Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

কাজ কমছে গরমে, ক্ষতি বেশি ভারতে

‘উষ্ণতর গ্রহে কাজ করা’ নামে ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ২.২ শতাংশ শ্রমঘণ্টা খোয়াবে বিশ্ব। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে না-পারা কিংবা কাজের গতি মন্থর হয়ে পড়ার কারণে এমনটা ঘটবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
রাষ্ট্রপুঞ্জ শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ০২:১৪
Share: Save:

মুম্বই ভাসছে। হা বৃষ্টি চেন্নাই। বাঁকুড়ার গরম প্যারিসে। সকলেই জানেন, বিশ্বের উষ্ণায়ন না রুখলে ছবিটা আরও নির্মম হয়ে উঠবে। দক্ষিণ মেরু কবে বরফ হারিয়ে ন্যাড়া হয়ে যাবে, সমুদ্র ক’বছরে কতটা ডাঙা গ্রাস করবে, গিলে নেবে কত দ্বীপ— এ সব নিয়ে যখন জোর চর্চা, আমেরিকার মতো ধনী, শক্তিমান, শিল্পোন্নত দেশ তখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে থাকছে, উষ্ণায়ন রোখার আর্থিক দায় নিতে রাজি নয় বলে। কিন্তু গরম কাউকে ছাড়বে না। উষ্ণায়নের ধাক্কা এসে লাগছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতেই। এবং ক্রমেই তা কতটা উদ্বেগজনক চেহারা নিচ্ছে, সে বিষয়ে হুঁশিয়ারি রয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও)-এর সদ্য প্রকাশ করা রিপোর্টে।

‘উষ্ণতর গ্রহে কাজ করা’ নামে ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ২.২ শতাংশ শ্রমঘণ্টা খোয়াবে বিশ্ব। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে না-পারা কিংবা কাজের গতি মন্থর হয়ে পড়ার কারণে এমনটা ঘটবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই সংগঠনটির রিপোর্ট বলছে, ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের। এর পরে রয়েছে পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য আফ্রিকা। এই সব দেশের শ্রমঘণ্টার ক্ষতি বিশ্ব-গড়ের চেয়ে বেশি। আর নীচে রয়েছে উত্তর আফ্রিকা, আরব দেশগুলি, মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলি। ইউরোপের ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে কম।

ভারতে ১৯৯৫ সালে গরমের কারণে কৃষি, শিল্প, নির্মাণ ও পরিষেবা ক্ষেত্র মিলিয়ে মোট ৪.৩১ শতাংশ শ্রম কম মিলত। ২০৩০ নাগাদ ৫.৮ শতাংশ শ্রম খোয়াবে ভারত। অর্থাৎ বছরে ৩ কোটি ৪০ লক্ষ শ্রমদিবসের বেশি। এ দেশে কৃষি, ইটভাটা-সহ নির্মাণ শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক গরিব মানুষ কাজ করেন। ৪০-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, রোদে পুড়ে কাজ করতে হয় তাঁদের। তাঁদেরই দুর্দশায় পড়তে হবে সবচেয়ে বেশি। যেমন পশ্চিমবঙ্গের ইটভাটাগুলিতে গাঁ-গঞ্জ থেকে নারী-পুরুষ কাজ করতে যান। আইএলও-র সমীক্ষকেরা দেখেছেন, ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে ওই শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা ২ শতাংশ কমে যায়। স্বাস্থ্যের ক্ষতি তো আছেই, এর পাশাপাশি কম কাজ করতে পারায় এঁদের রোজগারও কমে যায়। কর্মক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ দাবি করার মতো অবস্থায় থাকেন না তাঁরা। আমদাবাদে শ্রমিকদের কাজের সহনীয় পরিবেশ দেওয়ার জন্য শেড বানানোর একটি উদ্যোগকে অনুকরণীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় এটা প্রায় নগণ্য।

গরমে কাজের ক্ষতিতে ভারতের পরেই আছে পাকিস্তান। ১৯৯৫-এ গরমে নষ্ট হত ৪.১৯ শতাংশ শ্রম (১৪.৩৯ লক্ষ শ্রমদিবস)। ২০৩০-এ তা হবে ৫.৫৪ শতাংশ (৪৬.০৩ লক্ষ শ্রমদিবস)। এর পরেই বাংলাদেশ। ১৯৯৫ সালে ৪.২৪ শতাংশ শ্রম (২২.৭৪ লক্ষ শ্রমদিবস) কম পাওয়া যেত গরমে, ২০৩০ নাগাদ সেটা হতে পারে ৪.৮৪ শতাংশ (৩৮.৩৩ লক্ষ শ্রমদিবস)। কাজ কম করতে পারার সরাসরি ধাক্কা গিয়ে পড়বে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের রোজগারে। এবং অবশ্যই দেশগুলির সার্বিক আর্থিক কর্মকাণ্ডে। ভারত,পাকিস্তান, তাইল্যান্ড, কম্বোডিয়ায় জিডিপি কমে যেতে পারে ৫ শতাংশের বেশি।

একুশ শতকের শেষে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। এই হারে উষ্ণতা বাড়বে ধরে নিয়ে তৈরি হয়ছে আইএলও-র এই রিপোর্ট। স্রেফ গরমের কারণে ২০৩০ নাগাদ বিশ্বের বার্ষিক ক্ষতির অঙ্কটা দাঁড়াতে পারে ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি ডলার। আজই ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপগ্রহ নজরদার সংস্থা জানিয়েছে, এ বছরের জুনই ছিল ইতিহাসে সবচেয়ে গরম মাস।

অন্য বিষয়গুলি:

Labour Power Global warming
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy