নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
করোনায় অনাথ হওয়া পড়ুয়া ও শিশুদের আর্থিক সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। মোদী আজ ঘোষণা করেছেন, করোনায় অনাথ হয়ে যাওয়া যুবদের উচ্চশিক্ষায় ঋণ দেওয়া হবে পিএম কেয়ার্স তহবিল থেকে। পাশাপাশি, এই তহবিল থেকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করা হবে অনাথ পড়ুয়াদের। করোনা যুদ্ধের সময়ে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ও উন্নত মানের চিকিৎসা-যন্ত্রাংশ কিনতে পিএম কেয়ার্স তহবিল গড়ে তোলা হয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, অনাথ পড়ুয়াদের সাধারণ ভাবে সরকারি তহবিল থেকে সাহায্য না করে পিএম কেয়ার্সকে ব্যবহার করা হচ্ছে কেন? কেন দানের টাকায় গড়ে তোলা তহবিলকে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ফেরাতে ব্যবহার করা হচ্ছে?
করোনার ধাক্কায় অনাথ হয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের সামনে মোদী আজ ‘পিএম কেয়ার্স ফর চিলড্রেন’ প্রকল্পের বিভিন্ন সুবিধার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই ধরনের শিশু-কিশোরদের প্রতি মাসের খরচ চালানোর জন্য চার হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘পেশাদারি বিভিন্ন কোর্সের জন্য কিংবা উচ্চশিক্ষার জন্য যদি কারও ঋণের প্রয়োজন হয়, পিএম কেয়ার্স তাতেও সাহায্য করবে। ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সি যুবরা প্রতি মাসে ভাতা পাবেন আর ২৩ বছর বয়স হয়ে গেলেই তাদের ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।’’ অনাথ ছেলেমেয়েদের জন্য পিএম কেয়ার্স পাশ বুক, ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর স্বাস্থ্য কার্ডও দেওয়া হয়েছে।
আজই মোদী সরকার আট বছর পূর্ণ করল। ভিডিয়ো কনফারেন্সে মোদী অনাথ শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমি তোমাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কথা বলছি না। পরিবারের এক জন সদস্য হিসাবে বলছি— কোভিড মহামারিতে পরিবারের সদস্যদের হারানো যে কতটা কষ্টের, তা আমি বুঝি।’’
মোদীর ঘোষণার পরেই কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ টুইট করে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি উদ্ধারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পিএম কেয়ার্স তহবিলকে। আমাদের যুব সমাজকে সাধারণ ভাবে স্কলারশিপ দিতে পারছেন না? তার বদলে জোর করে নেওয়া দানের তহবিল থেকে ঋণ দিতে হচ্ছে?’’ পিএম কেয়ার্সের গঠন নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক ছিল। তার পরে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘ভারত সরকার বেআইনি ভাবে পিএম কেয়ার্স তহবিল করছে। এই তহবিলকে বিজেপির দলীয় তহবিল বললেও অত্যুক্তি হয় না।’’ বিরোধীদের অনেকের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী পড়ুয়াদের ঋণ দেওয়ার কথা বলছেন। অর্থাৎ, ঋণ নিলে পড়ুয়াদের সুদও দিতে হবে। যে তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে, সেই তহবিলকে ব্যবহার করে সুদ নেওয়া বা এই ধরনের লেনদেন কী ভাবে সম্ভব?
সরকারি সূত্রের অবশ্য দাবি, করোনায় যারা অভিভাবকদের হারিয়েছে, তাদের সার্বিক উন্নতির চেষ্টাই ‘পিএম কেয়ার্স ফর চিলড্রেন’ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। সমাজকল্যাণ মন্ত্রক জানিয়েছে, মোট ৩৯৪৫ জন অনাথ শিশু-কিশোর এই প্রকল্পে উপকৃত হবে। তাদের সাহায্য করতে ২০২২-২৩ সালে মোট খরচ হবে ৭.৮৯ কোটি টাকা। মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, প্রতিটি পড়ুয়ার জন্য বছরে শিক্ষাখাতে ২০ হাজার টাকা করে ধার্য হয়েছে। ১২ মাসে ১২ হাজার স্কুল ফি হিসাবে দেওয়া হবে। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে বই ও ইউনিফর্ম কেনায় বাকি ৮ হাজার টাকা খরচ করা হবে। এই টাকা পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানো হবে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy