Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

মূল্যবোধের স্বীকৃতি, বলছে জেএনইউ

২০১৬-য় বাম ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার, উমর খলিদ, অনির্বাণ ভট্টাচার্যদের গ্রেফতার করা হয়।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৩২
Share: Save:

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল জয়কে প্রতিষ্ঠানের মুক্তচিন্তার জয় বলেই মনে করছে তাঁর পুরনো ঠিকানা, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানের নানা বিভাগের সঙ্গে যুক্তদের বক্তব্য, অভিজিতের স্বীকৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও ভবিষ্যতে চলার পথকে আরও মজবুত করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনের সেক্রেটারি অবিনাশ কুমারের কথায়, ‘‘আমাদের পক্ষ থেকে খুব শীঘ্রই ওঁকে চিঠি লিখে আমন্ত্রণ জানানো হবে। যখন দেশে আসবেন, জেএনইউ-এ এসে যাতে বক্তৃতা দেন, তার অনুরোধ করব আমরা।’’ অবিনাশের কথায়, ‘‘উনি অনেক বার বলেছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তচিন্তার উদার পরিসর ওঁকে তৈরি করতে অনেকটা সাহায্য করেছে। ২০১৬ সালে যখন জেএনইউ আক্রান্ত হয়, তখন উনিও গোটা ঘটনার নিন্দা করেছিলেন এবং সেটা খুব স্পষ্টভাষায়। বলেছিলেন, সরকারের কোনও অধিকার নেই এ ভাবে খবরদারি করার। সাম্প্রদায়িকতা, বর্তমান সরকারের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে ও সামাজিক মূল্যবোধের পক্ষে তাঁর মনন সর্বদা জাগ্রত থেকেছে। এটাই জেএনইউ-র মূল্যবোধ। আজ তাঁর নোবেল প্রাপ্তিতে আন্তর্জাতিক স্তরে তার একটা স্বীকৃতি এল।’’

২০১৬-য় বাম ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার, উমর খলিদ, অনির্বাণ ভট্টাচার্যদের গ্রেফতার করা হয়। সেই সময় বিজেপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন অভিজিৎবাবু। তখনই জানিয়েছিলেন, জেএনইউ-এ পড়াকালীন ছাত্র আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৮৩ সালে তাঁকেও তিহাড় জেলে দিন দশেক কাটাতে হয়েছিল! অভিজিৎ জানিয়েছিলেন, ওই ছাত্র আন্দোলন বাম ঘেঁষা ছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি কার্যকলাপকে সমর্থন করেছিল কেন্দ্রের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার। সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ জানিয়েছিলেন, সে সময় ভর্তির ফি এতটাই বাড়ানো হয়েছিল যে, গ্রামীণ এলাকা থেকে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের কাছে তা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ছাত্র আন্দোলন তীব্র হয় এবং ৩৬০ জন ছাত্রছাত্রীকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিজিৎবাবু বলেছিলেন, ‘‘১৯৮৩-র সেই ঘটনায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল আমাদের বিরুদ্ধে! আমাদের রীতিমতো মারধর করা হয়েছিল। তার পরে তিহাড় জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে খুনের চেষ্টার অভিযোগের মামলা তুলে নেয় পুলিশ। কিন্তু দশটা দিন তিহাড় জেলেই রাত্রিবাস করতে হয়েছিল সে বার।’’

সেই ঘটনার কথা আজ নতুন করে স্মরণ করছে জেএনইউ-র ছাত্র সংসদ। ছাত্র সংসদের গত বছরের সভাপতি এন সাই বালাজির কথায়, ‘‘জেএনইউ-র বদনাম করার চেষ্টা তো কম হচ্ছে না। এই বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান সরকারের চক্ষুশূল। সমাজের সব স্তর থেকে আসা পড়ুয়াদের উদার মঞ্চ থেকে লিঙ্গবৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা জেএনইউয়ের বরাবরের ঐতিহ্য। অভিজিৎ এই মঞ্চ থেকেই উঠে এসেছেন। তাঁর নোবেল জয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ভাবনাতেই সিলমোহর দিল।’’

অভিজিৎবাবুর সমসাময়িক ইতিহাসের ছাত্র ও পরবর্তী সময়ে জেএনইউ-র অধ্যাপক জানকী নায়ারের কথায়, ‘‘ও জেলে গিয়েছিল ফাইনাল সেমেস্টারের ঠিক আগে। আমরা অনেকেই ওই ঘেরাওয়ে যোগ দিয়েছিলাম শুধু অভিজিৎ ছিল বলে। ওঁর বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে কলকাতা থেকে দিল্লি চলে এসেছিলেন।’’ জেএনইউ-এ অভিজিৎবাবুর সমসাময়িকদের বক্তব্য, বাম চিন্তাভাবনাকে চিরকাল লালন করেছেন তিনি। খাতায়-কলমে অবশ্য কোনও দলের সদস্য ছিলেন না। কিন্তু তিনি যে রাজনৈতিক ভাবে উদাসীন ছিলেন না, তার প্রমাণ ১৯৮৩।

অন্য বিষয়গুলি:

Abhijit Vinayak Banerjee Nobel Prize JNU
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy