বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে নাড্ডাকে কার্যকরী সভাপতি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।—ছবি পিটিআই।
তাৎপর্যপূর্ণ সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত বিজেপির। জগৎপ্রকাশ নাড্ডাকে কার্যকরী সভাপতি করল দেশের শাসক দল। স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সভাপতি পদ থেকে সরছেন না অমিত শাহ।
সোমবার বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে নাড্ডাকে কার্যকরী সভাপতি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। দলের তরফে এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রাক্তন সভাপতি তথা দেশের বর্তমান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেছেন, ‘‘অমিত শাহজির নেতৃত্বে বিজেপি অনেকগুলো নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। কিন্তু দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পরে তিনি নিজেই চেয়েছিলেন যে, বিজেপি সভাপতির দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়া হোক।’’ সেই কারণেই নাড্ডাকে কার্যকরী সভাপতি পদে বেছে নেওয়া হল বলে রাজনাথ জানিয়েছেন। কিন্তু অমিত শাহ-ই যে দলের শীর্ষ পদে থাকছেন, তা-ও রাজনাথ স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন অমিত শাহ। শুধু তাই নয়, মোদী মন্ত্রিসভায় এখন তিনি কার্যত সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড। একগুচ্ছ মন্ত্রিগোষ্ঠীর মাথাতেও তিনি।
এ বারের নির্বাচনের আগে বিজেপি যে ইস্তাহার প্রকাশ করেছিল, তার রূপায়ণের পথে এগোতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে বিরাট দায়িত্ব নিতে হবে। জম্মু-কাশ্মীরকে নিরন্তর রক্তাক্ত করতে থাকা সন্ত্রাসকে নির্মূল করা হোক, উপত্যকা থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করা হোক, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কঠোর করা হোক— একের পর এক চ্যালেঞ্জ অমিত শাহের অপেক্ষায় থাকবে আগামী পাঁচ বছরে। অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের বিষয়েও বিজেপি-কে এ বার এগোতেই হবে। রামমন্দির নিয়ে জোরদার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তো ছিলই। ভোট মেটার পর থেকে সঙ্ঘও চাপ বাড়াচ্ছে ক্রমশ। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা এবং সঙ্ঘকে সন্তুষ্ট রাখা যদি বিজেপির লক্ষ্য হয়, তা হলে অমিত শাহের মন্ত্রককে অনেকখানি দায়িত্ব নিতে হবে।
আরও পড়ুন: সদলবলে বিজেপিতে বিধায়ক সুনীল, তৃণমূলের হাতছাড়া আরও এক পুরসভা
এত গুরুভার বহন করে এবং এত রকম চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চালানোর পাশাপাশি দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবেও অমিত শাহ কাজ চালিয়ে যাবেন— এমনটা খুবই শক্ত। তা ছাড়া বিজেপি বরাবরই ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতিই অনুসরণ করে এসেছে। বাজপেয়ী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পরে লালকৃষ্ণ আডবাণী দলের সভাপতি পদ ছেড়েছিলেন। প্রথম মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পরে রাজনাথ সিংহকেও দলের সভাপতি পদ ছাড়তে হয়েছিল। তাই এ বার অমিত শাহকেও বিজেপি সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে, রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ এই ধারণাই করেছিল। কিন্তু খোদ নরেন্দ্র মোদী চান, দলের এক নম্বর এবং সরকারের দু’নম্বর হিসেবে একসঙ্গেই কাজ চালিয়ে যান অমিত শাহ। বিজেপি সূত্রের খবর তেমনই। আরও সংক্ষেপে বলতে গেলে, দল ও সরকারের রাশটা পুরোপুরি নিজেদের হাতে রাখতে চায় মোদী-শাহ জুটি।
আরও পড়ুন: অধীরের পিঠ চাপড়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘এই হলেন আসল যোদ্ধা’
তাই এ বার বিজেপি ব্যতিক্রমী পথে হাঁটল। সভাপতি পদ থেকে অমিত শাহকে সরানো হল না। এত দিন দলের অন্যতম সহ-সভাপতি হিসেবে কাজ চালিয়ে আসা জগৎপ্রকাশ নাড্ডাকে কার্যকরী সভাপতি পদে বসিয়ে দেওয়া হল। হিমাচল প্রদেশের নেতা নাড্ডা বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীকরণে মোদী-শাহের একনিষ্ঠ অনুগামী হিসেবেই পরিচিত। তাঁকে কার্যকরী সভাপতি করে দু’টি বার্তা দেওয়া হল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত। প্রথমত, এতে দলকে এই বার্তা দেওয়া গেল যে, সরকারের কাজ দেখভাল করতে গিয়ে দলের কাজ অবহেলিত হবে, এমনটা ভাবার কোনও অবকাশ নেই। দ্বিতীয়ত, এ কথাও বুঝিয়ে দেওয়া গেল যে, সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি দলে শেষ কথাটা এখনও অমিত শাহই বলবেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy