মানালি থেকে মুম্বইয়ের পথে নিরাপত্তারক্ষী বেষ্টিত কঙ্গনা রানাউত। বুধবার চণ্ডীগড়ের বিমানবন্দরে। পিটিআই
মহারাষ্ট্রের শাসক শিবিরের সঙ্গে তীব্র সংঘাত, পালি হিলে তাঁর অফিস ভাঙা এবং তাতে কোর্টের স্থগিতাদেশ— এ সবের মধ্যেই আজ দুপুরে হিমাচলপ্রদেশ থেকে মুম্বইয়ে ফিরলেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। বাণিজ্যনগরীতে পা রাখার আগে থেকেই রণং দেহি মূর্তিতে ছিলেন তিনি। পরপর টুইটে নিশানা করতে থাকেন শিবসেনা নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে। মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর টুইট-হুঁশিয়ারি, ‘‘আজ আমার ঘর ভেঙেছে, কাল তোর অহঙ্কার ভাঙবে।’’
এই আবহে মুম্বইয়ের খার এলাকায় কঙ্গনার ফ্ল্যাটে ‘অবৈধ’ নির্মাণ ভাঙতে তৎপর হয়েছে শিবসেনা পরিচালিত বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি)। নগর দায়রা আদালতে এ ব্যাপারে আর্জিও জানিয়েছে তারা। এ নিয়েও শিবসেনা ও রাজ্য সরকারকে এক হাত নেন কঙ্গনা— বিজেপি শিবিরের ঘনিষ্ঠ বলেই যিনি পরিচিত। যাঁকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এক ফ্রেমে দেখা গিয়েছে একাধিক বার।
অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর থেকেই মহারাষ্ট্র সরকার ও মুম্বই পুলিশের বিরুদ্ধে সরব কঙ্গনা। এ নিয়েই শিবসেনার সঙ্গে অভিনেত্রীর সংঘাতের সূত্রপাত। এরই মধ্যে কঙ্গনার অফিসে বেআইনি নির্মাণের নোটিস ঝুলিয়ে দেয় বিএমসি। আজ সকালে বুলডোজ়ার, আর্থ মুভার নিয়ে অভিনেত্রীর অফিস ‘মণিকর্ণিকা ফিল্মস’-এ হাজির হন বিএমসির আধিকারিকেরা। সঙ্গে বিশাল পুলিশ বাহিনী।
আরও পড়ুন: ইন্দ্রাণীর সঙ্গে একই জেলে রিয়া
অফিস ভাঙা শুরু হতেই বম্বে হাইকোর্টে যান কঙ্গনা। ভার্চুয়াল শুনানিতে অভিনেত্রী জানান, তাঁর কাছে নির্মাণ সংক্রান্ত সব কাগজপত্র রয়েছে। অফিস ভাঙার কাজে স্থগিতাদেশ দিয়ে হাইকোর্ট বলেছে, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, যে ভাবে ভাঙার কাজ এগিয়েছে তা আইনসম্মত নয়। এই তৎপরতা যদি বিএমসি অন্য বেআইনি নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রে দেখাত, তা হলে মুম্বই শহরের চেহারা অন্য রকম হত। বিএমসি-র কাজ বন্ধের নোটিসের নকশাটিও অত্যন্ত অস্পষ্ট।
হাইকোর্টে ধাক্কা খাওয়ার পরে বেলা গড়াতেই কঙ্গনার খারের ফ্ল্যাট নিয়ে তৎপর হয় বিএমসি। ওই ফ্ল্যাটের বেআইনি অংশ ভাঙতে চেয়ে তারা নগর দায়রা আদালতের দ্বারস্থ হয়। রান্নাঘর, বারান্দা-সহ ফ্ল্যাটের ৮ জায়গায় বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে দু’বছর আগে অভিনেত্রীকে নোটিস দিয়েছিল পুরসভা। কঙ্গনার আবেদনে তখন স্থগিতাদেশ দিয়েছিল আদালত। আজ বিএমসি-র আর্জি, সেই স্থগিতাদেশ তুলে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার অনুমতি দেওয়া হোক।
কঙ্গনার অফিস ভাঙার তোড়জোড়। বুধবার মুম্বইয়ে। পিটিআই
‘মণিকর্ণিকা ফিল্মস’ ভাঙায় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের পরেই একের পর এক টুইট করতে থাকেন কঙ্গনা। উদ্ধবকে নিশানা করে ১ মিনিট আট সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো বার্তা টুইট করেন তিনি। তাতে তিনি বলেছেন, ‘‘উদ্ধব ঠাকরে তুঝে কেয়া লাগতা হ্যায়… উদ্ধব ঠাকরে, তোর কী মনে হয়, ফিল্ম মাফিয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার ঘর ভেঙে বদলা নিবি! আজ আমার ঘর ভেঙেছে, কাল তোর অহঙ্কার ভাঙবে। … আমি জানতাম, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সঙ্গে কী হয়েছিল। আজ তা উপলব্ধি করলাম।’’ ‘মণিকর্ণিকা ফিল্মস’ ভাঙার পাঁচটি ভিডিয়ো ফুটেজ তিনি টুইটারে পোস্ট করেছেন। তাঁর অফিস ভাঙার ছবি টুইট করে লিখেছেন ‘পাকিস্তান’। তাঁর অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকর্মী ও পুরকর্মীদের ছবি টুইট করে লিখেছেন ‘বাবর ও তার সেনা’। তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘‘উদ্ধব ঠাকরে ও কর্ণ জোহরের গ্যাং এসো, আমার কর্মস্থল ভেঙেছ, ফ্ল্যাট ভাঙবে, তার পরে আমাকে আঘাত করবে…।’’
আরও পড়ুন: উৎসব-মেলায় রমরমা, ১৬৫ গ্রামে রিয়া জেলে
শিবসেনার সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে আগেই মুম্বইকে ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর’ বলেছিলেন কঙ্গনা। শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত তাঁকে মুম্বইয়ে ঢুকতে না-দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। আজ মুম্বই পৌঁছে তাঁর টুইট, ‘‘আমি আমার শত্রু চিনতে ভুল করি না। এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। এই কারণেই আমার মুম্বই এখন পাক অধিকৃত কাশ্মীর।’’
আজ সকালে কঙ্গনা টুইটারে লিখেছিলেন, ‘‘মুম্বই দর্শনের জন্য যখন বিমানবন্দরে যাচ্ছি, তখন মহারাষ্ট্র সরকার ও তাদের গুন্ডারা আমার সম্পত্তির দিকে যাচ্ছে। তারা বেআইনি ভাবে অফিস ভাঙবে। কথা দিচ্ছি, মহারাষ্ট্রের গর্বের জন্য রক্ত দেব। এতে আমার আত্মবিশ্বাস ক্রমশ বেড়েই চলেছে।’’ উদ্ধবকে হুমকির ভিডিয়োর শেষে ‘জয় মহারাষ্ট্র’ও বলেন অভিনেত্রী। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, অযোধ্যা ও কাশ্মীর নিয়ে ছবি বানাবেন তিনি। মহারাষ্ট্রে গণতন্ত্র নেই বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। মুম্বই বিমানবন্দরে আজ কঙ্গনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান শিবসেনার কর্মী-সমর্থকেরা। ফলে বিশেষ গেট দিয়ে তাঁকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।
কঙ্গনা-বিতর্কের আঁচ পড়ছে মহারাষ্ট্রের শাসক জোটেও। বিএমসি কর্তৃপক্ষের অভিনেত্রীর অফিস ভাঙতে যাওয়া নিয়ে অসন্তোষ গোপন করেননি এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। তিনি মনে করেন, বিএমসি অভিনেত্রীকে ‘অপ্রয়োজনীয় প্রচার’ পাইয়ে দিচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘বেআইনি নির্মাণ মুম্বইয়ে নতুন কিছু নয়। চলতি বিতর্কের আবহে বিএমসি-র এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আমজনতার কাছে ভুল বার্তা যাবে। সংবাদমাধ্যম এটাকে বড় করে দেখাচ্ছে। আমাদের একে উপেক্ষা করাই উচিত।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আজই উদ্ধবের বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন শরদ।
কঙ্গনার পাশে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস বলেছেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু তা যেন সব বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রেই হয়। সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বলে তাঁকেই নিশানা করা হচ্ছে এমনটা হওয়া উচিত নয়। এটা কাপুরুষতা, বদলা নেওয়ার মানসিকতা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy