প্রতীকী ছবি।
আন্দামানে গ্রেট আন্দামানিজ় জনজাতির ৯ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পরে জারোয়াদেরও কোভিড পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। বাইরের পৃথিবীর ছোঁয়াচ প্রায় বাঁচিয়ে চলা জারোয়া কিংবা একেবারেই বিচ্ছিন্ন থাকা সেন্টিনেলিজ় জনজাতির মধ্যে এক বার করোনা ছড়ালে তাঁদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নৃতত্ত্ববিদেরা। তাই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে গ্রেট আন্দামানিজ়দের সকলের পরীক্ষা হয়েছে। এর পরেই জারোয়াদের পরীক্ষা করানো হবে।
বতর্মানে আন্দামানে জারোয়া জনজাতির মানুষের সংখ্যা অন্তত ৫২০। সমস্যা হল, আন্দামানের মতো জল-জঙ্গুলে পরিবেশে এই যাযাবর শিকারী গোষ্ঠীর মানুষদের কাছে পেয়ে তাঁদের করোনা পরীক্ষা করানো কঠিন বলেই মানছেন অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার সুপারিনটেন্ডিং অ্যানথ্রোপলোজিস্ট অমিতকুমার ঘোষ। তিনি বলেন, “বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। কারণ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে খাবারের খোঁজে জারোয়ারা ঘুরে ঘুরে বেড়ান। এঁদের যাযাবর প্রকৃতির জন্য সকলের করোনা পরীক্ষা কঠিন হবে।” সংক্রমণ রুখতে জারোয়াদের ‘স্ট্রেট দ্বীপে’ থাকতে বলা হয়েছে। জারোয়ারা সাধারণত বাইরের পৃথিবী থেকে বিনিময় প্রথায় জিনিস সংগ্রহ করে থাকেন। সংক্রমণের আশঙ্কায় তা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জারোয়াদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা, স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে জারোয়াদের কথা বলা আপাতত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি কর্মীদের নিয়মিত করোনা পরীক্ষা করে, ফেস শিল্ড, গ্লাভস পরে তবেই জঙ্গলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
নৃতত্ত্ববিদদের মতে, জারোয়াদের তা-ও পরীক্ষা করা গেলেও সেন্টিনেলিজ়রা বাইরের জগতের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখেন না। বছর দুয়েক আগে মার্কিন এক পর্যটক তাঁদের দ্বীপে নামলে তাঁকে হত্যা করেন সেন্টিনেলিজ়রা। বিচ্ছিন্ন থাকার ফলেই এই জনজাতির মধ্যে বাইরে থেকে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কম। কিন্তু একই কারণে তাঁরা এক বার সংক্রমিত হলে তা মহামারির আকার নেওয়াও অসম্ভব নয়।
গ্রেট আন্দামানিজ় জনজাতির মানুষের সংখ্যা এখন মাত্র ৫৯। এঁদের মধ্যে ৩৪ জন স্থায়ী ভাবে স্ট্রেট দ্বীপে থাকেন। বাকিরা থাকেন পোর্ট ব্লেয়ারে। এঁরা কেউ কেউ সেখানে সরকারি চাকরি করেন। মাঝেমধ্যে স্ট্রেট দ্বীপের গ্রামে যান। পোর্ট ব্লেয়ারের ৫ জন এবং স্ট্রেট দ্বীপের ৪ জন মিলিয়ে মোট ৯ জন গ্রেট আন্দামানিজ়ের কোভিড হওয়ায় রীতিমতো উদ্বেগে প্রশাসন ও নৃতত্ত্ববিদেরা। ৫ জন অবশ্য সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। বাকিরা স্থানীয় জি বি পন্থ হাসপাতালে ভর্তি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, পোর্ট ব্লেয়ারের বাসিন্দা গ্রেট আন্দামানিজ়রা জুনের আনলকের সময়ে চাকরিতে যোগ দিয়ে সংক্রমিত হন। এই প্রসঙ্গে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের নৃতত্ত্ববিদ্যা বিভাগের প্রধান অরূপরতন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গোটা দেশ বাড়ি থেকে কাজ করছে, তখন কেন এঁদের কাজে যোগ দিতে হল! আন্দামানের জারোয়া, সেন্টিনেলিজ়, ওঙ্গে, গ্রেট আন্দামানিজ় ও শম্পেন— এই পাঁচটি জনজাতিকে ‘পার্টিকুলারলি ভালনারেবল ট্রাইবাল গ্রুপ’ (পিভিটিজি) বলে স্বীকৃতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে করোনার সময়ে কেন এঁদের বাড়তি সুরক্ষা দেওয়া হল না?”
আন্দামান প্রশাসনের দাবি, পোর্ট ব্লেয়ারের বাসিন্দা ৫ জন সংক্রমিত হওয়ার পরেই স্ট্রেট দ্বীপের বাসিন্দাদের সেখান থেকে না-বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ওই দ্বীপে যাওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়। তা হলে কী ভাবে ওই দ্বীপের ৪ বাসিন্দা সংক্রমিত হলেন, সেই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে। বিষয়টি নিয়ে আন্দামান প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে দিল্লি। স্থানীয় প্রশাসনের একটি সূত্রের মতে, বাইরের লোকেদের ওই দ্বীপে যাওয়া বন্ধ করা হলেও জনজাতিদের উপরে সেই অর্থে নিষেধাজ্ঞা ছিল না। সম্ভবত তাই করোনা ঢুকেছে দ্বীপে।
গত দেড়শো বছর ধরে গ্রেট আন্দামানিজ়রা বাইরের মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। যার ফলও হয়েছে মারাত্মক। ১৮৫০ সাল নাগাদ গ্রেট আন্দামানিজ়দের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার। ১৯০১ সালে তা নেমে আসে ৬২৫-এ। যার একটি বড় কারণ ছিল সিফিলিস, গনোরিয়ার মতো অসুখ ও বিভিন্ন ধরনের জ্বর। নৃতত্ত্ববিদ অমিতবাবু বলেন, “আন্দামানের ওই জনজাতিদের শরীরে কয়েক হাজার বছর ধরে নিজস্ব রোগ প্রতিরোধের যে ক্ষমতা রয়েছে, তাতে তাঁরা স্থানীয় রোগের
সঙ্গে লড়তে সক্ষম। কিন্তু বাইরে থেকে যাওয়া রোগ প্রতিরোধের কোনও ক্ষমতা নেই।” এই ধাঁচের বাইরের রোগের প্রভাবে সম্পূর্ণ জনজাতি নিশ্চিহ্ন হওয়ার উদাহরণ অনেক রয়েছে। তাই করোনার সময়ে আর ঝুঁকি নিতে নারাজ আন্দামান প্রশাসন। বহিরাগতেরা করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে আন্দামানে গেলেও তাঁদের সাত দিনের গৃহ-নিভৃতবাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পজ়িটিভ হলে থাকতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক নিভৃতবাসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy