গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বেসুরে বাজছিলেন লোকসভা ভোট মেটার পর থেকেই। এ বার আরও তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত সামনে এল জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার তরফ থেকে। ১৭ বছর ধরে গুণা-শিবপুরী কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন যিনি, মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের সেই অন্যতম প্রধান স্তম্ভ জ্যোতিরাদিত্য এ বার সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের পরিচয় বদলে ফেললেন। কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্কের ইতিহাস অমিল এই নতুন পরিচয়ে। ফলে মনমোহন জমানার মন্ত্রীকে নিয়ে জল্পনা জোরদার দিল্লির রাজনৈতিক শিবিরেও।
জ্যোতিরাদিত্যের টুইটার হ্যান্ডলে তাঁর পরিচয়ের জায়গায় আগে লেখা ছিল— প্রাক্তন সাংসদ, গুণা (২০০২-২০১৯), প্রাক্তন শক্তি মন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্ব); প্রাক্তন বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী; প্রাক্তন তথ্যপ্রযুক্তি ও ডাক প্রতিমন্ত্রী।
টুইটারে নিজের পরিচয় থেকে এই সব কিছুই সরিয়ে দিয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। লিখেছেন— জনসেবক এবং ক্রিকেট উৎসাহী।
গ্বালিয়রের মহারাজা জ্যোতিরাদিত্যর সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক বংশ পরম্পরায়। তাঁর বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়া ছিলেন রাজীব গাঁধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বিজেপির পূর্বসূরি জনসঙ্ঘের টিকিটেই তিনি প্রথম বার গুণা-শিবপুরী থেকে জিতেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার পরে দীর্ঘ দিন গুণা এবং গ্বালিয়র থেকে জিতে লোকসভায় থেকেছেন কংগ্রেস সাংসদ হিসেবে। মন্ত্রিত্বও করেছেন। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সময়েও তিনি গুণার কংগ্রেস সাংসদ।
জ্যোতিরাদিত্যও তাই শুরু থেকেই গাঁধী পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রাহুল গাঁধীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হিসেবে ধরা হত কংগ্রেসের যে তরুণ ব্রিগেডকে, তার প্রথম দু’টি নাম ছিল মধ্যপ্রদেশের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এব রাজস্থানের সচিন পায়লট।
এ হেন জ্যোতিরাদিত্য টুইটার হ্যান্ডলে নিজের পরিচয়ের জায়গা থেকে সেই সব কিছু বাদ দিয়ে দিলেন, যা তিনি কংগ্রেসে থাকার সুবাদে অর্জন করেছিলেন। প্রাক্তন সাংসদ বা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী— দুটোই কংগ্রেসের টিকিটে বা কংগ্রেসের তরফ থেকে। ওই দুই পরিচয় টুইটার থেকে মুছে দিয়ে জ্যোতিরাদিত্য কী বোঝাতে চাইলেন? কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্ক তিনি এ বার মুছতে চাইছেন— এমন ইঙ্গিতই কি দিলেন?
রাহুল গাঁধীর সঙ্গে জ্যোতিরাদিত্য। —ফাইল চিত্র।
আরও পডু়ন: মহা-নাটকে ফের ‘নৈশ অভিযান’! গুরুগ্রামের হোটেল থেকে ৪ বিধায়ককে ‘উদ্ধার’ করল এনসিপি
গ্বালিয়রের মহারাজার তরফ থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, টুইটারে নিজের পরিচয়ে এই বদল নতুন কিছু নয়, মাসখানেক আগেই করা হয়েছে। খুব লম্বা পরিচয় দেওয়া হয়েছে— বার বার এই রকম ফিডব্যাক আসছিল বলেই তিনি বদলেছেন। দাবি জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার। কিন্তু গত ছ’মাসে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া যে ভাবে বার বার বেসুরে বেজেছেন, তার প্রেক্ষিতেই টুইটারে এই পরিচয় বদলকে অত সহজ চোখে দেখতে চাইছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই জ্যোতিরাদিত্যের ক্ষোভ বাড়তে শুরু করেছিল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে হবেন? তিনি, নাকি কমল নাথ? তা নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কমল নাথকেই বেছে নেয় এআইসিসি। দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে জ্যোতিরাদিত্যকে প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। ক্ষোভ থাকলেও ভোটের আগে তা খুব একটা প্রকাশ করেননি গ্বালিয়রের মহারাজা। কিন্তু জেতার পরে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি নিয়ে কমল আর জ্যোতিরাদিত্যর মধ্যে ফের দড়ি টানাটানি শুরু হয়। সে বারও কমল নাথের নামেই সিলমোহর দেয় কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।
কমল নাথ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যাওয়ার পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদটা অন্তত তাঁকে দেওয়া হবে— এই আশা জ্যোতিরাদিত্যের ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে কমল নাথ প্রায় এক বছর কাটিয়ে ফেলার পরেও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ পাননি।
আরও পডু়ন:
জ্যোতিরাদিত্যর অনুগামী বিধায়করা একাধিক বার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন তাঁকে সভাপতি করার দাবি তুলে। গ্বালিয়রের মহারাজা আর ছিন্দওয়াড়ার অধীশ্বরের মধ্যে সম্পর্ক এতটাই তিক্ততায় পৌঁছেছে যে, কমল নাথ সরকারের নানা কাজের সমালোচনা প্রকাশ্যেই শুরু করেছেন জ্যোতিরাদিত্য। ভোটের আগে মধ্যপ্রদেশে কৃষিঋণ মকুবের যে প্রতিশ্রুতি কংগ্রেস দিয়েছিল, তা কমল নাথ পালন করছেন না— এমন গুরুতর অভিযোগও জ্যোতিরাদিত্য তুলেছেন। কিন্তু কমল মাথা নোয়াননি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ এখনও তিনি ছাড়েননি।
জ্যোতিরাদিত্য কেন লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই বেসুরে বাজতে শুরু করেছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের খুব একটা সংশয় নেই অতএব। জম্মু-কাশ্মীর থেকে মোদী সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করতেই কংগ্রেস তীব্র বিরোধিতা শুরু করেছিল। কিন্তু দলের লাইনের পুরো বিপরীতে হেঁটে জ্যোতিরাদিত্য মোদী সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেন। টুইটও করেন। তখনই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল যে, কংগ্রেস ছাড়তে পারেন মাধবরাও-পুত্র। এ বার টুইটার হ্যান্ডল থেকে যে ভাবে তিনি ছেঁটে ফেলেছেন কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ইতিহাস বহনকারী ভূমিকাগুলি, তাতে সে জল্পনা আরও বেড়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে টুইটার হ্যান্ডলে নিজের নতুন পরিচিতিতে জ্যোতিরাদিত্য কিন্তু ‘জনসেবক’ শব্দটি রেখেছেন। কোনও পুরনো সম্পর্ক থাক বা না থাক, রাজনীতির সঙ্গে যে তাঁর সম্পর্ক থাকবে, সেটাই বোধ হয় ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy