শাহজাহানপুরের ওই আইনের ছাত্রীকে গ্রেফতার করা হল ব্ল্যাকমেলিংয়ের অভিযোগে। ফাইল চিত্র।
চিন্ময়ানন্দকাণ্ডে এ বার কারাগারে অভিযোগকারী তরুণীই। বুধবার সকালে তাঁর বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয় আইনের ওই ছাত্রীকে। বাড়ির লোকের অভিযোগ, একপ্রকার জোর করেই তাঁকে বাইরে আনা হয়। এমনকি, তরুণীকে নাকি চটি পরার সুযোগও দেওয়া হয়নি। গ্রেফতারি এড়াতে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের কাছে আবেদন করেছিলেন ওই পড়ুয়া। বৃহস্পতিবার ছিল শুনানি। কিন্তু অপেক্ষা করল না ইলাহাবাদ পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। ব্ল্যাকমেলিংয়ের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল ২৩ বছর বয়সি তরুণীকে। ঘটনার শুরু থেকেই অভিযোগকারিণীর বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেলিংয়ের অভিযোগ করেছিলেন চিন্ময়ানন্দ।
বুধবার সকালে মুখ ঢাকা অবস্থায় তরুণীকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। রুটিন চেক আপের পরে গ্রেফতার। এরপর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন। সিটের তদন্তকারীদের দাবি, তরুণীর বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেলিংয়ের প্রমাণ আছে। অভিযোগ, তিনি চিন্ময়ানন্দের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা দাবি করেছিলেন।
যাঁর বিরুদ্ধে তরুণীর অভিযোগ, সেই ৭২ বছরের চিন্ময়ানন্দকে গ্রেফতার করা হয়েছে গত শুক্রবার। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি-র বর্ষীয়ান নেতা রবিবার থেকে হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণ দেখিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে হাসপাতালসূত্রে খবর, তাঁর বড়সড় অসুস্থতার কোনও চিহ্ন এখনও সামনে আসেনি। জেল হেফাজতে থাকা এই দলীয় নেতাকে এখনও সাসপেন্ড বা বহিষ্কার, কোনওটাই করেনি কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি।
শাহজাহানপুরের ওই তরুণীর অভিযোগ, গত বছর আইন কলেজে ভর্তি করতে সাহায্য করার সুযোগে তাঁকে যৌন নির্যাতন করেন চিন্ময়ানন্দ। পরে তিনি সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগও আনেন। ছাত্রীর অভিযোগ, হস্টেলে স্নান করার সময় তাঁর একটি ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়েছিল। সেই ভিডিয়ো দেখিয়ে তাঁকে চিন্ময়ানন্দ ব্ল্যাকমেল করেন বলে অভিযোগ। একাধিক জায়গায় আশ্রম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা এই নেতা তাঁকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে মাসাজ দিতে বাধ্য করতেন বলেও জানিয়েছেন তরুণী। সে রকম কিছু ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতেও ঘুরেছে। তরুণীর দাবি, চশমায় লাগানো ক্যামেরার সাহায্যে ওই ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়। তিনি পুলিশকে আরও জানিয়েছিলেন, অনলাইনে কেনা ওই চশমা তাঁর হস্টেলের ঘরে ছিল। ফরেনসিক দল, কলেজের অধ্যক্ষ, অভিযোগকারিণী এবং তাঁর বাবা উপস্থিতিতে ওই চশমা খোলা হয়। কিন্তু চশমাটি এখনও সিট-এর হাতে আসেনি।
এর আগে চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে তরুণীর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে গত ২৪ অগস্ট। সেদিন অভিযোগকারিণী ফেসবুকের পোস্টে তাঁর অভিযোগ জানান। যদিও তিনি প্রথমে রাজনীতিকের নাম নেননি। এরপর অভিযোগকারিণী নিজেই উধাও হয়ে যান। সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরো বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ শুরু হতেই চিন্ময়ানন্দের তরফে তাঁর বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেলিংয়ের অভিযোগ আনেন। এক সপ্তাহ পরে তাঁকে খুঁজে বার করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এরপর সুপ্রিম কোর্ট তাঁর অভিযোগ শোনে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে গঠিত হয় সিট। পুলিশ জানিয়েছে জেরার মুখে প্রায় সব অভিযোগই স্বীকার করেছেন চিন্ময়ানন্দ। বিশেষ করে ভিডিয়োর সামনে তিনি নতিস্বীকারে বাধ্য হন।
তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি এই মামলায় রয়েছে একটি উপধারাও। সেই উপধারায় বলছে ‘‘সম্ভোগের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করা’’। সেই ধারায় জরিমানা-সহ পাঁচ থেকে সাত বছর অবধি কারাদণ্ড হতে পারে। কিন্তু সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগ আনা হলে সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ব্ল্যাকমেলিংকাণ্ডে ওই তরুণী ছাড়া নাম রয়েছে তাঁর আরও তিন বন্ধুর। তাঁদের আগেই গ্রেফতার করেছে সিট।
আরও পড়ুন : মা-মেয়ের চোখের জলে মুছল সীমান্ত
আরও পড়ুন: মন্দির কি আদৌ ভাঙা হয়েছিল, সওয়াল আদালতে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy