ছবি: সংগৃহীত।
কোঝিকোড়ে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল গত কাল রাতেই। তাই সুযোগ পেলে আজ নাগপুরে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন ক্যাপ্টেন দীপক বসন্ত শাঠে। মায়ের জন্মদিনে তাঁর কাছে থাকার জন্য। কিন্তু তার আগেই কোঝিকোড় বিমানবন্দরে দুর্ঘটনা ছিনিয়ে নিল তাঁর প্রাণ। বছর আটান্নর শাঠের সঙ্গে ছিলেন বছর বত্রিশের কো-পাইলট অখিলেশ কুমার। মারা গিয়েছেন তিনিও।
নাগপুরের ভারত কলোনিতে থাকেন দীপক শাঠের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার বসন্ত শাঠে ও মা নীলা। স্ত্রীর সঙ্গে মুম্বইয়ে থাকতেন দীপক। মার্চ মাসে শেষ বার বাবা-মায়ের কাছে এসেছিলেন দীপক। ‘‘করোনা অতিমারির জন্য আমরাই ওকে আসতে বারণ করেছিলাম। ফোনেই কথা হত। আমাকে বলত, বেশি বাড়ি থেকে বেরিয়ো না। হঠাৎ এমন কাণ্ড।’’ নীলার বড়় ছেলে েসনা অফিসার বিকাশ শাঠেও মারা যান দুর্ঘটনায়।
অসামরিক বিমান ক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার আগে বায়ুসেনার অফিসার ছিলেন দীপক। পেয়েছিলেন বায়ুসেনার বিশেষ সম্মান ‘সোর্ড অব অনার’। নীলা বললেন, ‘‘সব সময়ে সব কিছুতে এগিয়ে থাকত ও। ঘোড়ায় চড়া, টেবল টেনিস, স্কোয়াশ। গুজরাতে বন্যার সময়ে বাহিনীর অন্য সদস্যদের ছেলেমেয়েকে কাঁধে তুলে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গিয়েছিল।’’
আরও পড়ুন: নিজের জীবন দিয়ে অধিকাংশ যাত্রীর প্রাণ বাঁচালেন বায়ুসেনার পদকপ্রাপ্ত পাইলট
দীপকের ভাইপো যশোধন শাঠে জানিয়েছেন, দীপকের স্ত্রী ও শ্যালক কোঝিকোড়ে গিয়েছেন। দীপকের দুই ছেলে। তাঁদের মধ্যে ধনঞ্জয় শাঠে থাকেন বেঙ্গালুরুতে। তিনি সড়কপথে কোঝিকোড়ে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন। ধনঞ্জয়ের ভাই আমেরিকায় থাকেন। আন্তর্জাতিক উড়়ান বন্ধ থাকায় তাঁর দেশে আসার সম্ভাবনা আপাতত নেই। কোথায় শেষকৃত্য হবে তা এখনও স্থির হয়নি। শাঠের ভাই নীলেশ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আর্থিক উপদেষ্টা। এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘‘দীপক নেই এটা বিশ্বাস করাই শক্ত। বায়ুসেনায় থাকার সময়েও এক বার দুর্ঘটনায় পড়েছিল ও। মাথায় অনেক ক্ষত হয়েছিল। সপ্তাহ খানেক আগে আমাদের ফোনে কথা হয়েছিল। বরাবরের মতোই হাসিখুশি ছিল ও। জানতে চাইলাম বন্দে ভারত অভিযানে যখন আরব দেশগুলিতে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছ তখন কি ফাঁকা বিমান নিয়ে যাচ্ছ? বলল না আমরা ওষুধ,,ফল, আনাজ নিয়ে যাই।’’
শাঠের কো-পাইলট অখিলেশের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের মথুরায়। তাঁর স্ত্রী মেঘা অন্তঃসত্ত্বা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। অখিলেশের বাবা-মা, দু’ভাই ও এক বোন রয়েছেন। সহকর্মীদের মতে, অত্যন্ত দক্ষ পাইলট ছিলেন তিনি। বিমানের যান্ত্রিক দিকগুলি বুঝিয়ে দিতেন সাবলীল ভাবে। তাঁর সহকর্মী অঞ্জন লিখেছেন, ‘‘কয়েক বছর আগে অখিল যে ভাবে একটা জিনিস বুঝিয়ে দিয়েছিল সেটা এখনও মনে আছে।’’
আরও পড়ুন: কোঝিকোড়ে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত দুই যাত্রীর কোভিড পজিটিভ, নিভৃতবাসে যেতে বলা হল উদ্ধারকারীদের
খবরটা এখনও ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না অখিলেশের সম্পর্কিত ভাই বাসুদেব। বললেন, ‘‘খুব শান্ত, ভদ্র স্বভাবের ছেলে ছিল অখিল। দিন পনেরোর মধ্যেই ওর বাবা হওয়ার কথা।’’ অখিলেশের বাবা তুলসী রামের কথায়, ‘‘গত কাল রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার আধিকারিকেরা ফোন করে দুর্ঘটনার কথা জানালেন। প্রথমে বলা হল অখিল গুরুতর আহত হয়েছে। পরে এল মৃত্যুর খবর। ওর ভাই আর শ্যালক কেরলে গিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy