পরনে টি-শার্ট। যার কোনওটায় লেখা ‘স্বচ্ছ ভাবে আসন পুনর্বিন্যাস করা হোক’। কোনওটাতে আবার লেখা ‘তামিলনাড়ু লড়াই চালিয়ে যাবে’ এবং ‘তামিলনাড়ু জিতবে’। ডিএমকে সাংসদদের বিভিন্ন ধরনের স্লোগান লেখা টি-শার্ট পরে আসার ‘অপরাধে’ সংসদের উভয় কক্ষে আজ অধিবেশন গোটা দিনের জন্য মুলতুবি করে দেওয়া হয়। এ দিকে আগামিকাল লোকসভায় বিভিন্ন মন্ত্রকের বাজেট অনুদান গিলোটিন (আলোচনা ছাড়াই ধ্বনি ভোটে পাস)-এর মাধ্যমে পাস করানোর লক্ষ্যে হুইপ জারি করেছে বিজেপি। সমস্ত সাংসদকে বাধ্যতামূলক ভাবে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু আলোচনা ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের বাজেট পাস করিয়ে নেওয়ার কৌশল নিয়েছে সরকার, তাই প্রতিবাদ করার জন্য পাল্টা হুইপ জারি করে কংগ্রেস।
আজ সকালে লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হতেই, স্বচ্ছতার সঙ্গে আসন পুনর্বিন্যাসের দাবি জানিয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ডিএমকে সাংসদেরা। তাঁদের মতে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাস হলে লোকসভায় তামিলনাড়ুর প্রতিনিধিত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই স্বচ্ছ ভাবে আসন পুনর্বিন্যাসের দাবিতে উভয় কক্ষে সরব হন তাঁরা। আগামী বছরের গোড়াতেই তামিলনাড়ুতে বিধানসভা নির্বাচন। রাজ্যের নির্বাচনে শাসক দল ডিএমকের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চলেছে বিজেপি। সেই কারণে তামিলনাড়ুর প্রতি নয়াদিল্লির বঞ্চনার মনোভাব ও বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে সংসদে সরব হয়ে রাজ্যবাসীকে বার্তা দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন ডিএমকে নেতৃত্ব। ডিএমকে সাংসদদের এ ভাবে টি-শার্ট পরে ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ জানানো লোকসভার নিয়মবিরুদ্ধ বলে মন্তব্য করে স্পিকার ওম বিড়লা ওই সব টি-শার্ট খুলে আসার নির্দেশ দেন। কিন্তু ডিএমকে সাংসদেরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় গোটা দিনের জন্য লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়।
অন্য দিকে, রাজ্যসভায় প্রথম আধ ঘণ্টা ডিএমকে সাংসদদের স্লোগানের মধ্যেই অধিবেশন চালু থাকে। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় অধিবেশন সাময়িক মুলতুবি করে নিজের কক্ষে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে তৃণমূলের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ নাদিমুল হক। বৈঠকে ধনখড় ও সরকার পক্ষ স্লোগান লেখা টি-শার্ট ছেড়ে কক্ষে উপস্থিত হওয়ার পরামর্শ দেন। তাতে বিরোধীরা পাল্টা প্রশ্নে জানতে চান, বিজেপি সাংসদেরা যে পদ্মফুল আঁকা উত্তরীয় পরে আসেন, তখন কেন অধিবেশন চালাতে সমস্যা হয় না? বিষয়টি নিয়ে অচলাবস্থা জারি থাকায় আজ লোকসভার মতোই দফায় দফায় মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভার অধিবেশনও।
যদিও পরে ঘরোয়া ভাবে ডিএমকে সাংসদ দয়ানিধি মারান জানিয়েছেন, আগামিকাল দলীয় বৈঠক রয়েছে চেন্নাইয়ে। সেই কারণে আগামিকাল সংসদে বিক্ষোভ দেখানোর কোনও পরিকল্পনা নেই দলের। দলীয় সাংসদদের টি-শার্ট পরা নিয়ে ডিএমকে সাংসদ কানিমোজি বলেন, ‘‘আজ সকালেই নতুন নিয়ম আবিষ্কার করেছে শাসক শিবির। আমরা অন্য দলের সাংসদদের স্লোগান লেখা পোশাক পরে সংসদে আসতে দেখেছি। বিজেপিও কক্ষের ভিতরে প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু বিরোধীরা যখন প্রতিবাদ করেন, তখন শাসক শিবির তা নিতে পারে না।’’
লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস নীতি নিয়ে ডিএমকে-র ওই প্রতিবাদের পক্ষে সরব হয়েছেন এসপি নেতা অখিলেশ যাদব। তিনি আজ বলেন, ‘‘আমি তামিলনাড়ুর জনগণের সঙ্গে রয়েছি। কারণ বিজেপি যে কী ভাবে আসন পুনর্বিন্যাস করতে চাইছে তা কেউ জানে না। পুনর্বিন্যাসের পদ্ধতি নিয়ে সকলেরই মনে প্রশ্ন রয়েছে। সরকারের উচিত বিষয়টি স্পষ্ট করা।’’ কংগ্রেস পুনর্বিন্যাস প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বললেও আজ যে ভাবে স্লোগান লেখা পোশাক পরে আসার মতো কারণে সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন বাতিল করা হয়। তার সমালোচনা করে কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘বিজেপির সংসদীয় গণতন্ত্রকে খুন করার পদ্ধতি খুব সরল। কোনও একটি তুচ্ছ বিষয়কে খাড়া করে অধিবেশন বানচাল করে দাও। শাসক শিবির অধিবেশন ভেস্তে দিচ্ছে এটাই নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।’’ শিবসেনা (ইউবিটি) সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর কটাক্ষ, ‘‘আসলে গত কাল রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিতর্কে তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখলে যে ভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন, তাতে তিনি ঘাবড়ে গিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধাতস্থ হওয়ার সময় দিতেই গোটা দিনের জন্য অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)