রাজ্যসভায় বক্তৃতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। বুধবার। —ফাইল চিত্র।
মোদী বললেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটা বড় সমস্যা হিসাবে দেখা যাচ্ছে। এর মোকাবিলা করার দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
দৈনন্দিন জীবনে সরকারের দখলদারি কম হওয়া উচিত। যাঁদের দরকার, তাঁদের সঙ্গে সরকার অবশ্যই থাকবে। যাঁদের দরকার নেই, তাঁদের জীবনে সরকারের প্রভাব থাকা উচিত নয়, বললেন মোদী।
মণিপুর প্রসঙ্গে মোদী বললেন, ‘‘মণিপুরে স্বাভাবিকত্ব ফেরাতে সরকার ক্রমাগত কাজ করছে। মণিপুরে ১১ হাজার এফআইআর দায়ের হয়েছে। ৫০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মণিপুরে ধীরে ধীরে হিংসা কমছে। ধীরে ধীরে স্কুল-কলেজ খুলছে। পরীক্ষাও হচ্ছে মণিপুরে।’’ উত্তর-পূর্ব ভারতেও মোদী সরকার প্রচুর কাজ করছে বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ‘‘পাঁচ বছরে আমরা যা কাজ করেছি, কংগ্রেসের সেই কাজ করতে ২০ বছর লেগে যেত।’’
মণিপুরে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার একজোট হয়ে মণিপুরে পরিস্থিতি শোধরানোর কাজ নিরন্তর করে চলেছে। যাঁরা মণিপুরের আগুনে ঘি দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদের আমি সতর্ক করব। কারণ মণিপুরই একদিন ওঁদের প্রত্যাখ্যান করবে। আর মণিপুরে যা হচ্ছে, তার শিকড় অনেক গভীরে। কংগ্রেসের মনে রাখা উচিত, মণিপুরে ১০ বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে হয়েছিল। কিছু তো কারণ থাকবে, যার জন্য এমন হয়েছিল। অথচ কংগ্রেস এই নিয়ে রাজনীতি করতে ব্যস্ত।
ভুলে গেলে চলবে না, মণিপুরে ১৯৯৩ সালেও এমন হয়েছিল। পাঁচ বছর ধরে সেই অশান্তি চলেছিল। তাই আমি বলব এখন মণিপুরের যা পরিস্থিতি, তার সমাধান করতে যদি কেউ আমাদের পাশে দাঁড়াতে চান, আমি তাঁদের সাদরে অভ্যর্থনা জানাব।
মোদী বললেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমি ভেবেছিলাম বিরোধীরা তাদের দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। কিন্তু তারা এত বড় ঘটনাকেও, দেশের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত ঘটনাকেও রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে দিল। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করবে এবং দেশের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করবে।’’
মোদী বললেন, ‘‘আমি ভোটে জেতার জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছি না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই আমার ‘মিশন’। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত বলে আমি বিশ্বাস করি। তাই আমি কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের নিজেদের মতো করে তদন্ত চালিয়ে যেতে।’’
মোদী বললেন, ইডি-সিবিআইয়ের অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই। স্বয়ং মুলায়ম সিংহ যাদব লিখেছিলেন, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই করা সহজ নয়। সিবিআই লাগিয়ে দেবে।’’ পরে সুপ্রিম কোর্টও ইউপিএ জমানায় বলেছিল, ‘‘এজেন্সিগুলি পিঞ্জরাবদ্ধ তোতাপাখি।’’
মোদী বললেন, বিরোধীদের কোনও নীতির ঠিক নেই। এক দিকে এঁরা কেন্দ্রে দুর্নীতিবাজদের জেলে পাঠানোর বিরোধিতা করছে। আবার রাজ্যে পরস্পরের বিরোধিতা করছে। সেখানে আবার মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে পাঠানোরও দাবি করছে।
মোদী বললেন, ‘‘কংগ্রেসে এখন দুর্নীতিবাজ বাঁচাও অভিযানে নেমেছে। ওরা বলছে, এই সরকার তদন্তকারী এজেন্সিদের অপব্যবহার করছে। বলুন তো, দুর্নীতি করবেন আপনি, আবগারি নীতি নিয়ে গন্ডগোল করবেন আপনি, জল নিয়েও দুর্নীতি করবেন আপনি। আপনাদের সমালোচনা করবে কংগ্রেস, আপনাদের কোর্টে নিয়ে যাবে কংগ্রেস, আর যখন তদন্ত হবে তখন দোষ মোদীর?’’
মোদী বললেন, কংগ্রেসের এখন পরজীবী যুগ শুরু হয়েছে। যেখানে ওরা একা লড়েছে, সেখানে ওরা জিততে পারেনি। যেখানে ওরা আড়াল নিয়েছে, সেখানে ওরা জিতেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বললেন, ‘‘কংগ্রেস সবচেয়ে বড় সংবিধান বিরোধী। ওরা যা খুশি তাই বলবে, আর জরুরি অবস্থা নিয়ে ওদের কিছু বললে তখন বলবে, অনেক পুরনো কথা। কেন? সেটা আপনারা করেছিলেন বলে? পুরনো বলে কি তা নিয়ে আলোচনা করা যাবে না!
বিরোধীদের মোদীর প্রশ্ন, আপনারা কোন সংবিধানের বলে পাঁচ বছরের বদলে সাত বছর ধরে সরকার চালিয়েছিলেন? আমাদের এখন সংবিধান দেখাচ্ছেন। আপনারা প্রধানমন্ত্রীর পদের অপমান করেছেন। আপনারা কোন সংবিধানের বলে প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দেওয়ার জন্য এনএসি বসিয়েছিলেন?
রাজ্যসভায় মোদী বললেন, “শুনলাম দিগগজেরা বলছেন, এটাই নাকি প্রথম লোকসভা ভোট, যা সংবিধান রক্ষা করার জন্য হয়েছিল। আমার প্রশ্ন, আপনারা কি ১৯৭৭ সালের ঘটনা ভুলে গেলেন? যখন সংবাদপত্রের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, মানুষের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল? সেই ভোটও ভারতের জনগণ তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার এবং গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দিয়েছিল। তার থেকে বড় গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষার ভোট হয়নি। অন্তত আমি তাই মানি। আর এ বার যদি সংবিধান রক্ষার ভোটই হয়ে থাকে, তবে সংবিধান রক্ষার জন্যও দেশবাসী আমাদেরই বেছে নিয়েছে। ’’
মোদী বললেন, “কংগ্রেস সর্বদা মার খাওয়ার জন্য দলিতদেরই সামনে রাখে। এখন যেমন খড়্গেকে রেখেছে। তেমনই স্পিকার নির্বাচনের সময়ও এক দলিত প্রতিনিধিকেই হারার জন্য এগিয়ে দিল। ওঁরা তো জানত, হারবেই। তবু সেই পরাজয় বরণ করার জন্য সামনে রাখল এক দলিত শ্রেণিভুক্তকে। রাষ্ট্রপতি-উপরাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনের সময়ও একই কাজ করেছে। সেই সময় সুশীল কুমার শিন্ডেকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত করেছিল। তাঁকেও ওঁদের হয়ে পরাজয়ের ‘মার’ খেতে হল। আসলে দলিত মরলে ওঁদের কিছু যায়-আসে না। ২০১৭ সালেও হার নিশ্চিত ছিল। তখন ওঁরা মীরা কুমারকে এগিয়ে দিল। ওঁকেও পরাজয়ের লজ্জা সহ্য করতে হল। আসলে কংগ্রেসের তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণিভুক্তদের নিয়ে সমস্যা আছে। এঁরা এর আগের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে সমানে অপমান করেছে। একই ভাবে দেশের প্রথম আদিবাসী শ্রেণিভুক্ত মহিলা রাষ্ট্রপতিকেও এঁরা অসম্মান করেছে। এমন এমন শব্দ প্রয়োগ করেছে, যা কেউ করতে পারবে না।’’
কংগ্রেস কেন এত খুশি কেন বুঝতে পারছি না। ওরা কি হারের হ্যাটট্রিক করেছে বলে এত আনন্দিত? না কি ‘নার্ভাস ৯০’-র শিকার হওয়ার জন্য! না আরও একটি ‘অসফল লঞ্চ’ করার জন্য। দেখছিলাম উৎসাহে, উদ্দীপনায় খড়্গেজিও খুব নজরে পড়ছেন। খড়্গেজি কিন্তু তাঁর পার্টির বড় সেবা করেছেন। কারণ এই পরাজয়ের বোঝা যাঁদের বইতে হতে তাঁদের গায়ে আঁচড়ও লাগছে না। আর উনি তাঁদের সামনে বড় পাঁচিল হয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন। কংগ্রেসের বরাবরের অভ্যাস এটা। যখনই এমন গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই দলিত এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণিভুক্তদেরই মার খেতে হয়, আর ওই পরিবারটি বেঁচে যায়।
রাজ্যসভায় মোদী বললেন, ‘‘যিনি নিজেকে মহিলাদের আধুনিক নেতা বলেন, তিনিও মুুখে কুলুপ এঁটে বসে গেলেন? কেন? কারণ এই ঘটনা সেই দলের শাসনাধীন রাজ্যে হয়েছে, যারা আপনাদের শরিক?”
মোদী বললেন, “আমি কোনও একটি রাজ্যের বিরুদ্ধে বলছি না। তবে সম্প্রতি বাংলার একটি ঘটনা আমি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিয়োয় দেখেছি। এক মহিলাকে রাস্তায় ফেলে সবার সামনে পেটানো হচ্ছে। আমাদের ওই বোন চিৎকার করছেন। কিন্তু সেই চিৎকার কারও কানে পৌঁছচ্ছে না, কেউ তাঁকে বাঁচাতে আসছেন না। উল্টে সবাই ভিডিয়ো রেকর্ড করতে ব্যস্ত। আর যে ঘটনা সন্দেশখালিতে হয়েছে, তার ছবি দেখলে গায়ে কাঁটা দেয়। কিন্তু কাল থেকে কত বড় বড় দিগগজদের কথা শুনলাম। কারও মুখে এ নিয়ে একটি কথাও শোনা গেল না। এর থেকে বড় লজ্জার আর দুঃখের ঘটনা আর কী হতে পারে?’’
আমরা দেখেছি, নতুন প্রযুক্তি মহিলাদের হাতে সবার শেষে পৌঁছয়। কিন্তু আমাদের সরকার মহিলাদের হাতে ড্রোন প্রযুক্তি তুলে দিয়েছে।
মোদী বললেন, ‘‘এই সরকার মহিলাদের ক্ষমতায়নের পথে নানা কাজ করেছে। একই সঙ্গে মহিলা স্বাস্থ্য, তাঁদের জন্য পরিচ্ছন্ন শৌচাগার, তাঁদের কাছে স্যানিটারি প্যাড পৌঁছে দেওয়ার মতো কাজও করেছে আমাদের সরকার। এক কোটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে লাখপতি দিদি হয়েছেন। আগামী দিনে এই সংখ্যাটা বেড়ে তিন কোটি হবে। ”
ধনখড় বললেন, ‘‘আজ ওঁরা রাজ্যসভা ছেড়ে যাননি, আসলে নিজেদের মর্যাদা ছেড়ে গিয়েছেন। আজ ওঁরা শুধু আমাদের দিক থেকে মুখ ফেরালেন না, সংবিধান থেকে মুখ ফেরালেন। আজ ওঁরা আমাদের অপমান করেননি, সংবিধানের যে শপথ নিয়ে ওঁরা এখানে এসেছিলেন, তাঁর অপমান করেছেন। সংবিধানকে এমন অপমান করা যায় না। আমি এই ঘটনার নিন্দা করছি। তাঁরা সংবিধানের এত বড় অপমান করেছেন, আমি আহত। আমি নিশ্চিত দেশের মানুষ আহত হয়েছেন।’’
মোদী বললেন, ‘‘বিরোধীরা রাজ্যসভার ঐতিহ্যের অপমান করলেন। আসলে এঁদের কাছে স্লোগান দেওয়া, হল্লা করা ছাড়া আর কিছু বলার নেই। আর এরা একটা জিনিস পারে। ময়দান ছেড়ে পালানো।’’ বিরোধীদের ওয়াকআউটের পরে নিজের আসনে বসে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy