Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

মোদীর খেল্ খতম, বলে দিলেন রাহুল

ভোট-পর্ব ফুরোনোর আগেই ‘হারাব’ থেকে কিসের জোরে ‘হারাচ্ছি’-তে পৌঁছে গেল রাহুলের প্রত্যয়? কংগ্রেস সূ্ত্র বলছে, নানা রাজ্যে যা ভোট হয়েছে, তাতে মোদী-জমানার অবসানের ইঙ্গিতই পেয়েছে রাহুলের দল।

রাহুল গাঁধী ও নরেন্দ্র মোদী।

রাহুল গাঁধী ও নরেন্দ্র মোদী।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কোটশিলা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০৪:০৩
Share: Save:

দু’হাতে দু’টো সাদা কাগজের টুকরো তুলে দেখালেন তিনি। বললেন, ‘‘আয়নার মতো এ ভাবে দু’টো জিনিস নরেন্দ্র মোদীর সামনে থাকে। ইংরেজিতে একে টেলিপ্রম্পটার বলে। মোদী দেখে দেখে বলেন। এখন আর ওখানে লিখেও কোনও লাভ নেই! মোদীর মুখ জনতা বন্ধ করে দিয়েছে!’’ মাথার উপরে গনগনে সূর্য, ৪২ ডিগ্রি গরম। তার মধ্যেই বিপুল হাততালি এল বামনিয়া টালি সেন্টার
ময়দান থেকে।

ভোটের প্রচারে বেরিয়ে এত দিন রাহুল গাঁধী বলে আসছিলেন, মোদীর সরকারকে পরাস্ত করতে হবে। পঞ্চম দফার ভোট হয়ে যাওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা বলে কংগ্রেস সভাপতি এ বার সরাসরি দাবি করলেন, ‘‘হিন্দুস্তানের কোনও শক্তি মোদীকে আর প্রধানমন্ত্রী হতে দেবে না। মানুষ তাঁকে শিক্ষা দিয়েছে, জোর ধাক্কা খেতে চলেছেন তিনি। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, যেমন তেমন আক্রমণ করে আর কোনও লাভ নেই।’’ এত দিন রাহুল বলতেন, মোদীর বিজেপিকে তাঁরা হারাবেন। এ বার রাহুলের মুখে শোনা গেল, ‘‘উনি ঘৃণা ছড়ান, খারাপ কথা বলুন। আমরা ভালবাসা দিয়েই তাঁকে হারাতে যাচ্ছি। মানুষ তাঁকে শিক্ষা দিয়ে দিয়েছে।’’

ভোট-পর্ব ফুরোনোর আগেই ‘হারাব’ থেকে কিসের জোরে ‘হারাচ্ছি’-তে পৌঁছে গেল রাহুলের প্রত্যয়? কংগ্রেস সূ্ত্র বলছে, নানা রাজ্যে যা ভোট হয়েছে, তাতে মোদী-জমানার অবসানের ইঙ্গিতই পেয়েছে রাহুলের দল। পুরুলিয়ার কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোর সমর্থনে সভা করতে আসা রাহুলকে মঙ্গলবার আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে, প্রত্যয়ী শুনিয়েছে এই কারণেই। আর ৪৮ ঘণ্টা পরে পুরুলিয়াতেই সভা করার কথা প্রধানমন্ত্রী মোদীর। যার উল্লেখ করে কংগ্রেস সভাপতি এ দিন কটাক্ষ করেছেন, ‘‘এখানে তো আসবেন মোদীজি, শুনেছি। দেখবেন সে দিন, আত্মবিশ্বাস নেই। কৃষকদের জন্য প্রতিশ্রুতি, বেকারদের জন্য চাকরি— এ সব এখন আর বলতে গেলেই গোলমাল। মানুষ ধরে ফেলেছেন সব।’’

প্রত্যয়ী: মঙ্গলবার পুরুলিয়ার কোটশিলায় রাহুল গাঁধী। ছবি: সুজিত মাহাতো

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বাংলায় তাঁর আগের দু’দফার সভার মতো তৃতীয় বারে রাহুল কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূলকে কড়া আক্রমণের পথে যাননি। কৃষকদের ঋণ মকুব এবং তরুণদের কর্মসংস্থান মমতার আমলে হয়নি, এই দুই অভিযোগ ফের উল্লেখ করেছেন শুধু। কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যায়, মোদীকে হারিয়ে দেওয়ার আত্মবিশ্বাস থেকেই তাঁর এই কৌশল বদল। ভোটের পরে কেন্দ্রে নতুন সরকার গড়তে আঞ্চলিক নানা দলের সমর্থন লাগতে পারে, এই ভাবনা থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে আর সুর চড়াতে চাননি রাহুল। বিরূপ কিছু বলেননি বামেদের সম্পর্কেও। কোটশিলার সভার পরে এবিপি নিউজ ও এবিপি আনন্দের মু‌খোমুখি হয়েও তিনি বলেছেন, তৃণমূল নেত্রী এবং তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত কোনও বিরোধ তাঁদের নেই। মমতা এবং তাঁর লড়াইয়ের প্রতি তিনি বরং শ্রদ্ধাশীল। রাহুল অবশ্য মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি যে, দেশ জুড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই কংগ্রেসই করছে। ঝালদা-২ ব্লকের সভায় রাহুল এ দিন সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস সভাপতি অজয় কুমারকে। নিজের বক্তৃতার পরে রাহুলই এগিয়ে দিয়েছিলেন অজয়কে। তিনি বলেছেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডে যে হাওয়া উঠেছে, তাকে পুরুলিয়া দিয়ে বাংলাতেও আনতে হবে। বিজেপিকে মুখের মতো জবাব তৃণমূল দিতে পারবে না, পারবে কংগ্রেস।’’ আর স্বয়ং রাহুলের আবেদন, ‘‘দিল্লিতে কংগ্রেসের সরকারের জন্য বাংলা থেকে বেশি বেশি আসন আপনাদের দিতে হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy