Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Assembly Election 2019

মহারাষ্ট্রে কমল আসন, হরিয়ানায় ধাক্কা আরও বড়, বিজেপির ফলাফলে অক্সিজেন বিরোধী শিবিরে

মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানা— এই দুই রাজ্যে ছিল সাধারণ নির্বাচন। আর ১৮টি রাজ্যে ছিল কয়েকটি করে আসনের উপনির্বাচন।

নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং জে পি নাড্ডা।—ছবি পিটিআই।

নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং জে পি নাড্ডা।—ছবি পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৯ ২১:৪২
Share: Save:

সরষের খেত যতটা ঘন লাগছিল বাইরে থেকে, ভোটযন্ত্রের ভিতরে উঁকি দিয়েই বোঝা গেল, ঘনত্ব মোটেই ততটা নয়। নিরঙ্কুশ ভাবেই মরাঠা ভূমির দখল ধরে রাখল বিজেপি-শিবসেনা জোট। কিন্তু প্রায় সব সমীক্ষা ভুল প্রমাণ করে আসন বেশ কিছু কমল। আর জাঠ রাজ্যে জোর ধাক্কা খেল গেরুয়া রথ। অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও ম্যাজিক সংখ্যায় পৌঁছনো হল না। বেশ খানিকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই হাড্ডাহাড্ডি টক্কর দিয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠল কংগ্রেস।

মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানা— এই দুই রাজ্যে ছিল সাধারণ নির্বাচন। আর ১৮টি রাজ্যে ছিল কয়েকটি করে আসনের উপনির্বাচন। ভোটের হাওয়া, ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষা, বিরোধী শিবিরের ঝিমুনি বা আগে থেকেই কিছুটা হাল ছেড়ে দেওয়া হাবভাব, বুথফেরত সমীক্ষা— সব কিছুতেই ইঙ্গিত মিলছিল যে, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দুই রাজ্যেই ক্ষমতায় ফিরছে বিজেপি। উপসর্গ বলছিল যে, বিরোধীদের অস্তিত্ব আরও সঙ্কুচিত হতে চলেছে। কিন্তু ভোটের ফলাফল চমকে দিয়েছে।

মহারাষ্ট্রে বিজেপি এবং শিবসেনার জোট ফের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। কিন্তু ২৮৮ আসনের বিধানসভায় এ বার ২০০ আসন পার করে দেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা এনডিএ ঘোষণা করেছিল, তার থেকে অনেক দূরে থেমে যেতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। ১৪৫টি আসন পেলে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা মেলে মহারাষ্ট্রে। বিজেপি ২০১৪ সালে একাই ১৪২টি আসন পেয়েছিল। এ বার তারা কোনওক্রমে ১০০ ছাড়িয়েছে। আর ভোটের আগে থেকেই একক বৃহত্তম দল হওয়ার এবং আদিত্য ঠাকরেকে মুখ্যমন্ত্রী করার হুঙ্কার ছাড়তে থাকা শিবসেনা গত বার পাওয়া ৭৫টি আসনও ধরে রাখতে পারেনি। প্রায় ২০টা আসন কমেছে তাদের। দু’দলে মিলে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতার চেয়ে অনেকটা বেশিই পেয়েছে। কিন্তু গত বারের চেয়ে তা উল্লেখযোগ্য ভাবে কম।

আরও পড়ুন: দলকে অভিনন্দন শাহের, দুই মুখ্যমন্ত্রীকেই জয়ের কৃতিত্ব দিলেন মোদী

ইউপিএ শিবিরের আসন সংখ্যা আবার গত বারের চেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ার ধারেকাছেও কংগ্রেস-এনসিপি জোট নেই ঠিকই। কিন্তু যে কংগ্রেস মহারাষ্ট্রের ময়দানে সে ভাবে নামেইনি এ বার, তারা গত বারের চেয়ে কয়েকটি আসন বাড়িয়ে নিয়েছে। আর বুড়ো হাড়ে খেল দেখিয়ে দিয়েছেন ‘মরাঠা স্ট্রংম্যান’ শরদ পওয়ার। তাঁর দল এনসিপি আসন সংখ্যায় নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে সরকারের শরিক দল শিবসেনার একেবারে ঘাড়ের উপরে।

বুড়ো হাড়ে ভেল্‌কি দেখিয়ে দিয়েছেন এক জাঠও। তিনি ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা। হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সে রাজ্যে কংগ্রেসের সবচেয়ে ওজনদার মুখ। রাহুল গাঁধীর জমানায় তরুণ নেতৃত্ব তুলে আনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল কংগ্রেসে, তাতে কিছুটা নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছিলেন হুডা। কংগ্রেস ছাড়তে পারেন বলেও লোকসভা নির্বাচনের পরে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ বার প্রায় শেষ মুহূর্তে এসে হরিয়ানায় দলের সেনাপতির ভূমিকায় হুডাকে ফিরিয়ে আনেন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। এবং সেই শেষ লগ্নে মাঠে নেমেই কংগ্রেসের আসন সংখ্যা গত বারের দ্বিগুণে পৌঁছে দিয়েছেন হুডা।

বুড়ো হাড়ে ভেল্‌কি দেখালেন কংগ্রেসের ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা।—ছবি পিটিআই।

৯০ আসনের হরিয়ানা বিধানসভায় ৪৬টি আসন পেলে নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠতায় পৌঁছনো যায়। বিজেপি ২০১৪ সালে ৪৭টি আসনে জিতেছিল। এ বার ৭৫ পার করার ‘সংঙ্কল্প’ নিয়েছিলেন গেরুয়া নেতৃত্ব। বুথফেরত সমীক্ষা আভাস দিয়েছিল, অতটা হবে না। তবে আগের বারের চেয়ে বেশ খানিকটা বাড়বে বিজেপির আসনসংখ্যা। হল ঠিক উল্টো। হরিয়ানা বিধানসভায় সবচেয়ে বড় দলের তকমা এ বারও বিজেপি পেল ঠিকই, কিন্তু নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা হারাল। ফলে বিধানসভা ত্রিশঙ্কু। সরকার ধরে রাখতে হলে হয় দুষ্যন্ত চৌটালার জেজেপি-র সমর্থন নিতে হবে বিজেপি-কে। অথবা নির্দল প্রার্থী হিসেবে যাঁরা জিতেছেন, তাঁদের প্রায় সকলকে পাশে টানতে হবে।

কংগ্রেসের জন্য অবশ্য সমীকরণটা আরও কঠিন। আসনসংখ্যা আগের বারের দ্বিগুণে নিয়ে যেতে পারলেও ম্যাজিক সংখ্যা থেকে হুডা অনেক দূরে। সরকার গড়তে হলে জেজেপি-কে এবং নির্দলদের অধিকাংশকে একই সঙ্গে পাশে পেতে হবে।

আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে ফিরলেও স্তিমিত গেরুয়া হাওয়া, দর বাড়াচ্ছে শিবসেনা, শক্তিবৃদ্ধি বিরোধীদের

চার-পাঁচ মাস আগের লোকসভা নির্বাচনে এই মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানাতেই বিরোধীদের ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিয়েছিল বিজেপি তথা এনডিএ। দুই রাজ্যে যখন ভোট ঘোষিত হল, তখনও বিরোধী শিবির ঠিক মতো কাটিয়ে উঠতে পারেনি লোকসভা নির্বাচনে মোদী ঝড়ের ধাক্কা। তাই টালমাটাল পায়েই এ বার দোর্দণ্ডপ্রতাপ বিজেপির মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছিল বিরোধীদের। কিন্তু ভোটের ফলে টাল খেয়ে গেল বিজেপির আত্মবিশ্বাসই।

কেন হল এই পরিস্থিতি? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, বিজেপির অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই এই ধাক্কার কারণ। অন্যান্য নির্বাচনে যে রকম সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপায় বিজেপি, এ বার তেমনটা করা হয়নি বলে তাঁদের মত। মোদী এবং শাহ এ বার মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় হাতে গোনা সভা করেছেন। ফলে ঝড় তোলা সম্ভব হয়নি। এই তত্ত্ব যদি মেনে নিতে হয়, তা হলে এটাও মানতে হবে যে, নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ ছাড়া বিজেপিতে আর কেউ নেই, যিনি ঝড় তুলতে পারেন। রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির এবং বিজেপি সরকারের নেতৃত্ব যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁদের জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে এই তত্ত্ব।

আরও পড়ুন: সারদা-কাণ্ডে প্রভাবশালী যোগ নিয়ে বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়কে জেরা করল সিবিআই

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আর একটি অংশ বলছেন, এই ফলাফলের কারণ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অসন্তোষই। দ্বিতীয় বার বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে দেশের ক্ষমতায় বিজেপি ফিরেছে ঠিকই। কিন্তু তার পরে এমন কোনও সিদ্ধান্ত সরকার নেয়নি, যাতে জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনে কোনও সুরাহা আসে। বরং অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশে। ব্যবসায়ী শ্রেণি কিছুটা ধাক্কা খেয়েছেন ইতিমধ্যেই। কর্মসংস্থানের প্রশ্নে এখনও কোনও দিশা মেলেনি। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নীকরণের সম্ভাবনা নিয়েও হইচই শুরু হয়েছে। তাই গেরুয়া রং কিছুটা ফিকে হয়ে গিয়েছে।

অনেক পর্যবেক্ষক আবার বলছেন, মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানায় আলাদা আলাদা ‘ফ্যাক্টর’ কাজ করেছে।

মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিবসেনা জোট করে লড়লেও ভিতরে ভিতরে পরস্পর বিরোধী চোরাস্রোত কাজ করেছে বলে মনে করছেন তাঁরা। ঠাকরে পরিবার থেকে এই প্রথম কেউ নির্বাচনে লড়লেন মহারাষ্ট্রে। আদিত্য ঠাকরেকে ভোটের ময়দানে নামিয়ে শিবসেনা ঘোষণা করেছিল যে, দলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকেই তুলে ধরা হচ্ছে। দেবেন্দ্র ফডণবীস সরকারের মুখ হওয়া সত্ত্বেও আদিত্যর নামে ভোটে লড়তে নেমেছিল শিবসেনা। বিজেপির চেয়ে বেশি আসন পেলে ফডণবীসকে আর কিছুতেই মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে দেওয়া হবে না— স্থির করে নিয়েছিল উদ্ধব ঠাকরের দল। তাই দুই শরিকই পরস্পরের আসনসংখ্যায় কোপ মারার চেষ্টা ভিতরে ভিতরে চালিয়ে গিয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। তার সুবিধা বেশির ভাগ এলাকাতেই এনসিপি পেয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। তবে শরদ পওয়াররা যে এ বার খুব জোরদার প্রচারে নেমেছিলেন এবং গোটা মহারাষ্ট্রে এনসিপি-কে যে চাঙ্গা করে দিয়েছিলেন, সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তুলনায় কংগ্রেসের প্রচার এবং উৎসাহ ছিল অনেক ম্যাড়মেড়ে। কংগ্রেস যে গুরুত্ব দিয়ে লড়লই না, সে কথা ভোটগ্রহণ মেটার পরে প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করেছিলেন এনসিপি নেতারাও। কংগ্রেস পূর্ণ উদ্যমে ময়দানে নামলে মহারাষ্ট্রের ফল আরও চমকে দিত বলে পওয়ার শিবির এখন দাবি করছে।

মহারাষ্ট্রে ফল প্রকাশের পর এনসিপি সমর্থকদের উচ্ছাস।—ছবি পিটিআই।

জাঠ ভোটব্যাঙ্কে ধসই হরিয়ানায় বিজেপির ধাক্কা খাওয়ার প্রধান কারণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের অনেকে। ২০১৪ সালে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার হাত থেকে জাঠ ভোটের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিতে পেরেছিল বলেই বিজেপি চণ্ডীগড়ের মসনদ দখল করতে পেরেছিল বলে তাঁরা মনে করছেন। কিন্তু তার পরে মুখ্যমন্ত্রী করা হয় মনোহরলাল খট্টরকে, যিনি জাঠ নন। শুধু তাই নয়, হরিয়ানার ইতিহাসে খট্টরই প্রথম অ-জাঠ মুখ্যমন্ত্রী। তাই খট্টরের নানা অপ্রিয় সিদ্ধান্ত জাঠ তালুকে আরও বেশি করে অপ্রিয় ঠেকেছে বলে বিশ্লেষকদের দাবি। রাজ্যের অ-জাঠ প্রধান এলাকায় বিজেপি এ বারও তুলানমূলক ভাবে ভাল ফল করেছে। কিন্তু জাঠ নেতা হুডার খাসতালুক হিসেবে পরিচিত যে সব জেলা, সেখানে বিজেপি-কে এ বার ধসের মুখ দেখতে হয়েছে।

বিশ্লেষকদের এই দাবি পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। হুডা এবং তাঁর অনুগামীরাই কিন্তু মূলত জয় পেয়েছেন কংগ্রেসের টিকিটে। হরিয়ানার যে কংগ্রেস নেতারা হুডার অনুগামী হিসেবে পরিচিত নন বা রাহুল ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, তাঁদের অধিকাংশই হেরেছেন। রণদীপ সুরজেওয়ালার হারকে অন্যতম উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। বিজেপি নেতারা সান্ত্বনা খুঁজে নেওয়ার ভঙ্গিতে বলছেন— হরিয়ানায় তো ইন্দিরা কংগ্রেস কিছু করতে পারেনি, যা করেছে, হুডা কংগ্রেস করেছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এ দিনও কিন্তু প্রথা মতো নয়াদিল্লির দলীয় সদর দফতর থেকে ভাষণ দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের। মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার জনতার প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। দারুণ ফলাফল হয়েছে বলে দাবি করে দলকে উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই ফলাফলে আসলে উজ্জীবিত হয়েছেন বিরোধীরা। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সামনে প্রায় উড়ে যাওয়া কংগ্রেস এই নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনও প্রত্যাশাই রাখেনি। তা সত্ত্বেও সব সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণ করে মহারাষ্ট্রে আসন বেড়ে গিয়েছে তাদের। হরিয়ানায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ফিরে আসা গিয়েছে। কংগ্রেস যে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েনি, যে কোনও রাজ্যে যে কোনও মুহূর্তে যে কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর জমি তৈরি রয়েছে, তা আবার প্রমাণ হয়ে গেল বলে দাবি করতে শুরু করেছেন দলের নেতারা।

শুধু কংগ্রেস নয়, বিজেপির বিরুদ্ধে থাকা প্রায় সব দলই কিন্তু মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানা বিধানসভার ফলাফল দেখে উজ্জীবিত। মহারাষ্ট্রের এনসিপি, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল হোক বা আপাতত কেরলে সীমাবদ্ধ থাকা বামেরা— এই ফলাফলে অক্সিজেন পেয়েছে সব পক্ষই। এনসিপি উজ্জ্বীবিত অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করে। বামেরা উজ্জীবিত কেরলের উপনির্বাচনে ভাল ফল করে। যে আসনগুলিতে উপনির্বাচন হয়েছে কেরলে, তাতে বামেদের ফল বেশ ভাল। কংগ্রেসের হাতে থাকা আসন সেখানে ছিনিয়ে নিতে পেরেছে সিপিএম। পাশাপাশি কেরলের কোনও আসনে জিততে পারেনি বিজেপি। অতএব সিপিএমের উচ্ছ্বাস স্বাভাবিক। কিন্তু তৃণমূলের উচ্ছ্বাসও উল্লেখযোগ্য।

নির্বাচন তো দূরের কথা, এ রাজ্যে কোনও উপনির্বাচনও ছিল না। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এ রাজ্যের তৃণমূল কর্মীদের নজর ছিল মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার ভোটের ফলাফলে। বিরোধীদের সঙ্গে বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলার ছবি যত স্পষ্ট হয়েছে, ততই উজ্জীবিত দেখিয়েছে তৃণমূল কর্মীদের। বিজেপি যে অপ্রতিরোধ্য নয়, দ্বিতীয় বার মোদীর বিপুল জয়ের পরেও যে বিজেপি-কে যখন তখন ধাক্কা দিয়ে দেওয়া যায়, সে কথা এই নির্বাচনে প্রমাণ হয়ে গেল বলে মনে করছে তৃণমূল। লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ঝড়ের মাত্র কয়েক মাস পরে গেরুয়া রথ যে ভাবে হোঁচট খেয়েছে দুই রাজ্যে, তাতে পশ্চিমবঙ্গেও একই ছবি তৈরি হবে বলে দাবি করতে শুরু করেছে এ রাজ্যের শাসক দল। লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি ১৮ আসন পেয়েছিল যে হাওয়া়য় ভর করে, তা এখন নেই বলে তৃণমূল এমনিতেই দাবি করছে। এ বার দুই রাজ্যের ফলাফলের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সে দাবি আরও জোর গলায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, লোকসভা ভোটে ধাক্কা খেয়ে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল তৃণমূল। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার ফলাফল দেখিয়ে কর্মীদের মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাস অনেকটা ফিরিয়ে আনবেন নেতৃত্ব। ফলে বিজেপির এই ফলাফল অক্সিজেন জোগাবে বাংলার শাসক দলকে।

উপনির্বাচনের ফলাফলেও কিছুটা অপ্রত্যাশিত প্রবণতা দেখা গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে এবং গুজরাতে কয়েকটি আসন বিজেপি হারিয়েছে। বিহারে বিজেপির বড় শরিক তথা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ ৩টি আসন খুইয়েছে লালুপ্রসাদের দল আরজেডির কাছে। কিন্তু সিকিমে ২টি নতুন আসন জিতেছে বিজেপি। তামিলনাড়ুতে জিতেছে বিজেপির শরিক এডিএমকে। অসমে নিজেদের ৩টি আসনই বিজেপি ধরে রেখেছে। তার মধ্যে ১টি আসন আবার বাঙালি প্রধান বরাক উপত্যকায়। সে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিজেপি নেতারা দাবি করছেন, এনআরসি যে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে একটুও ধস নামায়নি, অসমের ফলাফলেই তা প্রমাণ হয়ে গেল।

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election 2019 BJP NCP Maharashtra Haryana Congress Shiv Sena
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy