Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘গুন্ডা ঢুকিয়েছে ভিতরের লোকই’

জেএনইউএসইউয়ের প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষের দাবি, অবিনাশ কুমার মহাপাত্রের মতো সঙ্ঘ-ঘেঁষা অধ্যাপকের মদত ছিল বলেই অবাধে ক্যাম্পাসে ঢুকতে পেরেছে অত দুষ্কৃতী।

লাঠি হাতে এবিভিপি-র সদস্য বলে পরিচিত শিবপূজন মণ্ডল (বাঁ দিকে) এবং বিকাশ পটেল (ডান দিকে)। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে এই ছবিটি।

লাঠি হাতে এবিভিপি-র সদস্য বলে পরিচিত শিবপূজন মণ্ডল (বাঁ দিকে) এবং বিকাশ পটেল (ডান দিকে)। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে এই ছবিটি।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫১
Share: Save:

একই লম্বা বারান্দার সামনে পড়ুয়াদের সার সার ঘর। তারই কোনও-কোনওটি তছনছ, লন্ডভন্ড। দরজার উপরের কাচ ভেঙে চুরমার। অথচ সামান্য আঁচড়ও পড়েনি অন্য কয়েকটিতে। এমনকি দরজায় লাগানো কাগজের ফুলও অক্ষত!

জেএনইউয়ের সবরমতী হস্টেলে এই ঘটনা কাকতালীয় কি না বলা শক্ত। কিন্তু যে সব ঘর অক্ষত, তাদের অধিকাংশের দরজাতেই বড় বড় অক্ষরে এবিভিপি সদস্যদের নাম। ১৫৬ ও ১৫৭ নম্বর ঘরে কাশ্মীরি পড়ুয়ারা থাকেন। সেই দু’টো ঘর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। জেএনইউয়ের আক্রান্ত পড়ুয়াদের তাই অভিযোগ, ক্যাম্পাসে হামলার পিছনে হাত এবিভিপি-সঙ্ঘ-বিজেপিরই। এই হামলা ঠান্ডা মাথায় ছক কষে করা এবং তাতে যোগসাজশ আছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও। নইলে, তাঁদের প্রশ্ন— যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজায় পুলিশ ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকে, ক্যাম্পাসে মোতায়েন থাকে প্রায় তিনশো নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী, সেখানে লাঠি-রড-হকি স্টিক হাতে ৫০-৭০ জন ঢুকে পড়তে পারে কী ভাবে? কী করেই বা প্রায় এক ঘণ্টা তাণ্ডব চালাতে পারে? ভিতরে ‘নিজেদের’ লোক না-থাকলে, কে ওই সমস্ত মুখোশধারী বহিরাগতকে চিনিয়ে দিল প্রতিটি হস্টেল? চিহ্নিত করে দিল বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সমর্থকদের ঘর? এত বার ডাকা সত্ত্বেও পুলিশ পড়ুয়াদের নিরাপত্তা দিতে এ ভাবে ব্যর্থ হল কেন? বিশেষত যেখানে দুপুর আড়াইটে নাগাদই ক্যাম্পাসে ভাবগতিক ভাল না-ঠেকার কথা প্রথম বার তাদের জানানো হয়েছিল?

জেএনইউএসইউয়ের প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষের দাবি, অবিনাশ কুমার মহাপাত্রের মতো সঙ্ঘ-ঘেঁষা অধ্যাপকের মদত ছিল বলেই অবাধে ক্যাম্পাসে ঢুকতে পেরেছে অত দুষ্কৃতী। আস্কারা আছে বলেই গত চার-পাঁচ দিন ধরে উত্তপ্ত হচ্ছিল ক্যাম্পাসের পরিবেশ। ঐশীর সামনেই জেএনইউএসইউয়ের সাধারণ সম্পাদক সতীশ চন্দ্রকে মারধর করা হয়েছিল। উপস্থিত সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ অধ্যাপক নাকি তখন বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের দেখে নেওয়া হবে।’’ রবিবার হামলার মুখে পড়া অধ্যাপক সৌগত ভাদুড়ি, সোনাঝরিয়া মিন্‌জ়, শুক্লা সাবন্তরাও বলছেন, সৌগতকে মারার সময়ে গুন্ডাদের বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘ইয়ে উও নেহি হ্যায়।’’ তার পরে রেহাই মেলে। একই অভিজ্ঞতা অনেক পড়ুয়ারও। তাঁদের দাবি, আগে থেকে ঠিক করেই তবে মারতে এসেছিল গুন্ডারা।

‘পরিকল্পিত আক্রমণ’ নিয়ে বস্তুত গত কাল থেকেই হাজারো ‘সাক্ষ্যপ্রমাণ’ হাজির সোশ্যাল মিডিয়ায়। মুখে রুমাল-বাঁধা, লাঠি-হাতে যে তরুণীর ছবি ইতিমধ্যেই ‘ভাইরাল’, তাঁকে
এবিভিপি-র কর্মী কোমল শর্মা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অনেকে। বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যাওয়া নেতা উদিত রাজের অভিযোগ, গত কাল জেএনইউয়ের গেটের সামনে বিজেপি ও আরএসএসের যে নেতারা নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, ‘গোলি মারো শালো কো’ স্লোগান তুলছিলেন, তাঁদের মধ্যে থেকেও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে কয়েক জনকে। এঁরা হলেন, মেহরলি জেলার প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি মনোজ শর্মা, আর কে পুরমের প্রাক্তন বিধায়ক অনিল শর্মা, মেহরলি জেলার প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি আজাদ সিংহ, ওই জেলারই প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক বিজেপির জগমোহন মেহলাওত, আরএসএস কর্মী রবীন্দ্র সিংহ প্রমুখ।

ছাত্র সংগঠন এআইএসএ-র প্রেসিডেন্ট এন সাই বালাজির অভিযোগ, হামলার আগে ‘ইউনিটি এগেনস্ট লেফ্ট’ নামে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছিল। যাতে অ্যাডমিন ছিলেন ১৮ জন। যার মধ্যে ন’জনকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন এবিভিপি-র বেঙ্কট চৌবে, বিজয় কুমার, দেবেন্দ্র কুমার, সুমন্ত সাহু, মণীশ জঙ্গোড়, অম্বুজ মিশ্র, যোগেন্দ্র ভরদ্বাজ প্রমুখ। ওই গ্রুপেই কখন, কী ভাবে কোন গেট দিয়ে ঢুকে হামলা চালানো হবে, তার পরিকল্পনা হয়েছিল বলে অভিযোগ। হামলার পরে নিজের সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ডিলিট করেছেন যোগেন্দ্র। অথচ এত দিন টুইটারে এবিভিপি সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি। ছড়িয়ে পড়া ছবি দেখিয়ে জেএনইউ পড়ুয়ারা দাবি করছেন, তাণ্ডব শুরুর আগে লাঠি হাতে যারা জমায়েত হয়েছিল, তাদের মধ্যেও রয়েছে এবিভিপি-র দুই সক্রিয় কর্মী। যেমন, জেএনইউয়ে এবিভিপি-র এগ্‌জিকিউটিভ কমিটির সদস্য বিকাশ পটেল। দিল্লি পুলিশ যেমন ফাইবার গ্লাসের ব্যাটন ব্যবহার করে, ঠিক তেমনই একটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে তাকে। তার থেকে দু’হাত দূরেই নাকি দাঁড়িয়ে ছিল এবিভিপি-র আর এক সদস্য শিবপূজন মণ্ডল। ওই ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেদের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিয়েছে তারাও। এবিভিপি ঠারেঠোরে বোঝাতে চাইছে প্রথমে আক্রান্ত হয়ে তবেই প্রত্যাঘাত করেছে তারা। প্রশ্ন তুলছে, কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে সেমেস্টার পরীক্ষার নাম নথিভুক্তিতে। পড়ুয়াদের পাল্টা প্রশ্ন, মতের বিরোধ থাকলে, লাঠিই কি ভাষা?

অন্য বিষয়গুলি:

JNU JNU Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy