আগের চেয়ে খানিক ফিকে হলেও দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর ছাত্র সংসদ ভোটে এ বারেও অব্যাহত রইল বামেদের দাপট। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ছাত্র সংসদের মূল চারটি পদের তিনটিতেই জিতলেন নকশালপন্থী ছাত্র জোটের প্রার্থীরা। অন্য দিকে, যু্গ্ম সম্পাদক পদে জিতেছেন সঙ্ঘের ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ তথা এবিভিপির প্রার্থী। এই জয়ের ফলে জেএনইউয়ের ভোটে ন’বছর পর খাতা খুলল এবিভিপি।
দীর্ঘ সাড়ে চার বছরের বিরতির পর ২০২৪ থেকে আবার ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু হয়েছে জেএনইউতে। গত শুক্রবার ভোট গ্রহণ হয়েছিল দিল্লির এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ভোট দিয়েছিলেন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী। রবিবার ভোটগণনা হয়। যুগ্ম সম্পাদক পদে এবিভিপির প্রার্থীর জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল। সেই পদে জিতে প্রায় এক দশকের খরা কাটান এবিভিপির প্রার্থী বৈভব মীনা। অন্য দিকে, সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে গোড়া থেকেই চলছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ভোটগণনার বিভিন্ন পর্বে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবিভিপির প্রার্থীরা। কখনও আবার নকশালপন্থী ছাত্র জোটের প্রার্থীরা আশার আলো দেখছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ছাত্র সংসদের সভাপতি পদে নীতীশ কুমার (আইসা), সহ-সভাপতি পদে মনীষা (ডিএসএফ) এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মুনতেহা ফাতিমা (ডিএসএফ) জেতেন। যদিও জয়ের ব্যবধান ছিল খুবই সামান্য। তবু, এই জয়ের পর থেকেই আশার আলো দেখতে শুরু করে দিয়েছেন এবিভিপির সমর্থকেরা।

সোমবার ভোরে জেএনইউএসইউ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ফলাফল ঘোষিত হয়। অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইসা)-র নীতীশ কুমার ১,৭০২ ভোট পেয়ে সভাপতি পদে জয়ী হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এবিভিপি শিখা স্বরাজ পেয়েছেন ১,৪৩০ ভোট। তৃতীয় স্থানে থাকা স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (এসএফআই)-সমর্থিত তৈয়বা আহমেদ ৯১৮ ভোট পেয়েছেন। ১,১৫০ ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি পদে জিতেছেন ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস ফেডারেশন (ডিএসএফ)-এর মনীষা। তবে খুব পিছিয়ে ছিলেন না এবিভিপির প্রার্থী নিতু গৌতমও। তিনি ১,১১৬ ভোট পেয়ে অল্পের জন্য হেরে গিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদেও জিতেছেন ডিএসএফ-এর প্রার্থী মুনতেহা ফাতিমা। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ১,৫২০ ভোট, যেখানে এবিভিপির কুণাল রাই ১,৪০৬ ভোট পেয়েছেন।
আরও পড়ুন:
-
সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা রুখে দিল পাক সেনা! নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে নিহত ৫৪ আফগান ‘জঙ্গি’
-
অস্ত্র মজুত, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, পহেলগাঁও কাণ্ডে জঙ্গিদের সাহায্য করেছিলেন স্থানীয়েরাই? তদন্তে শনাক্ত ১৫
-
জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের আবহেই ন’দিনের জন্য বাতিল দিঘাগামী দুই স্পেশাল ট্রেন, ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছে তৃণমূল
চলতি বছরের নির্বাচনে জেএনইউয়ের বামজোটে ভাঙন দেখা দেয়। আইসা এবং ডিএসএফ জোট করলেও এসএফআই, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ফেডারেশন (এআইএসএফ), বিরসা অম্বেডকর ফুলে স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বাপসা) এবং পিএসএ পৃথক জোট গড়ে লড়াইয়ে নামে। অন্য দিকে, স্বাধীন ভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল এবিভিপি। তা সত্ত্বেও প্রতিটি পদেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পেয়েছে তারা। ফলাফল প্রকাশের পর আইসার তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘এটা সত্যিই উদ্বেগের বিষয় যে, এবিভিপি মাত্র ৮৫ ভোটের ব্যবধানে হলেও যুগ্ম সম্পাদক পদে জয়লাভ করেছে। পরিকল্পিত এবং কাঠামোগত আক্রমণ, ভর্তি প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি এবং অধ্যাপক পদে বিজেপি-ঘনিষ্ঠদের বসিয়ে ক্যাম্পাসে শাসকগোষ্ঠীর টিকিট পাকা করতে চেয়েছিল এরা। তবে আরও এক বার জেএনইউ-তে নেতৃত্বের অবস্থানে ফিরল বামপন্থীরাই।’’ অন্য দিকে, তাদের জয়কে জেএনইউ-এর রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একটি ‘ঐতিহাসিক পরিবর্তন’ হিসাবে দেখছে এবিভিপি। এবিভিপি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘এই জয় জেএনইউতে বামপন্থীদের তথাকথিত ‘লাল দুর্গ’ ভেঙে দিয়েছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছিল তা কয়েক বছর আগে জেএনইউ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফল বেরোনোর দিনের ছবি। অনবধানতাবশত এ বছরের ছবির বদলে পুরনো ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিল। বিষয়টি গোচরে আসার পরই তা বদলে দেওয়া হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী)