Advertisement
E-Paper

হত্যালীলার এক সপ্তাহ পার! সিন্ধু চুক্তি স্থগিত, আকাশসীমা বন্ধ, পহেলগাঁও কাণ্ডের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৮টি ঘটনা

পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-এ-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) প্রথমে ঘটনার দায় স্বীকার করলেও, পরে ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের যুক্তি দিয়ে দায় এড়িয়েছে।

Key developments after 1 week of Pahalgam attack

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:২৪
Share
Save

পেরিয়ে গিয়েছে এক সপ্তাহ। কাশ্মীরে পহেলগাঁওয়ে গত মঙ্গলবারের (২২ এপ্রিল) হত্যাকাণ্ডের ঘাতকদের এক জনেরও খোঁজ মেলেনি এখনও। কিন্তু বৈসরন উপত্যকার জঙ্গি হানায় ২৫ জন পর্যটক এবং এক জন স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যু ঘিরে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ উত্তেজনার পারদ এখনও চড়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে উপত্যকা জুড়ে চলছে সেনা তৎপরতা।

এই ঘটনায় পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-এ-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) দায়ী বলে অভিযোগ। ২২ এপ্রিল রাতে টিআরএফ পর্যটক হত্যার দায়ও স্বীকার করেছিল। কিন্তু গত শনিবার তারা দাবি করেছে, তাদের ওয়েবসাইট হ্যাক করে ওই দাবি করা হয়েছিল। নতুন বিবৃতিতে পহেলগাঁও কাণ্ডের দায় এড়িয়েছে তারা। একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, হামলাকারীদের মধ্যে শুধু দু’জন স্থানীয় জঙ্গি ছিল। বাকি সকলেই পাকিস্তানি। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে পাকিস্তান।

এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েই একে অন্যের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কূটনৈতিক পদক্ষেপ করেছে। তার মধ্যে অন্যতম, নরেন্দ্র মোদী সরকারের তরফে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধুচুক্তি স্থগিত করে দেওয়া এবং সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করে দেশে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ। ইসলামাবাদ জানিয়েছে, জলপ্রবাহ আটকানোর চেষ্টা হলে তা ‘যুদ্ধ’ হিসাবে দেখা হবে। পাশাপাশি, পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সরকার ভারতীয় যাত্রিবাহী বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ এবং শিমলা চুক্তি স্থগিত করার বার্তা দিয়েছে।

নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতিতে ইতি

পহেলগাঁও কাণ্ডের আবহে নতুন করে অশান্তি ছড়িয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি)। সোমবার পর্যন্ত টানা পাঁচ রাত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে গুলিবর্ষণ করেছে পাক সেনা। ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, সোমবার রাতে কাশ্মীরের কুপওয়ারা এবং বারামুলা জেলার কাছে নিয়ন্ত্রণরেখার অপর প্রান্ত থেকে বিনা প্ররোচনায় গুলিবর্ষণ শুরু করে পাকিস্তানি সেনা। কাশ্মীরের আখনুর সেক্টরের বিপরীত প্রান্ত থেকেও গুলি চালিয়েছে পাক ফৌজ। তার জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাও।

প্রসঙ্গত, এলওসি এলাকায় সংঘর্ষবিরতি কার্যকর করতে ২০০৩ সালে একমত হয়েছিল নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারত ও পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি চুক্তি পুনর্নবীকরণ করেছিল। খাতায়কলমে এই নিয়ম এখনও বহাল। কিন্তু, অতীতেও দু’দেশের সেনা পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে। সূত্রের খবর, সংঘর্ষবিরতি চুক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ডিজিএমও-প্রতিনিধি স্তরে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হত। ওই ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এ ব্রিগেডিয়ার স্তরের অফিসারেরা যোগ দিতেন। কিন্তু পরবর্তী সময় তা অনমনীয় হয়ে পড়ে। শুধু এলওসিতে সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গ নয়, পঞ্জাবের আন্তর্জাতিক সীমান্তেও প্রথা ভেঙে পাক রেঞ্জার্স বাহিনী রিষড়াবাসী বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউকে আটক করায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

উপত্যকা জুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান

পহেলগাঁও হামলার পরে সাত দিন কেটে গিয়েছে। অথচ জঙ্গিদের মুখের স্কেচ থাকা সত্ত্বেও হামলাকারীদের নাগাল পেতে (সুরক্ষা সংক্রান্ত পরিভাষায়, ‘কনট্যাক্ট এস্টাবলিশমেন্ট’) এখনও ব্যর্থ নিরাপত্তা বাহিনী। যা ফের তৃণমূল স্তরে গোয়েন্দা ব্যর্থতার দিকেই আঙুল তুলে দিয়েছে। যদিও এখনও হাল ছাড়তে নারাজ সেনা এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। সেনার তরফে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত হামলাকারীদের সন্ধানে মধ্য ও দক্ষিণ কাশ্মীরের ১৩টি স্থানে তল্লাশি অভিযান হয়েছে।

মঙ্গলবারও কুলগাঁও, ত্রাল, সোপিয়ান-পুলওয়ামার মতো চারটি স্থানে সেনা অভিযান হয়েছে। প্রসঙ্গত, তল্লাশি অভিযান চলাকালীন গত বৃহস্পতিবার উধমপুরে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয়েছেন নদিয়ার তেহট্টের বাসিন্দা, ভারতীয় সেনার প্যারাকমান্ডো ঝন্টু আলি শেখ। এরই মধ্যে মঙ্গলবার ভোরে ত্রালের অদূরে জঙ্গলে একটি জঙ্গিদলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে সেনা সূত্রের খবর। তাদের সঙ্গে সেনা ও পুলিশের যৌথবাহিনীর গুলির লড়াই শুরু হয়েছে। বৈসরনে হামলায় জড়িত সন্দেহে ১৫ জন স্থানীয়কে গ্রেফতার করে জেরা করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের বয়ান থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে সরকারি সূত্রের দাবি।

সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বাড়ি ভাঙা

পহেলগাঁওয়ে হত্যালীলার পর উপত্যকা জুড়ে পুলিশ এবং সেনার অভিযান শুরু হয়েছে। ধরপাকড়ের পাশাপাশি বেশ কয়েক জন সন্দেহভাজন লশকর জঙ্গির বাড়ি নিরাপত্তাবাহিনী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। এই তালিকায় রয়েছে পহেলগাঁও সন্ত্রাসের অন্যতম অভিযুক্ত, ওই এলাকার বাসিন্দা আদিল হুসেন ঠোকরের বাড়ি। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লশকর-এ-ত্যায়বার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। কুলগাঁও, পুলওয়ামায় ভাঙা হয়েছে সন্দেহভাজন লশকর জঙ্গি আসিফ শেখ, জ়াকির আহমেদ গনি, আহসান আল হক শেখের বাড়ি। নিরাপত্তাবাহিনীর এমন ‘তৎপরতা’ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দল পিডিপির প্রধান মেহবুবা মুফতি।

পহেলগাঁও প্রসঙ্গ রাষ্ট্রপুঞ্জে

পহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গ তুলে রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানকে ‘অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য’ (রোগ স্টেট) বলে সমালোচনায় বিঁধেছেন ভারতীয় দূত যোজনা পটেল। তিনি জানান, ২০০৮ সালে ২৬/১১ মুম্বই হামলার পরে পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হানাতেই সবচেয়ে বেশি নিরস্ত্র মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পহেলগাঁও কাণ্ডের পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যে ভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে এবং ভারতের প্রতি সংহতির বার্তা দিয়েছে, সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

ভারতের অভিযোগ, পহেলগাঁও কাণ্ডে পাকিস্তানি জঙ্গিরা জড়িত। পাকিস্তান যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে নিরপেক্ষ অনুসন্ধানের দাবি তুলেছে। বস্তুত, আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ ইতিমধ্যে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার নিন্দায় সরব হয়েছে। তবে ভারত যে পাকিস্তানি জঙ্গিযোগের দাবি তুলেছে, সেই নিয়ে আমেরিকার বা অন্য কোনও তৃতীয় দেশ কোনও মন্তব্যই করেনি। জঙ্গিহানার নিন্দা জানালেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে কোনও দেশ প্রকাশ্যে সরব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় দূত রাষ্ট্রপুঞ্জে তাঁর বক্তৃতায় পাকিস্তানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফের সাম্প্রতিক একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারের কথাও উল্লেখ করেন। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ওই মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে যোজনা জানান, জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করার পাকিস্তানের ইতিহাস সম্পর্কে সেটি একটি ‘খোলা স্বীকারোক্তি’। তিনি বলেন, “জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে পাকিস্তানের সমর্থন, প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক মদতের ইতিহাস স্বীকার করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ এবং গোটা বিশ্ব সেই কথা শুনেছে।

সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত এবং পাক হুঁশিয়ারি

পহেলগাঁও কাণ্ডের পরেই ভারত ঘোষণা করেছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের কথা। এমন সিদ্ধান্ত নিলে তা ‘যুদ্ধ’ হিসাবে দেখা হবে বলে ভারতকে বৃহস্পতিবার পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সরকার। কিন্তু শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ইসলামাবাদকে সিন্ধু জলচুক্তি ‘আপাতত স্থগিতের’ কথা জানিয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জলপ্রবাহ সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাকিস্তানকে দেওয়া হবে না।

এর পরেই নয়াদিল্লিকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দেন পাকিস্তানের শাসক জোটের সহযোগী পাকিস্তান পিপল্‌স পার্টি (পিপিপি)-র নেতা বিলাবল ভুট্টো জারদারি। নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ উত্তেজনার আবহে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সিন্ধু আমাদের। হয় সিন্ধু নদ দিয়ে আমাদের প্রাপ্য জল আসবে, নয়তো সিন্ধু দিয়ে ওদের (ভারতীয়) রক্ত বইবে।’’ পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় আদতে পাকিস্তানের সঙ্গে সাড়ে ছ’দশকের পুরনো সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি (আইডব্লিউটি) ভেঙে বেরিয়ে এলে পাকিস্তানের পঞ্জাব এবং সিন্ধু প্রদেশে জলসেচ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। যার প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষিতে। সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হতে পারে। কারণ, সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির জলের উপরেই পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষি নির্ভরশীল! সে কারণে ইসলামাবাদ চাপে পড়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বলে কূটনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা।

পাক নিশানায় শিমলা চুক্তি

পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ করেছে ভারত। বৃহস্পতিবার তার পাল্টা হিসাবে আটটি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে ইসলামাবাদ। তার মধ্যেই অন্যতম শিমলা চুক্তি সংক্রান্ত ঘোষণা। পাকিস্তানের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভারতের সঙ্গে শিমলা চুক্তি-সহ সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত রাখার অধিকার রয়েছে তাদের। যত ক্ষণ না ভারত পাকিস্তানের অন্দরে সন্ত্রাসকে উস্কানি দেওয়া, আন্তর্জাতিক হত্যাকাণ্ড এবং আন্তর্জাতিক আইন ভাঙা বন্ধ করছে, তত দিন এই চুক্তি স্থগিত থাকতে পারে।’’

১৯৭১ সালের যুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ আক্রমণে পাকিস্তানের পরাজয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশের পর হিমাচল প্রদেশের শিমলায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে শিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ১৯৭২ সালের ২ জুলাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দির গান্ধী এবং পাক প্রধানমন্ত্রী জ়ুলফিকর আলি ভুট্টোর সই করা চুক্তি ওই বছরেরই ৪ অগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছিল। এটি দুই প্রতিবেশীর মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমেই সিয়াচেন বাদে বাকি অংশে জম্মু ও কাশ্মীর এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যবর্তী নিয়ন্ত্রণরেখা বা (এলওসি) নির্ধারিত হয়েছিল। স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্য সেনা মোতায়েন না করতে সম্মত হয়েছিল নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ।

পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল ও প্রতিক্রিয়া

পহেলগাঁও কাণ্ডের জেরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানের দিকেই আঙুল তুলেছে। পাশাপাশি, বেশ কয়েকটি কড়া পদক্ষেপও করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখা। পাকিস্তান থেকে যাঁরা বৈধ ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছেন, তাঁদের দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে নয়াদিল্লি। একই সঙ্গে পাকিস্তানিদের জন্য বাতিল করে দেওয়া হয়েছে ‘সার্ক’ ভিসাও। বেঁধে দেওয়া হয়েছে সময়ও। পাকিস্তানিদের স্বল্পমেয়াদি ভিসা (১২ ধরনের) বাতিল করেছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। জানানো হয়েছে, ‘সার্ক’ ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ২৬ এপ্রিল, অর্থাৎ শনিবারই তাঁদের ভারত ছাড়ার শেষ দিন ছিল।

মেডিক্যাল ভিসা বাদে প্রায় সব পাকিস্তানি ভিসার মেয়াদই শেষ রবিবার, অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল। মেডিক্যাল ভিসার মেয়াদের শেষ তারিখ ২৯ এপ্রিল, অর্থাৎ মঙ্গলবার। তবে এই তালিকা থেকে বাদ থাকছে দীর্ঘমেয়াদি ও কূটনৈতিক ভিসা! মোদী সরকার জানিয়েছে, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যদি পাকিস্তানের নাগরিকেরা ভারত না ছাড়েন তবে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। শুধু তা-ই নয়, সমস্ত রাজ্যকে কেন্দ্রের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তানিদের চিহ্নিত করে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। রবিবারের মধ্যে ভারত ছাড়তে হয়েছে, ১২ রকমের ভিসায় এ দেশে রয়েছেন এমন পাকিস্তানি নাগরিকদের। সেই ১২ রকমের ভিসা হল— ভিসা অন অ্যারাইভাল, বাণিজ্য, চলচ্চিত্র, সাংবাদিক, ট্রানজিট, সম্মেলন, পর্বতারোহণ, পড়ুয়া, ভিজিটর, পর্যটকের দল, তীর্থযাত্রী, তীর্থযাত্রীর দল। শুধুমাত্র মেডিক্যাল ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে আরও দু’দিন সময় দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান পত্রপাঠ সে দেশে আবস্থানকারী ভারতীয়দের দেশে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

‘কূটনৈতিক কাটছাঁট’ থেকে সামরিক প্রস্তুতি

জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গত বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর ৭ লোককল্যাণ মার্গের সরকারি বাসভবনে বৈঠকে বসেছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি (সিসিএস)। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠক শেষের পর রাত ৯টা নাগাদ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন। তার মধ্যে অন্যতম ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মী ও আধিকারিকের সংখ্যা সংখ্যা কমানো। ভারতের পাক দূতাবাসে অবস্থানকারী সেনা উপদেষ্টাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ বা ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ বলে গণ্য করা হবে। জবাবে একই পদক্ষেপ করেছে পাকিস্তানও।

এরই পাশাপাশি দু’তরফেই শুরু হয়েছে সামরিক প্রস্তুতিও। রাজস্থানের মরুভূমিতে ভারতীয় সেনার যুদ্ধ মহড়া চলছে। আরবে সাগরে ‘তৎপরতা’ বাড়িয়েছে ভারতীয় নৌসনা। জবাবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে আরব সাগর অঞ্চলে সামরিক নজরদারি বাড়িয়েছে পাকিস্তান। শুরু হয়েছে নৌমহড়া। ভূমি থেকে ভূমিতে ছোড়ার একটি ক্ষেপণাস্ত্রও পরীক্ষা করেছে তারা। এমনকি, মঙ্গলবার একটি ভারতীয় ড্রোন আকাশসীমা পেরোনোর পরে সেটিকে গুলি করে নামানোর দাবি করেছে পাক সেনা। এমনকি, পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির জন্য আকাশসীমা বন্ধ করেছে পাকিস্তান। আকাশসীমা বন্ধ থাকার কারণে যাতায়াতে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় বিমানগুলির বেশি সময় লাগছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানি বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা করেনি নয়াদিল্লি।

সংক্ষেপে
  • সংঘর্ষবিরতিতে রাজি ভারত এবং পাকিস্তান। গত ১০ মে প্রথম এই বিষয় জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে দুই দেশের সরকারের তরফেও সংঘর্ষবিরতির কথা জানানো হয়।
  • সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার পরেও ১০ মে রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গোলাবর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পাল্টা জবাব দেয় ভারতও। ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। তবে ১১ মে সকাল থেকে ভারত-পাক সীমান্তবর্তী এলাকার ছবি পাল্টেছে।
Pahalgam Terror Attack Pahalgam Incident Kashmir Terror Attack PM Narendra Modi Indian Army

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়।

  • সঙ্গে পান রোজ আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই -পেপার পড়ার সুযোগ।

  • এখন না পড়তে পারলে পরে পড়ুন, 'সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে।

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

SAVE 1%*
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।