রাজমাতা (বাঁ দিকে) ও ইন্দিরা গাঁধী। —ফাইল চিত্র
ঠাকুরমা বেঁচে থাকলে আজ কী খুশিই না হতেন!
বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া নিজে ১৯৬৭ সালে কংগ্রেস ছেড়ে জনসঙ্ঘে যোগ দিয়েছিলেন। সে বারও এই দলত্যাগের ফলে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকার পড়ে যায়। পরে জরুরি অবস্থায় জেল খাটেন রাজমাতা। ১৯৯৮-তে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সময়ে বিজেপির উপ-সভানেত্রী ছিলেন তিনি। ছেলে মাধবরাও যখন জনসঙ্ঘ ছেড়ে ১৯৮৪-র লোকসভা ভোটে গ্বালিয়রে অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন ছেলের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছেলেকে ক্ষমা করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর নাকি আশা ছিল, নাতি জ্যোতিরাদিত্য এক দিন বাবার ভুল শুধরে নেবেন।
মাধবরাওয়ের ৭৫তম জন্মবার্ষিকীতে আজ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করে বিজেপির দিকে পা বাড়ানোর পরে পিসি যশোধরা রাজে সিন্ধিয়া বললেন, “রাজমাতার রক্ত রাষ্ট্রের কল্যাণে এই সিদ্ধান্ত নিল। জ্যোতিরাদিত্যর কংগ্রেস ছাড়ার সিদ্ধান্তকে মন থেকে স্বাগত জানাচ্ছি।” বিজয়ারাজের আর এক কন্যা বসুন্ধরা রাজেও বিজেপিতে। রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরার পুত্র দুষ্মন্তও বিজেপি সাংসদ। কিন্তু জ্যোতিরাদিত্য এত দিন কংগ্রেসে থেকে গিয়েছিলেন। পরিবারে ফাটলও থেকে গিয়েছিল। জ্যোতিরাদিত্য আজ ঠাকুমার ‘ইচ্ছাপূরণ’-এর পথে এগোলেন। যশোধরার মন্তব্য, “এ বার সব দূরত্ব ঘুচে গেল”।
কিন্তু আর এক ঠাকুমা কি খুশি হলেন?
কংগ্রেস শিবির বলছে, দলের অন্দরে বৃদ্ধতন্ত্র বনাম নবীনতন্ত্রের লড়াইয়ে ইন্দিরা গাঁধীর ঠিক উল্টো পথে হাঁটছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। ইন্দিরার সময়েও বৃদ্ধ নেতারা দলের রাশ নিজেদের হাতে রাখার চেষ্টা করছিলেন। কে কামরাজ, মোরারজি দেশাইদের সঙ্গে মতান্তরের জেরে ১৯৬৯-এ দল ভেঙে বেরিয়ে যান ইন্দিরা। বৃদ্ধরা কংগ্রেস (ও)-তে থেকে যান। ইন্দিরার সঙ্গে ছিলেন মূলত নবীন প্রজন্মের নেতারা। কিন্তু সনিয়া- রাহুলের জমানায় বৃদ্ধ নেতাদের হাতেই রাশ থাকছে। নবীন প্রজন্মের নেতারা দলে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন।
আরও পড়ুন: হার্ভার্ডের অর্থনীতির স্নাতক, স্ট্যানফোর্ডের এমবিএ থেকে অন্যতম ধনী মন্ত্রী হন জ্যোতিরাদিত্য
জ্যোতিরাদিত্যর সঙ্গে শুধু যে মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ-দিগ্বিজয় সিংহদের বিবাদ বেধেছিল, তা নয়। কংগ্রেস সূত্রের খবর, কংগ্রেসের নেতৃত্বহীনতা ও দিশাহীনতা নিয়েও হতাশ হয়ে পড়ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। মধ্যপ্রদেশের ভোটের পরে কমল নাথ যখন মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য নির্বাচিত হন, তখন রাহুল গাঁধী কমল ও সিন্ধিয়াকে দু’পাশে নিয়ে, দু’জনের হাত জড়িয়ে ধরে ছবি তুলে টুইট করেছিলেন। সঙ্গে টলস্টয়ের বিখ্যাত উক্তি, ‘টু মোস্ট পাওয়ারফুল ওয়ারিয়র্স আর পেশেন্স অ্যান্ড টাইম’।
কিন্তু রাজ্য সভাপতির পদের জন্য অপেক্ষা করে করে আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারেননি জ্যোতিরাদিত্য। লোকসভা ভোটের সময় তাঁকে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যেখানে কংগ্রেসের কোনও সংগঠনই নেই। নির্বাচনে ভরাডুবির পরে দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। কিন্তু তাঁকে বোঝানো দূর অস্ত, গোটা উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বই অলিখিত ভাবে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার হাতে তুলে দেওয়া হয়। সিন্ধিয়া গত নভেম্বরেই টুইটারে নিজের প্রোফাইল থেকে কংগ্রেস নেতার পরিচয় মুছে ফেলেছিলেন। এর পর মধ্যপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভা নির্বাচনেও তাঁকে প্রার্থী করা হবে না বুঝে দল ছাড়ার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেন।
উল্টো দিকে বিজেপি নীরবে জ্যোতিরাদিত্যকে দলে নেওয়ার পথে এগিয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে থেকেই শিবরাজ সিংহ চৌহান তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। গত সপ্তাহে তিনি গোটা পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানানোর পরে, তাঁরা মাঠে নামেন। সোমবার রাতে অমিত শাহ সবুজ সঙ্কেত দেন।
মতাদর্শগত দিক থেকেও কংগ্রেসের বিপরীত অবস্থান নেওয়া শুরু করেছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। রাম জন্মভূমি আন্দোলনের সময় বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে বলেছিলেন, এ বার কোনও আক্ষেপ ছাড়াই মরতে পারবেন। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস নেতাদের দাবি, অযোধ্যা বিতর্কে জ্যোতিরাদিত্যের অবস্থানও বিজেপির দিকে ঝুঁকে ছিল। কাশ্মীরে ৩৭০ রদ করার ক্ষেত্রেও সিন্ধিয়া প্রকাশ্যে এর পক্ষে অবস্থান নেন। তখনই দেওয়াল লিখন পড়ে ফেলেছিলেন অনেকে।
মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা অরুণ যাদবের কথায়, “স্বাধীনতা সংগ্রামে সিন্ধিয়া পরিবার ব্রিটিশরাজ ও তার সমর্থকদের সাহায্য করেছিল। আজ জ্যোতিরাদিত্য ফের নিজের স্বার্থে ক্ষমতার জন্য সেই ঘৃণ্য মতাদর্শের সঙ্গে এক সারিতে দাঁড়িয়ে পড়লেন।” মানছেন না জ্যোতিরাদিত্য-পুত্র মহানআর্যমান সিন্ধিয়া। তাঁর দাবি, “ইতিহাস সাক্ষী যে, আমার পরিবার কোনও দিনই ক্ষমতালোভী ছিল না। আমি বাবার জন্য গর্বিত যে উনি নিজের জন্য এই অবস্থান নিয়েছেন। ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আসতে সাহস দরকার হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy