বাড়ি ফিরে মা ও সন্তানদের সঙ্গে কাফিল খান। ছবি: পরিবার সূত্রে
আট মাস জেলবন্দি ছেলেকে চোখে দেখেননি। কিন্তু তার জন্য কান্নাকাটি করার সময় কোথায় নজ়হত পারভিনের! বরং মেজো ছেলে, চিকিৎসক কাফিল খানের মুক্তির জন্য এই কোভিড পরিস্থিতিতেও দিনের পর দিন আদালতের চক্কর কেটেছেন বছর পঁয়ষট্টির এই বৃদ্ধা। মঙ্গলবার মধ্যরাতে কাফিলের মুক্তির পরেও তাঁর সেই অপেক্ষা শেষ হয়নি। বরং ছেলেকে দেখতে গাড়িতে পাড়ি দিতে হয়েছে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার! দীর্ঘ লড়াই শেষে বিধ্বস্ত নজ়হত ধরা ধরা গলায় শুধু বলতে পারছেন, ‘‘ওকে দেখার জন্য বড্ড ব্যাকুল হয়ে ছিলাম।’’
আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএএ-বিরোধী বক্তৃতার পরে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার জেলে পুরেছিল কাফিলকে। তার পরেই লড়াই শুরু হয় মা নজ়হতের। ছেলেকে ছাড়াতে আলিগড়ের নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট— সর্বত্র কড়া নেড়েছেন। অসুস্থ হলেও হাল ছাড়েননি।
নজ়হতের বড় ছেলে আদিল বলছেন, ‘‘প্রথমে আলিগড়ের নিম্ন আদালত, তার পরে ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট, সেখান থেকে মার্চে এলাহাবাদ হাইকোর্ট, আবার সুপ্রিম কোর্ট, ফের হাইকোর্ট— গত আট মাস ধরে এই চলেছে। শত কষ্ট হলেও মা-ও সর্বত্র ঘুরে বেরিয়েছেন।’’ আর জয়পুরের হোটেলে বসে কাফিল সকালে বলেছিলন, ‘‘করোনা-কালে ঘরে থাকার বদলে আদালতে ঘোরা, উকিলের পায়ে ধরা— সবই করেছেন মা। বড্ড কষ্ট পেয়েছেন। এই আট মাসের লড়াইটা লড়লেন মা-ই।’’
আরও পড়ুন: এনকাউন্টার হয়নি বলে ‘কৃতজ্ঞ’ কাফিল খান
তবে জেল থেকে মধ্যরাতে মুক্তির পরেও বাড়ি ফেরা হয়নি কাফিলের। এনকাউন্টার-এর আশঙ্কায় তড়িঘড়ি কাফিলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজস্থানের জয়পুরে। আর ছেলেকে দেখার আশায় বৌমা, নাতিনাতনি-সহ গাড়িতে সেখানেই গিয়েছেন মা নজ়হত। মঙ্গলবার দুপুর ২টোয় বেরিয়েছিলেন গোরক্ষপুরের বাড়ি থেকে। রাত ৮টায় লখনউ পৌঁছে, রাতটা কোনও রকমে কাটিয়েই ফের যাত্রা শুরু। জয়পুরে পৌঁছতে পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে। আদিল বলছেন, ‘‘আমার মা জমিদার পরিবারের মেয়ে, সহজে হারতে জানেন না। এই বয়সে অসুস্থ শরীরেও যে মা হাসিমুখে গাড়িতে এতটা পথ পাড়ি দিলেন, এটাও কী কম কথা!’’
নাছোড় নজ়হতের লড়াই অবশ্য এই প্রথম নয়। স্বামীর মৃত্যুর পরে তিন ছেলেকে বড় করা, তাঁদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়র হওয়ার পথ করে দেওয়া— সবই করেছেন একার হাতে। এমনকি, বছরদু’য়েক আগে ছোট ছেলে কাশিম গুলি খেয়ে যখন প্রায় মরতে বসেছেন, তখনও এক ফোঁটা চোখের জল ফেলতে দেখা যায়নি নজ়হতকে। কাফিল বলছেন, ‘‘রাত সাড়ে তিনটের সময়ে একা একা রিকশা খুঁজে নিয়ে তিন কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন মা। আইসিইউয়ে ভাইয়ের পাশে বসে সারা রাত প্রার্থনা করে গিয়েছিলেন। একটুও কাঁদেননি। মায়ের মনের জোর সাংঘাতিক।’’
আরও পড়ুন: পাবজি-সহ ১১৮টি অ্যাপ নিষিদ্ধ
এমন হার-না-মানা মানসিকতার মায়ের ছেলে হয়ে তাই পিছু হটতে রাজি নন কাফিলও। আপাতত কয়েক দিন পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে অসম-বিহারের বন্যাধ্বস্ত এলাকায় জনসেবামূলক কাজে ফিরতে চান তিনি। সেই সঙ্গে যোগী সরকারের কাছে নিজের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদনও করবেন। একরোখা কাফিল বলছেন, ‘‘ওরা তো চাইবেই যে পায়ে পড়ে ক্ষমা চাই। কিন্তু ভয় পাওয়ার লোক আমি নই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy