কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ছবি: পিটিআই।
বিরোধীদের হট্টগোলের মধ্যেই, নাম-কা ওয়াস্তে আলোচনা করেই পাশ হয়ে গেল ডিজিটাল ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল। মূলত ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে ওই বিল আনা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব যুক্তি দিলেও বিরোধীদের দাবি, তথ্যের গোপনীয়তার নামে তথ্যের অধিকার আইন লঘু করা হয়েছে ওই বিলে। এই বিল পাশের ফলে তথ্য সুরক্ষার পরিবর্তে আমজনতার উপরে আরও অনায়াসে নজরদারি করা সম্ভব হবে রাষ্ট্রের।
বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায় আমজনতার তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখতেই ওই বিলটি লোকসভায় নিয়ে এসেছিল সরকার। গত বৃহস্পতিবার বিলটি লোকসভায় পেশ হয়েছিল। আজ মধ্যাহ্নভোজনের পরে বিলটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় লোকসভায়। অন্যান্য দিনের মতোই আজও মণিপুর প্রশ্নে বিক্ষোভ দেখিয়ে আলোচনায় অংশ নেয়নি প্রধান বিরোধী দলগুলি। এ দিন আলোচনার শুরুতেই জনতার উপরে সরকারের নজরদারি, তথ্য অধিকার আইন লঘু করার মতো যে বিষয়গুলি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন বৈষ্ণব। তাঁর যুক্তি, ‘‘কোথাও যদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে, তাহলে কি সরকারি সম্মতির জন্য অপেক্ষা করা উচিত, না কি মানুষকে উদ্ধার করা উচিত...? পুলিশ যখন কোনও অপরাধীর পিছনে ধাওয়া করে তখন কি সে অপরাধীকে ধরবে না কি ফর্ম ভর্তি করবে?’’
আজ ওই বিল নিয়ে আলোচনার শুরুতে রাহুল গান্ধীর নামে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে ভিত্তিহীন যে অভিযোগ এনেছেন তা লোকসভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে পয়েন্ট অব অর্ডার আনেন কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী। আলোচনার শেষে এ নিয়ে অধীরকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হবে আশ্বাস দেন ডেপুটি স্পিকার কিরীটভাই সোলাঙ্কি। যা শুনে সংসদের ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিরোধী সাংসদেরা। ক্ষুব্ধ বৈষ্ণব বলেন, ‘‘বিরোধী নেতাদের আলোচনার কোনও আগ্রহ নেই।’’ বিরোধীদের মূল অভিযোগ ছিল, যদি কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে সে ক্ষেত্রে সেই সংস্থাকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নে যথেচ্ছ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সরকারকে। বৈষ্ণবের পাল্টা যুক্তি, ‘‘শাস্তির পদ্ধতি সরল করা হয়েছে। ফৌজদারি অপরাধের ফলে এখন কোনও সংস্থা অন্যায় কাজ করলে আর্থিক জরিমানা হবে।’’ বিরোধীদের মতে, এর ফলে আর্থিক জরিমানার শর্ত দিয়ে আমজনতার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের প্রশ্নে কার্যত ছাড় দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে।
ওই বিলের অন্যতম লক্ষ্য হল, ডিজিটাল দুনিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা প্রশ্নে দেশ জুড়ে কাঠামো গড়ে তোলা। কিন্তু হায়দরাবাদের এমআইএম দলের সাংসদ ইমতিয়াজ জালিল লোকসভায় বিল সংক্রান্ত আলোচনায় দাবি করেন, ‘‘ওই আইনের মাধ্যমে আসলে দেশবাসীর উপরে নজরদারি করার কাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে সরকার। যথেষ্ট কারণ ছাড়াই আমজনতার তথ্যে নজরদারি করার ছাড় দেওয়া হয়েছে সরকারকে।’’ যদিও বৈষ্ণবের আনা ওই বিলে একটি তথ্য সুরক্ষা পর্ষদ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। ওই পর্ষদের কাজ হবে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন হলে তার বিচার করা। কিন্তু টিডিপি দলের সাংসদ জয়দীপ গল্লা বলেন, ‘‘পর্ষদের সদস্যদের দু’বছরের জন্য নিয়োগ করা হবে। মেয়াদ শেষে তাঁদের পুনর্নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতেই থাকবে। ফলে পর্ষদের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।’’
বিরোধীদের হট্টগোলের মধ্যেই ওই বিলটি আজ ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে যায়। বিল পাশের পরে অধীর চৌধুরী পয়েন্ট অব অর্ডার তোলার চেষ্টা করলে তাঁর মাইক বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ অন্য বিরোধীরা প্রতিবাদে ওয়াক আউট করেন। ফলে বিরোধীদের অনুপস্থিতিতেই এর পরে আনা দেশীয় গবেষণা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আনা অনুসন্ধান জাতীয় গবেষণা ফাউন্ডেশন বিলটিও পাশ হয়ে যায়। ওই গবেষণা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণায় আগামী পাঁচ বছরে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে সরকার। এ ছাড়া বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে কার্যত আলোচনা ছাড়াই পাশ হয় সংশোধিত ফার্মেসি বিল। পাশ করিয়ে নেওয়া হয় আদালতের উপরে চাপ কমাতে আনা মধ্যস্থতা,২০২৩ বিলটিও। কম গুরুত্বের আইনি লড়াই আদালতের বাইরে মেটানোর লক্ষ্যে ওই বিলটি এনেছে সরকার। শেষ বেলায় পাশ হয় সংশোধিত ‘কোস্টাল অ্যাকোয়াকালচার অথরিটি’ বিলটিও। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মৎসজীবীদের বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষের পরিধি বাড়াতে ও ছোটখাটো আইনি জটিলতা থেকে মুক্তি দিতে ওই বিলটি এনেছে সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy