নিজস্বী: মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর সাজে খাদিম আলি। শিলচরের মেলায়। ছবি: স্বপন রায়
কখনও তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কখনও মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী, ভূপেন হাজরিকা, লাচিত বরফুকন। এমনকী মহাদেব বা ভগবান কৃষ্ণও! হরেক ‘রূপে’ হাজির হয়ে অসমের মন জিতছেন বরপেটা রোডের খাদিম আলি।
সম্প্রতি তিনি এসেছিলেন শিলচরের গাঁধীমেলায়। সার্কাসের তাঁবুর সামনে গাঁধী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ধন্দে পড়তেন দর্শকরা। কেউ কেউ বলতেন— ‘এটা মূর্তি নয়তো? মানুষ হলে একটু তো নড়াচড়া করত!’
কাঠমিস্ত্রি ছিলেন খাদিম। তিন সন্তানকে নিয়ে সংসার চলত না তাতে। হঠাৎ এক দিন খুঁজে পান রোজগারের নতুন উপায়। খাদিমের কথায়, ‘‘একটা মাঠে স্কুলপড়ুয়াদের যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতা চলছিল। এক জন গাঁধী সেজেছিল। কিন্তু স্থির হয়ে থাকতে পারছিল না। ভাবলাম সাজগোজ করে মূর্তি হয়ে থাকলে লোকে তো পয়সা দিতে পারে।’’ যেমন ভাবা তেমন কাজ। অবসর সময়ে অনুশীলন শুরু করলেন খাদিম। ফল-ও মিলল।
২০১৪ সালে বরপেটা রোডের একটি অনুষ্ঠানে গাঁধী সেজে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যান তিনি। অবাক হয়ে যান সকলে। ‘মূর্তিটা এল কোথা থেকে?’ সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে। পরে ভুল ভাঙে তাঁদের— ‘এ তো জ্যান্ত মানুষ। খাদিম আলি।’
সেই থেকে শুরু। বিভিন্ন জেলা থেকে ডাক পেতে থাকেন খাদিম। কখনও গাঁধী সাজার বরাত। কখন রবীন্দ্রনাথ, ভূপেন হাজরিকা, আরও কত কী। কাজের ব্যস্ততাও বাড়ে অনেকগুণ। বিজনি বইমেলা থেকে গত রবিবার তিনি যান শিলচরে। আজ পৌঁছেছেন হাফলঙ। সময়ের অভাবে মাজুলির একটি উৎসবে যাওয়ার আমন্ত্রণ ফিরিয়েছেন।
তবে এই কাজে ঝক্কি কম নেই। কৃষ্ণ সেজে এক বার বিপাকে পড়ার গল্প শোনালেন তিনি। উদালগুড়ির একটি মেলায় তাঁকে কৃষ্ণ সাজিয়ে কাঠের তৈরি দু’টি গণ্ডারের মধ্যে দাঁড় করিয়েছিলেন আয়োজকরা। এক জন দর্শক প্রশ্ন তোলেন, ‘কৃষ্ণের সঙ্গে তো গাভী থাকে, গণ্ডার কেন?’ বহুরূপী খাদিম বলেন, ‘‘মাথা খাটিয়ে বলি, চোরাশিকারিরা গন্ডার মেরে ফেলছে। ওদের বাঁচাতেই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হলাম।’’ হাততালিতে ফেটে পড়ে মেলাপ্রাঙ্গন। তাঁর কথায়, ‘‘ভূপেন হাজরিকা, লাচিত বরফুকন, রবীন্দ্রনাথ সাজার একই সমস্যা। তাঁদের নিয়ে প্রশ্ন করলে মুশকিল। কিন্তু গাঁধীকে নিয়ে জবাব দেওয়া কঠিন নয়। বেশির ভাগ সময় তা-ই সেজে থাকি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy