শম্ভু সীমানায় কৃষকদের দিকে ছোড়া হচ্ছে কাঁদানে গ্যাস। ছবি: পিটিআই ।
আন্দোলনকারী কৃষকেরা কেন্দ্রের সঙ্গে তৃতীয় বার বৈঠকে বসতে পারেন বৃহস্পতিবার। আলোচনা হবে কৃষক আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে। বৈঠকের সময় সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি। তবে সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে বৈঠক হতে পারে।
কাঁদানে গ্যাস ছোড়া বন্ধ না হলে, কেন্দ্রের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করবেন না কৃষকেরা। বুধবার এমনটাই জানালেন, ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা জগজিৎ সিংহ দাল্লেওয়াল। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ কৃষকদের দিকে লাগাতার কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে চলেছে। তা বন্ধ না হলে কৃষকরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না বলেই স্পষ্ট করেছেন জগজিৎ ।
হরিয়ানা পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে মুখে মুলতানি মাটি মাখলেন কৃষকেরা। একই সঙ্গে শম্ভু সীমানায় ঘুড়ি ওড়াতেও শুরু করেছেন কৃষকদের একাংশ।
বৃহস্পতিবার পঞ্জাব জুড়ে রেল অবরোধের ডাক দিল পঞ্জাবের কৃষকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান ফার্মার্স ইউনিয়ন (উগ্রাহা)’। দিল্লি যাওয়ার পথে কৃষকদের উপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়া এবং লাঠিচার্জের প্রতিবাদে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রেল অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে।
আবার ধুন্ধুমার পঞ্জাব-হরিয়ানার শম্ভু সীমানায়। বিক্ষুদ্ধ কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে আবার কাঁদানে গ্যাস ছুড়ল পুলিশ। আন্দোলনকারীদের প্রবেশে বাধা দিতে দিল্লির সিঙ্ঘু সীমানার কাছের একটি গ্রামে রাস্তাও খুঁড়ে দিল প্রশাসন।
নিজেদের অধিকার বুঝে নিতেই তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন বলে দাবি কৃষকদের। পঞ্জাবের খন্না থেকে আসা কৃষক অমনদীপ কৌরের কথায়, ‘‘আমরা ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা, লখিমপুর-খেরিতে মৃত্যু হওয়া ভাইদের ক্ষতিপূরণ এবং ঋণ মকুবের দাবিতে পথে নেমেছি। কৃষকদের পেনশন পাওয়া উচিত। আমরা আমাদের অধিকারের জন্য এসেছি।’’
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, দিল্লি-সোনিপত লাগোয়া সিঙ্ঘু এবং দিল্লি-বাহাদুরগড় লাগোয়া টিকরি সীমানায় যানবাহন চলাচল অবরুদ্ধ। বহু মানুষ রাস্তাতেই আটক পড়েছেন।
বাড়ছে উত্তেজনা। কয়েকশো ট্র্যাক্টর নিয়ে শম্ভু সীমানায় জমায়েত করতে শুরু করেছেন কৃষকেরা। তাঁদের আটকাতে মোতায়েন করা হয়েছে ১০০ কোম্পানি বাহিনী। পাশাপাশি, ড্রোন দিয়ে আন্দোলনকারীদের গতিবিধির উপর নজর রাখছে পুলিশ।
কৃষকদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি কৃষকদের ‘ভারত বন্ধ’ পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকাইত।
কৃষকদের বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিনে হরিয়ানার অম্বালার শম্ভু সীমানায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। বাহাদুরগড়ে থাকা কৃষকেরা বুধবার ভোর বেলাতেই ‘দিল্লি চলো’ যাত্রার কথা ঘোষণা করে দিয়েছে। কৃষক বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে সিঙ্ঘু সীমান্তে বুধবার সকাল থেকেই বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নামানো হয়েছে র্যাফ। গাজিপুর সীমান্তে বহুস্তরীয় ব্যারিকেড তৈরি করেছে পুলিশ।
কৃষকেরা রণমূর্তি ধারণ করলে তাঁদের আটকাতে লঙ্কাগুঁড়ো ব্যবহার করা হবে বলেও পুলিশ জানিয়েছে। দিল্লি পুলিশের ঘোষণা, ‘‘কৃষকেরা সীমানা পার করে আসার চেষ্টা করলে আমরা তাদের মোকাবিলা করব। দিল্লির পরিস্থিতি যাতে ঠিক থাকে, তাই তাঁদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হবে।’’
দিল্লির টিকরি সীমানার দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে যানবাহন চলাচল।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে আবার সক্রিয় হওয়ার কথা প্রতিবাদী কৃষকদের। ‘দিল্লি চলো’ যাত্রা শুরু করবেন তাঁরা। কৃষকদের আটকাতে তৎপর পুলিশ-প্রশাসন। সিঙ্ঘু সীমান্তে মাইকিং শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লি পুলিশের ঘোষণা, ‘‘কৃষকেরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হবে এবং লাঠিচার্জ করা হবে।’’
অন্যদিকে, হরিয়ানার অম্বালা, কুরুক্ষেত্র, কাইথাল, জিন্দ, হিসার, ফতেবাদ এবং সিরসা জেলার ইন্টারনেট পরিষেবা ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
কৃষকদের রুখতে পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানা এবং দিল্লিতে ঢোকার সমস্ত রকম প্রবেশপথে ব্যারিকেড, কাঁটা দেওয়া তার জড়িয়ে কার্যত দুর্গের চেহারা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যেই মঙ্গলবার প্রতিবাদী কৃষকেরা পঞ্জাব এবং হরিয়ানার মধ্যবর্তী শম্ভু সীমানায় পৌঁছনোর পর কাঁদানে গ্যাসের সেল ব্যবহার করে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী। রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় পুলিশ এবং প্রতিবাদী কৃষকদের মধ্যে।
দিল্লির গাজিপুর, সিঙ্ঘু এবং টিকরি সীমানার প্রায় সমস্ত প্রবেশপথকেই দুর্গের চেহারা দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ গাড়িকে বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় মঙ্গলবার সকাল থেকেই। যানজট শুরু হয় দিল্লির গাজিপুর এবং চিল্লা সীমানায়। দিল্লি থেকে হরিয়ানার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী ৪৮ নম্বর জাতীয় সড়কেও যানজট শুরু হয়। পরিস্থিতি এমনই যে, এক কিমি রাস্তা পেরোতে এক ঘণ্টা সময় লাগছিল।
কৃষকদের বিক্ষোভের আবহে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয় দিল্লিকে। বন্ধ করা হয় লালকেল্লা এবং দিল্লির দু’টি মেট্রো স্টেশন। অন্তত আটটি স্টেশনের একাধিক দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দিল্লির প্রতিটি গাড়িতেই তল্লাশি চালায় পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্জাব থেকে ব্যারিকেড ভেঙে হরিয়ানায় ঢোকার চেষ্টা কৃষকদের। পাথর ছোড়ারও অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। ড্রোনের মাধ্যমে প্রতিবাদী কৃষকদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়ে পুলিশ। সিমেন্টের ব্যারিকেডের মাধ্যমে কৃষকদের আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। প্রতিবাদী কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামানও ব্যবহার করা হয়।
কেন্দ্রের পাশাপাশি পঞ্জাব এবং হরিয়ানাকে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখানোর সুযোগ করে দিতে হবে কৃষকদের।
দিল্লি যাওয়ার পথে পুলিশের সঙ্গে কয়েক ঘন্টার সংঘর্ষের পরে ‘যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণা করেন কৃষকেরা। পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘আগামীকাল আবার চেষ্টা করব।’’ বস্তুত, ২০২০-’২১-এর কৃষক আন্দোলনের ছবি দেখা গিয়েছিল মঙ্গলবার।
কৃষকদের দু’টি বড় সংগঠন সংযুক্ত কিসান মোর্চা এবং কিসান মজদুর মোর্চা গত ডিসেম্বরেই দাবি আদায়ে ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের ডাক দেয়। দু’টি সংগঠনের আওতায় মূলত পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের সাড়ে তিনশোটি ছোট-বড় কৃষক সংগঠন রয়েছে। তবে ২০২০ সালের আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা দুই কৃষকনেতা রাকেশ টিকায়েত এবং গুরনাম সিংহ চারুনি মঙ্গলবারের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেই। মঙ্গলবার প্রতিবাদী কৃষকদের নেতৃত্বে থাকতে পারেন দুই কৃষক নেতা সারওয়ান সিংহ পান্ধের এবং জগজিৎ সিংহ দাল্লেওয়াল।
২০২০ সালে তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লি সীমান্তে অবস্থানে বসেছিলেন কৃষকেরা। পরে তিন আইনই বাতিল করা হয়। আর এই আন্দোলনে নামা কৃষকদের দাবি ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে। একই সঙ্গে সমস্ত কৃষিঋণ মকুব করতে হবে। স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব মেনে ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। ২০২০-২১ সালের প্রতিবাদে কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা খারিজের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
কেন্দ্রের কাছে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা পৌঁছে দিতে মঙ্গলবার থেকে ‘দিল্লি চলো’ যাত্রা শুরু করেছেন কৃষকরা। উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব এবং হরিয়ানা— মূলত এই তিন রাজ্যের প্রায় সাড়ে তিনশোটি ছোট-বড় কৃষক সংগঠন এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। যা নিয়ে সারা দিনই সরগরম ছিল হরিয়ানা সীমানা। পঞ্জাব এবং হরিয়ানার মধ্যবর্তী শম্ভু সীমানায় প্রতিবাদী কৃষকদের রুখতে ড্রোন দিয়ে কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়ে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী। রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় পুলিশ এবং প্রতিবাদী কৃষকদের মধ্যে। সেই প্রতিবাদ মিছিল বুধবার দ্বিতীয় দিনে পা দিয়েছে। সেই মিছিলে কী হয়, সারা দিন নজর থাকবে সে দিকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy