জো বাইডেন। ফাইল চিত্র।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে সেপ্টেম্বরে প্রথম বার ভারত সফরে আসছেন জো বাইডেন— জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে। কূটনৈতিক শিবির বলছে, পূর্বতন আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের ভারত সফরের তুলনায় বাইডেনের সফরের সময়টি ভূ-কৌশলগত এবং দ্বিপাক্ষিক, দুই বিচারেই অনেকটা কঠিন ও জটিল। জি২০ বৈঠকের পাশাপাশি ভারত-আমেরিকার বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত বিনিময় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাইডেনের সবিস্তার আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভারত সফরের কথা ঘোষণা করে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক আমেরিকার সহ-সচিব ডোনাল্ড লু বলেছেন, “এটি একটি উল্লেখযোগ্য বছর হতে চলেছে। ভারত জি২০ সম্মেলনের আয়োজন করেছে, আমেরিকা আয়োজন করছে অ্যাপেক, জাপান আয়োজন করছে জি৭ সম্মেলন। কোয়াড সদস্যেরা বিভিন্ন ব্যাপারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এ সবই আমাদের (ভারত ও আমেরিকা) আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দিচ্ছে।” বাইডেনের সফর প্রসঙ্গে ডোনাল্ড লু বলেন, “আমাদের প্রেসিডেন্ট এ বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত-সফরে যেতে মুখিয়ে রয়েছেন। এটা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম ভারত সফর। আগামী কয়েক মাসে কী ঘটে, সে দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছি আমরা।”
এক মাস আগেই ভারতে নতুন রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হয়েছেন এরিক গার্সেটি। দীর্ঘদিন পরে আমেরিকা ভারতে আবার রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেছে। লু আজ সেই বিষয়টিকেও ‘ইতিবাচক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা নেবেন গার্সেটি।” আগামী চার মাসে (অর্থাৎ বাইডেন আসার আগে) ভারতে একের পর এক আসবেন আমেরিকার বিদেশ, অর্থ এবং বাণিজ্য মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, গত এক বছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চিন-আমেরিকার অর্থনৈতিক যুদ্ধের পরে সার্বিক ভূ-কৌশলগত সংঘাত অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কার ‘ব্লক বিভাজন’-এর মতো পরিস্থিতি। এর পাশাপাশিই, ভারত এবং আমেরিকা গত দু’বছর ধরে লাগাতার চেষ্টা করেও এখনও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ধারে-কাছে আসতে পারেনি। অন্য দিকে, আমেরিকার শত চাপ সত্ত্বেও কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক ভাবে রাশিয়ার পাশ থেকে সরেনি মোদী সরকার। বরং আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের সমান্তরালেই ধাপে ধাপে ধাপে মস্কোর থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে দিল্লি। অথচ গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার চেষ্টা করেও আমেরিকার সঙ্গে ভারতের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে ওঠা সম্ভব হয়নি। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি তাই জটিল।
বাইডেনের আসন্ন সফরে এক ধাক্কায় সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা মনে করছে না কূটনৈতিক শিবির। এই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে, আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত রণেন সেন বলেন, “ভারত-আমেরিকা অসামরিক পরমাণু চুক্তি নিয়ে কাজ করার সময়ে জো বাইডেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল আমার। একটা সময়ে তো প্রত্যেক দিনই কথা হত। তার ভিত্তিতে বলতে পারি, উনি কোনও ক্ষেত্রেই সংঘাত বা সংঘর্ষ তৈরিতে বিশ্বাস করেন না। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কেতাবি ভিত্তিতে চলতে পছন্দ করেন। বাইডেন বিদেশনীতির ক্ষেত্রে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলার পক্ষপাতী।”
তবে প্রশ্ন হল, গোটা বিশ্ব যখন শিবিরে বিভক্ত হয়ে রয়েছে এবং আমেরিকা একটি শিবিরের নেতৃত্বের স্থানে, তখন বাইডেনের পক্ষে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কতটা সম্ভব হবে? এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী কয়েক মাস ভারত-আমেরিকা দৌত্যের পক্ষে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল বলেই মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy