Advertisement
২৩ জানুয়ারি ২০২৫

সত্রই হাতিয়ার, হিন্দু ভোট টানার চেষ্টা বিজেপির

অসমের সমাজ ও সংস্কৃতির ইতিহাসের ধারায় এমন এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেই সত্রের বিপুল পরিমাণ জমি জবরদখল হয়ে যায় কংগ্রেস আমলে।

মনোনয়ম জমা দিলেন গুয়াহাটির কংগ্রেস প্রার্থী ববিতা শর্মা। ছবি: পিটিআই

মনোনয়ম জমা দিলেন গুয়াহাটির কংগ্রেস প্রার্থী ববিতা শর্মা। ছবি: পিটিআই

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০৯
Share: Save:

উইলিয়াম শেক্সপিয়র যখন লন্ডনে নাটক করছেন, তারও প্রায় একশো বছর আগে, ১৪৯৩ সালে অসমের নগাঁও জেলার বটদ্রবায় ‘চিহ্নযাত্রা’ মঞ্চস্থ করছেন বৈষ্ণব আন্দোলনের পথিকৃৎ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব। দৃশ্যপট, গীতবাদ্য, সংলাপ সহযোগে পরিবেশিত অসমীয়া আধুনিক নাটকের জন্ম তখনই। নাটকটি লেখা ১৪৭০ সালে। যার ১৬ বছর পরে বাংলায় জন্ম নেবেন শ্রীচৈতন্যদেব। দোল উৎসবের শুরু এই বটদ্রবায়। বটদ্রবায় শুরু করে অসমের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দেওয়া নামঘর ও সত্রের যে সংস্কৃতি আজও অসমীয়া সমাজের মূল কাঠামো, সেটাকেই বিশেষজ্ঞদের অনেকে পঞ্চায়েতিরাজের সূচনা বলে ধরেন।

অসমের সমাজ ও সংস্কৃতির ইতিহাসের ধারায় এমন এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেই সত্রের বিপুল পরিমাণ জমি জবরদখল হয়ে যায় কংগ্রেস আমলে। আর নগাঁও ও কলিয়াবরে সত্রের সেই জমি দখলমুক্ত করাই ভোটে বিজেপির প্রধান হাতিয়ার। দল সভাপতি অমিত শাহ এসেও সেই প্রতিশ্রুতিই দিচ্ছেন। আর সেই কারণেই মৃত্যুর সাড়ে চারশো বছর পরে শ্রীমন্ত শঙ্করদেব অসমের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন।

বৈষ্ণবদের ‘সত্র’ বৌদ্ধ মঠের মতোই। সামাজিক অনুশাসনের প্রশ্নে অসমে এখনও সত্রের ভূমিকা বিরাট। বটদ্রবা থানের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রমোহন বরুয়া ও কোবাইকটা সত্রের দায়িত্বে থাকা জখলাবন্ধার সত্রাধিকার যুগল গোস্বামীদের দাবি, ‘‘শঙ্করদেবের জন্মস্থান বটদ্রবা থান জবরদখলের শিকার। জঙ্গলে ঢাকা বটদ্রবা উদ্ধার করতে আসা শঙ্করদেবের পৌত্র চতুর্ভূজের স্ত্রী কনকলতা জঙ্গল পরিষ্কার করে কোবাইকাটা সত্র স্থাপন করেন। তার পরেও তৈরি হয় বিভিন্ন সত্র। এই সব সত্রের কয়েকশো বিঘা জমি এখন দখলকারীদের কবলে। সত্রের জবরদখল নিয়ে তারি সরকারি ‘ব্রহ্ম কমিটি’র রিপোর্টও একই কথা বলছে। বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেসের রকিবুল হুসেন বনমন্ত্রী ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী থাকাকালীন জবরদখল চূড়ান্ত রূপ নেয়। রকিবুল নগাঁওয়ের মানুষ। কংগ্রেস প্রার্থী গৌরব গগৈয়ের হয়ে কলিয়াবর দখলের সেনাপতি রকিবুল সেই দাবি খারিজের চেষ্টা করছেন। বরং তাঁদের দাবি, সত্রের জমি দখলমুক্ত করতে রকিবুল নিজের টাকায় জমি কিনে দখলদারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কোবাইকটা সত্রের আশপাশে গোটা গ্রামে শুধুই মুসলিম পরিবারের বাস। সত্র লাগোয়া বাড়ির মালিক খলিলুর রহমান, সইদুল ইসলামদের দাবি, বংশানুক্রমে তাঁরা ওই এলাকার বাসিন্দা। ১৯৮৩ সালে অসম আন্দোলনের সময়ে ওই এলাকার সব হিন্দু অন্যত্র চলে গেলেও ঘনশ্যাম শইকিয়া ও তাঁর ছেলে কৃষ্ণ শইকিয়া থেকে যান। কোবাইকাটার একমাত্র হিন্দু বাসিন্দা কৃষ্ণবাবু অবশ্য ব্যাপক বেদখলের তত্ত্ব মানেন না। তিনি জানান, সংঘর্ষের সময় মুসলিমরাই তাঁদের রক্ষা করেছেন। হিন্দুরা স্বেচ্ছায় এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।

গত ২৮ বছর ধরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের পরিবারের খাসতালুক কলিয়াবর। এ বারে বর্তমান সাংসদ গৌরব গগৈয়ের বিরুদ্ধে সেখানে অগপ-বিজেপি জোটের প্রার্থী, অগপ মন্ত্রী কেশব মহন্তর ভাই প্রাক্তন আসু নেতা মণিমাধব মহন্ত। এই এলাকায় প্রভাবশালী দল এআইইউডিএফ প্রার্থী দেয়নি। তাদের সমর্থন কংগ্রেসের দিকেই। সুতরাং বিশেষজ্ঞদের অঙ্ক, মুসলিম ভোট ভাগ হবে না। যাবে কংগ্রেসের দিকেই। তাঁদের দাবি, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সত্রের জমিতে ফের বাড়বে আগ্রাসন। সত্রকে সামনে রেখেই চলছে বিজেপির হিন্দু ভোট জোটবদ্ধ করার চেষ্টা।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Batadroba BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy