কর্নাটকের কংগ্রেসের সাংসদ ডি কে সুরেশ কুমার। ছবি: সংগৃহীত।
অন্তর্বর্তী বাজেটে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে বৈষম্য হয়েছে এবং যাবতীয় সুফল পেয়েছে উত্তর ভারত— এই অভিযোগ তুলে প্রয়োজনে দক্ষিণের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গড়ার দাবি জানিয়ে বিতর্ক তৈরি করলেন কর্নাটকের কংগ্রেসের সাংসদ ডি কে সুরেশ কুমার। আজ লোকসভার অধিবেশন বসলে বিষয়টি এথিক্স কমিটির কাছে পাঠানোর প্রস্তাব দেয় সরকার পক্ষ। অন্য দিকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বক্তব্য, ‘‘কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত আমরা এক দেশ, একই থাকব।’’
উত্তর ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের সংঘাত নতুন নয়। বিবাদের কারণ এত দিন মূলত ভাষা হলেও, ক্রমশ কেন্দ্রের থেকে অর্থপ্রাপ্তির প্রশ্নে বৈষম্যের অভিযোগ তুলছে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি। কংগ্রেস নেতা ডি শিবকুমারের ভাই, সুরেশের যুক্তি, কেন্দ্র জিএসটি, শুল্ক ও প্রত্যক্ষ করের টাকা দক্ষিণের রাজ্য থেকে সংগ্রহ করছে। অথচ সেই টাকার ভাগ দক্ষিণকে দেওয়া হচ্ছে না। সুরেশের দাবি, ‘‘দক্ষিণকে হকের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমাদের উন্নয়নের জন্য থাকা টাকা উত্তর ভারতে বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা অনুচিত। দক্ষিণের টাকায় দক্ষিণের উন্নয়ন হওয়া উচিত। যদি এখনই এ বিষয়ে সরব না হই, ভবিষ্যতে আমাদের আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানাতে হবে। হিন্দিভাষী উত্তর আমাদের সেই পথে ঠেলে দিচ্ছে।’’
কোন রাজ্য কেন্দ্রীয় করের কত অংশ পাবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে সেই রাজ্যের জনসংখ্যার উপরে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে শিক্ষার প্রসারের কারণে জনসংখ্যার হার নিম্নমুখী, যা জাতীয় গড়ের অনেক নীচে এবং উত্তর ভারত বা গো-বলয়ে জনসংখ্যার বৃদ্ধির চেয়ে অনেক কম। ফলে জনসংখ্যার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় করের যে বণ্টন হচ্ছে, তাতে মার খাচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে উপরে থাকা রাজ্যগুলি। ডি কে সুরেশদের মতে, ভাল কাজ করার শাস্তি পাচ্ছে দক্ষিণের রাজ্যগুলি। কর সংগ্রহ হচ্ছে বেশি। ফেরত আসছে কম। দক্ষিণের বাড়তি টাকা ব্যবহার হচ্ছে গো-বলয়ের রাজ্যগুলির উন্নয়নে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘ সময় ধরেই এই দাবিতে সরব যে, কেন্দ্রীয় করের
যথেষ্ট ভাগ দেওয়া হচ্ছে না রাজ্যকে। বঞ্চনার শিকার হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। দু’টি প্রকল্পে বকেয়া অর্থের দাবিতে তিনি ধর্নাও শুরু করেছেন কলকাতায়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনা ও বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং ৮ ফেব্রুয়ারি পিনারাই বিজয়নও দিল্লিতে ধর্নায় বসার পরিকল্পনা আগে থেকেই নিয়ে রেখেছেন।
আজ প্রশ্নোত্তর পর্বের পরেই সুরেশের মন্তব্যের সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী দাবি করেন, এ জন্য সনিয়া গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে হবে। কর্নাটকেরই সাংসদ জোশী বিষয়টি এথিক্স কমিটির কাছে পাঠানোর সুপারিশ করেন। তবে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈয়ের পাল্টা প্রশ্ন, সুরেশ ওই কথা সংসদের বাইরে বলেছেন। যা তিনি সংসদে বলেননি, তা কী ভাবে এথিক্স কমিটিতে আলোচনা হওয়া সম্ভব! কংগ্রেসের মতে, কোনও ভাবেই বিষয়টিকে এথিক্স কমিটিতে পাঠানো যায় না।
পাল্টা যুক্তিতে সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেন, প্রত্যেক সাংসদ সংবিধানের নামে শপথ নেন। সুরেশ দেশভাগের কথা বলে সংবিধানের অপমান করেছেন। তাই বিষয়টি এথিক্স কমিটিতে যাওয়া উচিত। শাসক শিবিরের কথায়, এক জন সাংসদ দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা রক্ষার পরিবর্তে যদি ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-এর সুরে ভারত ভাঙার কথা বলেন, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই ওই সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নচেৎ ভুল বার্তা যাবে।
এ দিকে তাঁর নিজের রাজ্যের, নিজের দলের সাংসদ আলাদা দেশ গড়ার যুক্তি দেওয়ায় রাজ্যসভাতেও শাসক শিবিরের কড়া আক্রমণের মুখে পড়েন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। পরে তিনি এক্স সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত আমরা এক। এক দেশই থাকব। এর জন্যই ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী নিজের জীবন দিয়েছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy