হেমন্ত সোরেন। — ফাইল চিত্র।
দুপুর থেকেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল ইডি। সাত ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ইডির আধিকারিকদের সঙ্গে রাজভবনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফাও দেন। এর পর বুধবার রাতেই ইডি গ্রেফতার করে হেমন্ত সোরেনকে। সূত্রের খবর, হেমন্ত ইডি আধিকারিকদের জানান,মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই তিনি ‘অ্যারেস্ট মেমো’তে সই করবেন। তার পরেই ইডি আধিকারিকেরা তাঁকে রাজ্যপালের কাছে নিয়ে যান। সেখানেই তিনি ইস্তফা দেন। জেএমএমের তরফে জানানো হয়েছে, বিধানসভায় তাদের দলনেতা হবেন রাজ্যের বর্তমান পরিবহণ মন্ত্রী চম্পাই সোরেন। ঝাড়খণ্ডকে পৃথক রাজ্য করার দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছিল, তাতে বড় ভূমিকা ছিল এই চম্পাইয়ের।
গ্রেফতারির পর এক্স (সাবেক টুইটার)-এ একটি কবিতা পোস্ট করেন হেমন্ত, যা সম্ভবত তাঁরই লেখা। লেখেন, জীবন আসলে বড় যুদ্ধ। প্রতিটা মুহূর্তে তিনি লড়াই করেছেন। আগামী দিনেও করবেন, তবে আপস করবেন না। শেষে তিনি জানিয়েছেন, কোনও মতেই হার স্বীকার করবেন না।
হেমন্তের গ্রেফতারির আগে জেএমএম সাংসদ মহুয়া মাজি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ইডি হেফাজতে রয়েছেন। ইডির একটি দলের সঙ্গে রাজ্যপালের কাছে গিয়েছেন ইস্তফাপত্র জমা দেওয়ার জন্য। চম্পাই সোরেন বিধানসভার দলনেতা হতে চলেছেন। আমাদের যথেষ্ট সংখ্যক আসন রয়েছে।’’
রাজভবনের সামনে দাঁড়িয়ে রাজ্যের আর এক মন্ত্রী বান্না গুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা চম্পাই সোরেনকে আমাদের বিধানসভার নেতা নির্বাচন করেছি। রাজ্যপালকে শপথ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করতে এসেছি।’’ কংগ্রেস বিধায়ক রাজেশ ঠাকুর জানিয়েছেন, শাসকজোটের সকল বিধায়কই তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন। চম্পাই নতুন মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
বুধবার বিকেলে জল্পনা তৈরি হয়, হেমন্ত যদি গ্রেফতার হন, তা হলে কে হবেন রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী? নাম উঠে এসেছিল হেমন্তের স্ত্রী কল্পনার। কিন্তু তাতে আপত্তি জানান হেমন্তের বৌদি তথা জেএমএম বিধায়ক সীতা সোরেন-সহ দলের একাংশ। নভেম্বরেই ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোট। তার আগে নতুন করে আর রাজ্যে উপনির্বাচন হবে না। এই পরিস্থিতিতে কল্পনাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করা হলেও উপনির্বাচনে তাঁকে জিতিয়ে আনাও সম্ভব নয়। সে কারণে, দলের বড় অংশ চম্পাইয়ের নামই প্রস্তাব করেন বলে সূত্রের খবর।
বুধবার দুপুরে হেমন্তের রাঁচীর বাড়িতে পৌঁছয় ইডি। সূত্রের খবর, ইডি আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার আগে জেএমএম প্রধান, তথা বাবা শিবু সোরেনের আশীর্বাদও নেন হেমন্ত। তার পরেই নিজের সরকারি বাসভবনে ইডি আধিকারিকদের মুখোমুখি হন হেমন্ত। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে আগেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, বুধবার তাদের সামনে উপস্থিত হতে পারবেন।
এ সবের মধ্যেই ইডির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেছেন হেমন্ত। তফসিলি জাতি, জনজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনে মামলা হয়েছে। হেমন্তের অভিযোগ, ইডি তাঁর দিল্লির ফাঁকা বাড়ি থেকে যে বিএমডব্লিউ গাড়ি এবং নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে, তার মালিক তিনি নন। ইডি তাঁকে মালিক মনে করছে, যা আদতে ‘ভুল তথ্য’।
জমি জালিয়াতি মামলায় নাম জড়িয়েছে হেমন্তের। ৬০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য গত কয়েক দিন ধরেই খুঁজছিল ইডি। এর মধ্যেই রবিবার রাত থেকে হঠাৎ বিজেপির তরফে দাবি করা হয়, হেমন্ত ‘নিখোঁজ’। রবিবার শেষ বার দিল্লি বিমানবন্দরে নামতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কিন্তু তার পরে ইডি হেমন্তের দিল্লির বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পায়নি। এমনকি, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য দিল্লির ঝাড়খণ্ড ভবনেও খোঁজ করা হয়। সেখানেও ছিলেন না তিনি। ইডি হেমন্তের ফাঁকা বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দু’টি বিএমডব্লিউ গাড়ি পায়। আর নগদ ৩৬ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করে। এর পরে প্রায় ৩০ ঘণ্টা ‘নিখোঁজ’ থাকার পরে রাঁচীতে নিজের বাড়ির সামনেই দেখা যায় হেমন্তকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখানে বসেই নিজের দল জেএমএম-এর বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন হেমন্ত। বুধবার দুপুরে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পৌঁছয় ইডি।
এ নিয়ে বুধবার পথে নামে ঝাড়খণ্ডের শাসকদল। বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কর্মী-সমর্থকেরা। ঝামেলার আশঙ্কা করে অতিরিক্ত নিরাপত্তার আর্জি জানিয়েছিল ইডি। ঝাড়খণ্ড প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যে বিশৃঙ্খলার আন্দাজ করে দুপুরেই তিন সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। সেই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ঝাড়খণ্ডের অর্থ দফতরের সচিব। রাঁচীর কাঁকে রোডে হেমন্তের বাড়ির চার পাশেও জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy