ছবি: টুইটার।
বন্যায় কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জল্লির কাদায় হাঁটার ছবি যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, সে সময় একই জেলায় শাসক দলের এক বিধায়কের বিরুদ্ধে জল্লি-টিমের অফিসারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে৷ জেলায় কর্মরত ৩০ জন অফিসার লক্ষ্মীপুরের বিধায়ক কৌশিক রাইয়ের বিরুদ্ধে মুখ্যসচিবের কাছে লিখিত নালিশ জানিয়েছেন৷ তাঁরা জানান, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক সিঙ্ঘলের বন্যাদুর্গত এলাকা সফরের সময়ে সঙ্গে ছিলেন দুই সার্কল অফিসার দীপঙ্কর নাথ ও বিকাশ ছেত্রী এবং বিডিও হোসেন মহম্মদ মুবিন৷ ছিলেন লক্ষ্মীপুরের বিধায়ক -সহ বিজেপির এক ঝাঁক নেতা-কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা৷ সকলের সামনেই বিধায়ক অফিসারদের ‘ত্রাণসামগ্রী চোর’ বলে গালিগালাজ করেন৷ দীপঙ্কর নাথ ত্রাণসামগ্রী আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করলে বিধায়ক চড় দেখান৷ বলেন, "তোমাকে চড়াতে হয়৷" তিনি সার্কল অফিসারের এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন অফিসারেরা৷ মুখ্যসচিবের পাশাপাশি তাঁরা চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব এবং কর্মচারী বিষয়ক সচিবকেও৷ অফিসারদের অভিযোগ, বিধায়ক গোটা কাছাড়ের অফিসারদের সম্পর্কেও নানা আপত্তিজনক মন্তব্য করেছেন৷
লক্ষ্মীপুরের বিধায়ক কৌশিক রাই অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ তিনি বলেন, "আমার এলাকার তিনটি পঞ্চায়েত সোনাই সার্কলের অধীনে৷ ওই সব এলাকার মানুষ জলমগ্ন থাকলেও কোনও ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন৷ আমি তাই সোনাইয়ের সার্কল অফিসারকে ডেকে এর কারণ জানতে চেয়েছিলাম৷" সব অফিসারদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যের কোনও প্রশ্নই ওঠে না বলে সাফাই দেন কৌশিক৷ তাঁর কথায়, "অফিসারদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক সব সময়েই ভালো৷"
নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক সিঙ্ঘল এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি৷ সংবাদমাধ্যমের কাছে মন্তব্যে নারাজ অফিসাররাও৷
তবে কৌশিকের সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা৷ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তমালকান্তি বণিক বলেন, ‘‘বন্যার সময়ে অফিসাররা দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন৷ তাঁদের প্রশংসার বদলে দুর্ব্যবহার পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক৷’’ তমালের আশঙ্কা, প্রশাসনের উপরে চাপ সৃষ্টি করে কৌশিকেরা নিজেদের ফায়দা তুলতে চাইছেন৷ তিনি কৌশিক কাণ্ডের তদন্ত দাবি করেন৷ বরাক ডেমোক্র্যাটিক ইয়ুথ ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্নব গুপ্ত বলেন, ‘‘যদি কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে বিধায়কের অভিযোগ থাকে, তা জানানোর প্রক্রিয়া রয়েছে৷ কৌশিক রাই যে ভাবে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করেছেন, তা নিন্দনীয়৷’’ ৩০ জন অফিসারের ক্ষোভ প্রকাশ নিয়ে ফ্রন্টের আশঙ্কা, এর প্রভাব জনগণের উপরে পড়তে পারে৷ তাঁরা কৌশিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ দাবি করেন৷
বিজেপির কাছাড় জেলা কমিটি দলীয় বিধায়কেরই পাশে দাঁড়িয়েছে৷ জেলা সভাপতি বিমলেন্দু রায় ও বিধানসভার প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার আমিনুল হক লস্কর বলেন, "আমরাও সেদিন মন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলাম৷ কৌশিক অফিসারদের সঙ্গে কোনও অশোভন আচরণ করেননি৷" তাঁদের কথায়, আসলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাসিন্দা দুই-তিনজন অফিসার চাইছেন, বদলি নিয়ে ব্রহ্মপুত্রে ফিরতে৷ ভেবেছেন, ও ভাবে নালিশ জানালে সরকার তাঁদের এখান থেকে বদলি করে দেবে৷
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy