তীর্থে যাওয়া বাঙালি পুণ্যার্থীদের একটা বড় অংশের পছন্দ চারধাম যাত্রা। ফাইল চিত্র ।
হাড়কাঁপানো শীতের মরসুম শেষ হলেই বাঙালিদের তীর্থযাত্রায় যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। জোশীমঠের ভূমি বসে যাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ডের কিছু স্থানে যাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ফাটল দেখা গিয়েছে নৈনিতাল এবং মুসৌরির মতো শহরে। সব মিলিয়ে, বাঙালির হিমালয় দর্শন বর্তমানে প্রশ্নের মুখে।
ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির তালিকায় যেমন রয়েছে পুরী, বেনারস, হরিদ্বার, হৃষীকেশ, তেমনই থাকে গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, বদ্রীনাথ এবং কেদারনাথের মতো চারধাম যাত্রা। তালিকায় থাকে কর্ণপ্রয়াগ, উত্তরকাশী, গুপ্তকাশী, নৈনিতাল এবং মুসৌরির মতো শহরও। শীতের সময় এই সমস্ত জায়গার বেশিরভাগেরই তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির কাছাকাছি থাকে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নীচে নেমে তুষারপাতও হয়। শীতে বরফ দেখতে যাওয়া যেমন বাঙালির প্রিয়, তেমনই শীত কেটে গেলেও এই সব জায়গায় গিয়ে প্রকৃতিকে উপভোগ করার জন্য পা বাড়ায় ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি। তীর্থে যাওয়া বাঙালি পুণ্যার্থীদের একটা বড় অংশের পছন্দ চারধাম যাত্রা। আর যে যাত্রার অন্যতম অবিচ্ছেদ্য অংশ জোশীমাঠ। বেশির ভাগ পুণ্যার্থীই বদ্রীনাথ যাওয়ার পথে গাড়োয়াল হিমালয়ের এই জনপদকে বিশ্রামস্থল হিসাবে বেছে নেন। কিন্তু সেই জনপদ বর্তমানে ‘ধ্বংসের’ মুখে। হঠাৎ করেই ধসে যেতে শুরু করেছে সেই জনপদের ভূমি। ২ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ওই শহরের প্রায় ৯০০ বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। চওড়া ফাটল দেখা দিয়েছে রাস্তাঘাট, জমি এবং স্থানীয় মন্দিরগুলিতেও। রাতারাতি ঘরছাড়া হয়েছেন বহু পরিবার।
পাশাপাশি আশঙ্কা দেখা দিয়েছে উত্তরাখণ্ডের আরও কয়েকটি পাহাড়ঘেরা শহরে। যার মধ্যে রয়েছে কর্ণপ্রয়াগ, উত্তরকাশী, গুপ্তকাশী, হৃষীকেশ, নৈনিতাল এবং মুসৌরির মতো হিমালয়ের কোলে থাকা শহরগুলি। সেখানকার বাসিন্দাদের উদ্বেগ, খুব শীঘ্রই ভূমিধসের মুখে পড়ে জোশীমঠের মতো এই এলাকাগুলিতেও বহু বাড়ি এবং রাস্তায় ফাটল দেখা দিতে পারে। হয়ে উঠতে পারে ‘বসবাসের অযোগ্য’। আর এই পরিস্থিতির জন্য জোশীমঠের সাধারণ মানুষদের মতো এই শহরগুলির সাধারণও উন্নয়নকেই দায়ী করেছেন।
জোশীমঠের মানুষদের দাবি, ৫২০ মেগাওয়াট তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণাধীন টানেলে জলাধার ফেটে যাওয়ার পরে সঙ্কট বেড়েছে জোশীমঠের। যদিও প্রশাসন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জোশীমঠ থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে কর্ণপ্রয়াগ। সেখানেও বেশ কয়েকটি বাড়িতে বড় ফাটল তৈরি হয়েছে। এক ডজনেরও বেশি পরিবার পৌরসভার আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়েছেন। সেই শহরের একদম কাছেই জোরকদমে চলছে হৃষীকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেললাইন এবং সব আবহাওয়ায় চারধাম যাওয়া সুনিশ্চিত করতে পরিকল্পনা করা রাস্তার কাজ। চারধাম যাত্রায় সাধারণের কষ্ট লাঘব করতে সরকারের তরফে এই উন্নয়নের কাজে হাত লাগানো হলেও কর্ণপ্রয়াগে মানুষদের দাবি, এই উন্নয়নই কাল হয়েছে তাঁদের।
রেললাইন তৈরির কাজ যে শুধু কর্ণপ্রয়াগের মানুষদের জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে তা নয়, প্রভাব পড়েছে হৃষীকেশেও। অন্তত এমনটাই দাবি করছেন সেখানকার স্থানীয়রা। হৃষীকেশের আটলি গ্রামে অন্তত ৮৫টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, হৃষীকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেল প্রকল্পে আওতায় রেলের টানেল তৈরির জন্য এই অবস্থা হয়েছে আটলি গ্রামের। গ্রামবাসীরা জানান, এলাকার প্রায় সব ঘরবাড়ি ও কৃষি জমিতে ফাটল দেখা দিতে শুরু করেছে।
একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তেহরি গাড়ওয়াল, মুসৌরির ল্যান্ডৌর বাজার, নৈনিতালের লোয়ার মল রোড এবং রুদ্রপ্রয়াগের অগস্ত্যমুনি ব্লকের ঢালীমঠ বস্তি এবং গুপ্তকাশী শহরে। কোথাও মাটি বসে যেতে শুরু করেছে, তো কোথাও দোকান এবং ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারাও এই পরিস্থিতির জন্য ‘উন্নয়নের জোয়ার’কেই দায়ী করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, পর্যাপ্ত পরিকল্পনা ছাড়াই বিশাল বিশাল নির্মাণ প্রকল্প চালনা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পর্যটকদের চাপ এবং যানবাহনের চাপেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এই পরিস্থিতি সংশয় তৈরি করেছে বাঙালি মনেও। উত্তরাখণ্ডে তীর্থে যাওয়ার পরিকল্পনা করা বহু মানুষ পরিস্থিতি দেখে পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেমন বেহালার বাসিন্দা অঙ্কুশ ঘোষ। পরিবারকে নিয়ে এই মরসুমেই বদ্রীনাথ যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু জোশীমঠের পরিস্থিতি দেখে না যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম বাবা-মাকে নিয়ে বদ্রীনাথ ঘুরতে যাব। কিন্তু যা পরিস্থিতি দেখছি, তাতে ভয় লাগছে। তাই আপাতত যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছি।’’
হিন্দুদের মতো শিখদেরও অন্যতম তীর্থক্ষেত্র হেমকুণ্ড সাহিব রয়েছে উত্তরাখণ্ডে। যা যেতে হয় জোশীমঠের পথ ধরেই। এই পরিস্থিতিতে সেই তীর্থক্ষেত্রে যাওয়া নিয়েও অনেকের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy