গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
প্রয়াত সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির দেহদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে শনিবার বিকালে। দিল্লি এমসের অ্যানাটমি বিভাগে সীতারামের দেহ তুলে দেওয়া হয়। স্ত্রী সীমা চিস্তি, কন্যা অখিলা ইয়েচুরির হাতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র তুলে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপস্থিত ছিলেন দলের পলিটব্যুরোর সদস্যেরাও।
ঠিক হয়েছে, আপাতত কিছু দিন সিপিএমের কাজ ‘যৌথ’ ভাবে পরিচালনা করবেন পলিটব্যুরোর বাকি সদস্যেরা। সেপ্টেম্বরের শেষে পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেই কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক থেকেই এক জনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেবে সিপিএম। তিনিই আগামী এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব সামলাবেন। তার পর এপ্রিলে মাদুরাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য পার্টি কংগ্রেস থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবে সিপিএম। সেপ্টেম্বরের ২৭ থেকে ২৮ তারিখ দুপুর পর্যন্ত চলবে সিপিএম পলিটব্যুরোর বৈঠক। ২৮ সেপ্টেম্বর বিকাল থেকে শুরু হবে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। সেই বৈঠক থেকেই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবে কেন্দ্রীয় কমিটি। ঘটনাচক্রে, সেপ্টেম্বরের শেষে এই বৈঠক সীতারামেরই ডাকা ছিল। কিন্তু তার আগেই তিনি প্রয়াত হয়েছেন। সিপিএম সূত্রের খবর, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক যাঁকে করা হবে, তাঁকেই পার্টি কংগ্রেস থেকে স্থায়ী ভাবে সাধারণ সম্পাদক করার সম্ভাবনা রয়েছে।
দলের গঠনতন্ত্রে সংশোধন এনে সিপিএম স্থির করেছে, কোনও স্তরে কোনও একজন ব্যক্তি তিনটি মেয়াদের বেশি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। দলের সাধারণ সম্পাদক পদে সীতারামের তৃতীয় মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল আগামী এপ্রিলে। গত কয়েক মাস ধরেই আলোচনা হচ্ছিল, সীতারামের পরে কে? দিল্লির নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় জানাচ্ছিলেন, গঠনতন্ত্র মেনে নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির তিন-চতুর্থাংশের সমর্থন নিয়ে সীতারামকেই ফিরিয়ে আনা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। কিন্তু তার আর কোনও অবকাশ রইল না। সূত্রের খবর, সিপিএমের একটি অংশ সীতারাম হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীনই চেয়েছিলেন বাংলার রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দিল্লিতে গিয়ে দলের দফতর পরিচালনা করুন। সিপিএম সূত্রে এ-ও খবর যে, ঘনিষ্ঠমহলে সেলিম বলেছেন, তাঁর দিল্লি যাওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। তিনি বাংলার রাজনীতি ছেড়ে এখন রাজধানীতে গিয়ে রাজনীতি করতে চান না। সিপিএমের যে অংশ সেলিমকে দিল্লিতে চাইছেন, তাঁদের যুক্তি, সেলিম অতীতে দিল্লিতে থেকে রাজনীতি করেছেন। বাংলার পাশাপাশি তিনি হিন্দি, ইংরেজি এবং উর্দুতেও সাবলীল। সর্বভারতীয় স্তরে রাজনীতি করতে গেলে ভাষার পারদর্শিতা একটা বড় বিষয়। সেই কারণেই তাঁরা সেলিমকে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলার রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটব্যুরোর সদস্যকে এখনও রাজি করানো যায়নি। বাংলার নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় দু’রকম মত জানাচ্ছেন। একাংশের বক্তব্য, সেলিম দিল্লি গেলে দল প্রথম বাঙালি সাধারণ সম্পাদক পাবে। এটা বাংলার পার্টির জন্য গৌরবের। আবার অন্য অংশের বক্তব্য, সেলিম তবু ঠেকা দিয়ে বাংলার সাংগঠনিক কাঠামো আগলে রেখেছেন। এখন অন্য কেউ দায়িত্ব নিলে আরও খারাপ জায়গায় যাবে পার্টি। সেলিম যে ভাবে রাজ্যের রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের নেতা এবং নেত্রীদের গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা-ও ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শনিবার সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির দফতরে শায়িত রাখা ছিল সীতারামের দেহ। সেখানে গিয়েই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন দলের নেতানেত্রী। গিয়েছিলেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী, সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব, আপ সাংসদ রাঘব চ়ড্ডা, ডিএমকে নেতা উদয়নিধি স্ট্যালিন, ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার-সহ অনেকে। গিয়েছিলেন চিন, ভিয়েতনাম এবং প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রদূতেরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy