Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Pinarayi Vijayan

কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে বাম বিজয়নের মাইক ১০ সেকেন্ড অচল, শুরু তদন্ত, নেপথ্যে ‘দোস্তি-কুস্তি’-অস্বস্তি?

প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীর স্মরণসভায় সিপিএমের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা ঘিরে এই বে-তালমিলে সর্বভারতীয় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রাদেশিক সঙ্কটের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই।

Kerala Cops file case for mic malfunction during CM Pinarayi Vijayan speech

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৩ ১৭:০৪
Share: Save:

মাইকের গোলযোগে ১০ সেকেন্ডের জন্য থামাতে হয়েছিল কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বক্তৃতা। আর তাতেই ‘ষড়যন্ত্রের’ গন্ধ পেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে ফেলল কেরল পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সাউন্ড সিস্টেমের যাবতীয় সামগ্রী। প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীর স্মরণসভায় সিপিএমের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা ঘিরে এই বে-তালমিলে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রাদেশিক সঙ্কটের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই।

কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা উমেন চান্ডি সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। সোমবার তাঁর স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কেরল প্রদেশ কংগ্রেস। তাতে যোগ দিয়েছিলেন কেরলের বাম ও গণতান্ত্রিক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য বিজয়ন। তিনি পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শুরু করার কিছু ক্ষণ পরেই বিগড়ে যায় মাইক। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আবার তা ঠিকও হয়ে যায়। প্রাক্তনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজের কথা বলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ব্যাপারটা ওখানেই থেমে যায়নি। অনুষ্ঠানের পর, মাইক কেন গোলমাল করল তা নিয়ে তদন্ত শুরু করল বাম সরকারের পুলিশ। ‘ছোট’ গোলযোগে এই ‘বাড়াবাড়ি’ প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই বিস্মিত।

পুলিশ অবশ্য কোনও রাজনৈতিক দল বা কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেনি। যিনি ওই অনুষ্ঠানে সাউন্ড সিস্টেমের দায়িত্বে ছিলেন, সেই রঞ্জিত স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘পোডিয়ামের সামনেই সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের ভিড় ছিল। মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা শুরু করা মাত্রই তাঁদের মধ্যে ঠেলাঠেলি শুরু হয়। সেই সময়েই এক চিত্র সাংবাদিকের ভারী ব্যাগ সাউন্ড সিস্টেমের উপর পড়ে যায়। তাতেই একটি সুইচ নীচের দিকে নেমে যাওয়ায় আওয়াজ কমে গিয়েছিল।’’ তাঁর দাবি, ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই আবার তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। সংবাদমাধ্যমকে রঞ্জিত এ-ও জানিয়েছেন, পুলিশ তাঁকে জানিয়েছে, পরীক্ষা করে তাঁর সাউন্ড সিস্টেমের যন্ত্রপাতি শিগগির ফেরত দিয়ে দেবে। তাঁর কথায়, ‘‘হতে পারে পুলিশ খতিয়ে দেখতে চাইছে বিষয়টি ইচ্ছাকৃত ঘটানো হয়েছিল কি না!’’

তবে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই গোটা ঘটনাকে এত সহজ করে দেখতে চাইছেন না। তাঁদের বক্তব্য, এর নেপথ্যে থাকতে পারে সর্বভারতীয় স্তরে তৈরি হওয়া বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। এই জোটের ফলে বাংলা বা কেরলের মতো রাজ্যে অনেকের পক্ষেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তৃণমূল শাসিত বাংলায় এই অস্বস্তিতে রয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেস (এবং তাদের জোট)। বাম শাসিত কেরলে আবার মূল লড়াইটাই সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যে। অনেকের মতে, রাজ্য রাজনীতির বাধ্যবাধকতার জায়গা থেকেই কেরল পুলিশকে দিয়ে এই রকম একটি আপাত-সাধারণ ঘটনা নিয়েও মামলা রুজু করানো হয়েছে। এই বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যেই যে, সর্বভারতীয় স্তরে যা হচ্ছে হোক, কেরলে কংগ্রেসকে এক চুলও জমি ছাড়া হবে না। এমনকি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্মরণসভায় ১০ সেকেন্ডের মাইক বিভ্রাট হলেও তা নিয়ে তদন্ত হবে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির ব্যক্তিগত সখ্য থাকলেও, কেরলের রাজনীতিতে সিপিএম-কংগ্রেস কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বললে চলে না।

মাসখানেক আগেই কেরলের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে সুধাকরণকে প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার করেছিল কেরল পুলিশ। এখন অবশ্য তিনি জামিনে মুক্ত। তার পর মাইককাণ্ড কেরলের রাজনীতিকে নতুন মাত্রা দিল। রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ এ-ও বলছেন, এর পিছনে আরও একটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কেরলের রাজ্য রাজনীতি যাতে বাম আর কংগ্রেসেই আবর্তিত হয়। বিজেপি যেন কোনও ভাবেই জমি না পায়!

তবে এই সব আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই পরিস্থিতি সামলাতে এগিয়ে এসেছেন স্বয়ং বিজয়ন। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বুধবার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন, এই তদন্ত যেন আর না-এগোয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Pinarayi Vijayan Kerala police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE