জয়সনার প্রার্থনার ছবি দিয়ে শেজিনও বুঝিয়ে দিয়েছেন, কোথাও কোনও অশান্তি নেই। কিন্তু ঝড় তাতে থামেনি!
শেজিন কোঢ়িকোডের কোডানসেরি অঞ্চলের ডিওয়াইএফআই নেতা। সেই সূত্রেই ঘটনায় জড়িয়ে গিয়েছে সিপিএম। শেজিনদের বিয়ের খবর এলাকায় প্রকাশ্যে আসার পরে জয়সনার বাবা জোসেফ অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর মেয়েকে ‘ফাঁসানো’ হয়েছে। সেই অভিযোগের সূত্রে তিরুভামবাডির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক জর্জ এম টমাস বলে বসেন, শেজিন তাঁর ওই সম্পর্ক বা বিয়ের ব্যাপারে ডিওয়াইএফআই বা দলকে কিছু জানাননি, কোনও অনুমতিও নেননি। এই ধরনের ‘লাভ জেহাদে’র ঘটনা বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে। এমন কাজ করার জন্য শেজিনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত দলের! তার পরেই বিজেপি নেতারা বলতে শুরু করেন, সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক যখন ওই কথা বলছেন, তার মানে কেরলে ‘লাভ জেহাদ’ বাস্তব ঘটনা!
জয়সনার বাবা জোসেফ প্রথমে চেয়েছিলেন, পুলিশ গিয়ে তাঁর মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসুক। কলকাতায় রিজ়ওয়ানুর-কাণ্ডে যে ভূমিকা পুলিশ নিয়েছিল, কেরলে বিজয়ন সরকারের পুলিশ অবশ্য তেমন কিছু করতে চায়নি। জোসেফ তখন দাবি করেন, তা হলে কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তদন্তের ভার দেওয়া হোক! বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন তাঁদের বাড়ি পৌঁছে গিয়ে আশ্বাস দেন, সিবিআই তদন্ত চেয়ে তাঁরা লড়াই চালাবেন। এখানেই না থেমে আদালতে গিয়ে ‘হেবিয়াস কর্পাস’ আবেদন দায়ের করেন জোসেফ। তার প্রেক্ষিতেই জয়সনাকে হাজিরা দিতে বলেছে আদালত।
স্বয়ং জয়সনা অবশ্য বলেছেন, জোর করে তাঁকে কেউ কোথাও নিয়ে যায়নি। প্রেম ও বিয়ের সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁদের দু’জনের। বিষয়টা নিয়ে অহেতুক হইচই হচ্ছে। আর ‘লাভ জেহাদে’র কথা বলে ফেলে দলের প্রাক্তন বিধায়ক হইচই আরও বাড়িয়ে তোলায় হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে সিপিএম নেতৃত্বকে। দলের কোঢ়িকোড জেলা সম্পাদক কে মোহনন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘প্রাক্তন বিধায়ক টমাস মুখ ফস্কে ওই কথা বলে ফেলেছেন। সিপিএম ‘লাভ জেহাদে’র তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়।’’ কান্নুরে সদ্যসমাপ্ত পার্টি কংগ্রেসে সিপিএম আহ্বান জানিয়েছে, হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চালাতে হবে। তার পরেই কি তা হলে ‘লাভ জেহাদে’ মদত দেওয়া শুরু হয়ে গেল? সঙ্ঘ-বিজেপির এমন প্রচারের প্রেক্ষিতে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষকে স্বেচ্ছায় একসঙ্গে থাকার অধিকার দেশের সংবিধান দিয়েছে। ‘লাভ জেহাদ’ পুরোপুরি হিন্দুত্ববাদী পরিকল্পনার একটা অংশ। সিপিএম এই মতে বিশ্বাস করে না। দলের কেউ এমন মন্তব্য করলে দল তা একেবারেই মেনে নেবে না।’’ দলীয় স্তরে বিষয়টার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে সাধারণ সম্পাদক জানানোর পরে প্রাক্তন বিধায়ক টমাস স্বীকার করে নিয়েছেন, তিনি ভুল করেছেন। ওই কথা বলা উচিত হয়নি।
সিপিএম আপাতত নেতাদের পরামর্শ দিয়েছে আগ বাড়িয়ে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য না করার। আদালত প্রশাসনকে কোনও নির্দেশ দিলে প্রশাসনিক স্তরে তা দেখা যাবে। তবে শেজিন-জয়সনার কাহিনিতে এখনও ছায়া থাকছে বিতর্কের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy