ভারতের সিলিকন ভ্যালিতে কি ভোট হচ্ছে?
কলকাতা বা অন্য রাজ্য থেকে যে কেউই বেঙ্গালুরুতে এসে এই প্রশ্নটা করে ফেলতেই পারেন।
দমদম থেকে উড়ান ধরতে আসার সময়েও কানে তালা লাগানো মাইকের আওয়াজ শুনতে হয়েছে। রাস্তার দু’ধার জুড়ে দেখতে হয়েছে নানা রঙের ফ্লেক্স, পোস্টার, দেওয়াল লিখন। চারিদিকে সাজ-সাজ রব।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বেঙ্গালুরুতে বিলকুল ভিন্ন দৃশ্য। গোটা শহর চষেও চোখে পড়ল না একটা দেওয়াল লিখন, পোস্টার, ফ্লেক্স বা নেতাদের কাট-আউট। কোথাও বাজছে না মাইক।
কয়েক দিন পরেই এই শহরে ভোট। কিন্তু পথে-ঘাটে-মহল্লায় কোথাও তার এক ছটাক চিহ্ন নেই। প্রার্থীরা প্রচারের সময়ে ব্যবহার করছেন ছোট ছোট সাউন্ড বক্স, যার আওয়াজ কান ফাটিয়ে দিচ্ছে না। বিলি হচ্ছে দলীয় প্রতীক লাগানো কাপড়ের উত্তরীয়। জোর দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে।
এমন পরিবেশ-বান্ধব ভোট কি কলকাতার মানুষ স্বপ্নেও ভাবতে পারেন! কলকাতা বা অন্য শহর যা পারেনি, বেঙ্গালুরু পারল কী করে?
বেঙ্গালুরুর প্রবীণ পরিবেশ-কর্মী লিও সালধানা বলেন, “কর্নাটক হাইকোর্টের নির্দেশে। কাজটা শুরু হয়েছিল গত বিধানসভা ভোটের সময়ে। তবে এ বার প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের কড়া মনোভাবের ফলে বেঙ্গালুরুতে জিরো-পলিউশন ভোট হতে চলেছে। সারা দেশের কাছে এটা একটা দৃষ্টান্ত।”
দক্ষিণী রাজ্যে নির্বাচন মানেই নেতাদের বিশাল কাটআউট এবং ফ্লেক্স। এই সংস্কৃতি এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশেই। কলকাতায় এখন আর শুধু নির্বাচনের সময়েই নয়, মেলা-খেলা ইত্যাদি হরেক অনুষ্ঠানেই ব্যবহার করা হচ্ছে বিপজ্জনক এই প্লাস্টিক। আর এর মধ্যেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটকই। এ বারের লোকসভা নির্বাচন তার প্রমাণ। সালধানা বলেন, “কয়েক বছর আগেও কাটআউট আর ফ্লেক্সের জন্য রাস্তায় চলতে মুশকিলে পড়তে হত। ভোটের পরে বিষাক্ত প্লাস্টিকের পাহাড় তৈরি হয়ে যেত শহরে। পরিবেশকর্মীরা এর বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার করেছেন। এর ফলে মানুষই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আদালতে জনস্বার্থে মামলাও করেছেন অনেকে।”
মানুষের সচেতনতা বাড়াতে কী ভাবে প্রচার করেছেন পরিবেশকর্মীরা? ভোটের কাজ মিটলে এই টন টন বিষাক্ত প্লাস্টিক কোথায় যায়, তা তাঁরা হাতে কলমে লোককে বুঝিয়েছেন। আর এক পরিবেশকর্মী মাসুরি এফ বলেন, ‘‘এক সময় এই সব প্লাস্টিকের বেশির ভাগই তুলে জ্বালিয়ে দেওয়া হত। তা থেকে তৈরি হচ্ছিল ডায়ক্সিনের মতো ভয়ঙ্কর গ্যাস, যা ক্যানসারের অন্যতম কারণ।” আবার প্লাস্টিক না জ্বালিয়ে ফেলে রাখলেও বিপদ। মাসুরি বলেন, “এ জিনিস কখনওই মাটিতে মিশবে না। উল্টে মাটিতে পড়ে আটকে দেবে জল ঢোকার পথ।”
কিন্তু কলকাতায় কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না এর ব্যবহার?
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন আধিকারিক ও পরিবেশ কর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কর্নাটক হাইকোর্টের এই রায়ের বিষয়টি জানি না। তবে যে কোনও হাইকোর্টের রায় দেশের সর্বত্রই প্রযোজ্য। তাই বিষয়টি যদি কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে, তবে এটা সারা দেশেই বন্ধ করা সম্ভব।”
বেঙ্গালুরুর পরিবেশকর্মীরা অবশ্য এই কৃতিত্বের ভাগ দিচ্ছেন প্রশাসনকেও। সালধানা বলেন, “প্রশাসন সক্রিয় না হলে এই কাজ করা যেত না। এখানে প্রশাসন এখনও অন্য অনেক রাজ্যের মতো দলদাস হয়ে যায়নি। মানুষ তাই প্রশাসনের উপর আস্থা রাখেন। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও তার প্রভাব পড়েছে।”
লোকসভা নির্বাচনের পরেই কলকাতা পুরসভার ভোট। তখন ফের শহরের আকাশ ঢেকে যাবে ফ্লেক্স, পোস্টারে। আবার তা বিষ হয়ে ফিরে আসবে মানব-শরীরে। বিশ্বজিৎবাবুর প্রশ্ন, ‘‘নিজেদের বাঁচানোর জন্য এই শিক্ষাটা কি আমরা বেঙ্গালুরু থেকে নিতে পারি না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy