ছবি: পিটিআই।
টিউশন ফি দিয়ে সেমেস্টার পরীক্ষার নথিভুক্তিতে রাজি হলেও হস্টেলের বর্ধিত ফি পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবিতে অনড়ই রইলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) আন্দোলনরত পড়ুয়ারা। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হস্টেল-অডিটের সিদ্ধান্তের বিরোধী তাঁরা। ক্যাম্পাসে অশান্তির দায় উপাচার্য বেআইনি ভাবে হস্টেলে ঘাঁটি গেড়ে থাকা পড়ুয়াদের উপরে চাপানোর পরে যা তাৎপর্যপূর্ণ। তার মধ্যেই এ দিন জেএনইউ কর্তৃপক্ষ নোটিস দিয়ে জানিয়েছেন, সোমবার থেকে ফের ক্লাস শুরু হবে।
শনিবার দিল্লি পুলিশ সাংবাদিক বৈঠক করে জেএনইউ-তাণ্ডবের জন্য বাম ছাত্রদের দিকে আঙুল তোলার পরেই বিতর্ক বাধে। প্রশ্ন ওঠে, দিল্লি পুলিশ কি সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন এবিভিপির কথায় তদন্ত করছে? রবিবার পাল্টা সাংবাদিক বৈঠকে জেএনইউএসইউ সেই অভিযোগই তুলল। একই সঙ্গে তাদের দাবি, পুলিশের বয়ান থেকে স্পষ্ট, পুরো ঘটনার সঙ্গে তারা কতখানি যুক্ত এবং তদন্তে কতটা পক্ষপাতিত্ব করছে তারা। ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষের দাবি, যে ভিডিয়ো ফুটেজের ভিত্তিতে তাঁদের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন। কারণ, ওই ছবি থেকে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয়। একই সঙ্গে ঐশী বলেন, ‘‘যখন মাথায় একের পর এক রডের ঘা পড়ছিল, তখন শুধু বাঁচতে চেয়েছিলাম। এখন সব সামনে আসার পরে আমি বিচার চাই।’’
ঐশীদের অভিযোগ, ৪ জানুয়ারি থেকেই সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ অধ্যাপকদের মদতে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের মারধর করছিল এবিভিপি-র সদস্যরা। পেরিয়ার হস্টেল থেকেও তেমন খবর আসায় ছুটে গিয়েছিলেন ঐশী-সহ অনেকে। সেখানে পৌঁছনোর পরে পাথর ছুড়ছিলেন এবিভিপি-র সদস্যরা। সব জেনেও পুলিশ এবং জেএনইউয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা কিছু করেননি। অথচ এখন সেই ‘রুখে দাঁড়ানোর’ ফুটেজ তুলে ধরেই কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে ঐশীদের! ছাত্র সংসদের অভিযোগ, এর কথা পুলিশকে অনেক আগে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সহায়তা মেলেনি। ঐশীর প্রশ্ন, ‘‘সব জেনেও যদি পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীরা হাত গুটিয়ে বসে থাকে, তা হলে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে হিংসার মুখে পড়া পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কাজ নয় কি?’’
আরও পড়ুন: ঐশীরা অভিযুক্ত, কিন্তু মুখোশধারীরা? দিল্লি পুলিশের ভূমিকায় বিতর্ক
ঐশীরা জানান, ১০৮ ও ১২০ টাকা দিয়ে সেমেস্টারের জন্য নাম নথিভুক্ত করবেন তাঁরা। কিন্তু বর্ধিত হস্টেল ফিয়ের এক পয়সাও দেবেন না। সাধারণ সম্পাদক সতীশ যাদবের চ্যালেঞ্জ, ‘‘নাম নথিভুক্ত করার কথা বলে আমরা এক পা এগোলাম। এ বার বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের কথা বলুক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকার।’’
এ দিন সকালে জনা কয়েক পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বললেও জেএনইউএসইউয়ের প্রতিনিধিদের না ডেকে ফের বিতর্কে জড়িয়েছেন উপাচার্য এম জগদেশ কুমার। ঐশীর কটাক্ষ, ‘‘উপাচার্য কাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, কোনও ধারণা নেই!’’ এ দিন সকালে চিকিৎসার জন্য এমসে যান ঐশী। পাশাপাশি কেরল ভবনে গিয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। বিজয়ন বলেন, ‘‘জেএনইউয়ে লড়াইয়ের শক্তি ফুটে ওঠে ঐশীর চোখে।’’ ‘হল্লা বোল’ নামে একটি বইও তাঁকে উপহার দেন বিজয়ন।
৪ ও ৫ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে হিংসাত্মক ঘটনার পরম্পরা বর্ণনা করতে গিয়ে এ দিন বেশ কিছু এবিভিপি নেতা-নেত্রী এবং সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ কয়েক জন অধ্যাপকের নাম করেছে জেএনইউএসইউ। তাদের প্রশ্ন, কোন চাপের কারণে তদন্ত চলাকালীন সাংবাদিক বৈঠকে অভিযুক্ত হিসেবে বাম ছাত্রদের নাম বলল পুলিশ? অথচ আজ, শনিবার আরও ৩৭ জনকে শনাক্ত করার কথা বলা হলেও তা সর্বসমক্ষে আনা হল না! ঐশীদের আশঙ্কা, এর পরে হস্টেল অডিটের নামে ফের এক দফা হেনস্থা করা হবে বামপন্থী পড়ুয়াদের। চেষ্টা হবে উৎখাত করার। তাই নির্বাচিত হস্টেল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা না-বলে তা করতে দেওয়া হবে না।
এ দিন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী বলেন, জেএনইউ কাণ্ডে দিল্লি পুলিশের ভূমিকা দেখার পরে তাদের উপরে আস্থা রাখা যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy