ক্ষমতায় এসে নেহরু জমানার যোজনা কমিশন তুলে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এ বার তাঁর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সরাসরি জওহলরাল নেহরুর অর্থনৈতিক মডেলকেই আক্রমণ করলেন। জেটলির অভিযোগ, স্বাধীনতার তিন-চার দশক পরেও দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ১ থেকে ২ শতাংশের মধ্যে। এর জন্য দায়ী নেহরু মডেল।
নরেন্দ্র মোদী তাঁর সরকারের দু’বছরের কাজের রিপোর্ট পেশ করেছেন লাল কেল্লা থেকে। কিন্তু কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, মোদীর বহু প্রতিশ্রুত সেই ‘অচ্ছে দিন’ কবে আসবে? মোদী সরকার যখন গোটা বিশ্বের মধ্যে এ দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার সব থেকে বেশি বলে বড়াই করছে, কংগ্রেস ও অন্য বিরোধীরা তখন প্রশ্ন তুলছে মূল্যবৃদ্ধি ও গরিবদের দুর্দশা নিয়ে। এরই মধ্যে আজ মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে নেহরু মডেলকে আক্রমণ করলেন নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি জেটলি।
এমনকী, কংগ্রেস যে এ দেশে আর্থিক সংস্কারের কাজ শুরু করার কৃতিত্ব দাবি করে, তা-ও উড়িয়ে দিয়েছেন জেটলি। তাঁর দাবি, নরসিংহ রাও মোটেও উদারপন্থী বা ঘোর সংস্কারপন্থী ছিলেন না। তাঁকে সংস্কারের জনক বলা হলেও আসলে তিনি ছিলেন রক্ষণশীল। অন্ধ্রপ্রদেশের মন্ত্রী থাকার সময়ে বেসরকারি কলেজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাও দেখেন, নেহরুর চিন্তাধারার ব্যর্থতায় বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার খালি। দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে সংস্কারের পথে হাঁটতে হয়েছিল।
মোদী সরকারের কোনও মন্ত্রী এই প্রথম এতটা সরাসরি নেহরুর অর্থনৈতিক মডেলকে আক্রমণ করলেন। স্বাভাবিক ভাবেই তা নিয়ে রাজধানীতে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, জেটলি যা বলছেন, তা একেবারেই ভুল তথ্য এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইউপিএ আমলে বৃদ্ধির যে হার ছিল, মোদী সরকার কেন তা ধরে রাখতে পারছে না, সরকার তার জবাব দিক আগে। আনন্দর যুক্তি, ‘‘বৃদ্ধির হার একই জায়গায় আটকে রয়েছে। নতুন লগ্নি, কর্মসংস্থান হচ্ছে না। নতুন শিল্পের জন্য ঋণ নেওয়া হচ্ছে না। কারখানায় ক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে না। মোদী সরকার এসে আর্থিক বৃদ্ধি মাপার পদ্ধতিটাই বদলে দিয়েছে। পুরনো পদ্ধতি ফিরিয়ে আনলেই আসল ছবিটা বোঝা যাবে।’’
অর্থমন্ত্রীকে এখনও কেন নেহরু-মডেলের সমালোচনা করতে হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, আর্থিক সংস্কারের পর এ দেশে গত ২৫ বছর নেহরুর অর্থনৈতিক মডেল অনুপস্থিত। তার আগের ১৫ বছরও নেহরুর মডেল পুরোপুরি ছিল না। নেহরু মডেলে যে অনেক খামতি ছিল, আর্থিক সম্পদ পুনর্বন্টনের মতো সংস্কার ছিল না, সেটাও সকলের জানা। তত্ত্বগত ভাবে মনমোহনের আমলেও নেহরু মডেলকে নিশানা করা হয়েছে। বিজেপি তো নেহরুর নামকেই ঘৃণা করে। জয়তীর কথায়, ‘‘আমার অদ্ভুত লাগছে, ৩৫ বছর
যে মডেল আর অনুসরণই করা হচ্ছে না, তার সমালোচনা করে এখনও কেন সরকারকে ব্যর্থতার অজুহাত খুঁজতে হচ্ছে?’’
জেটলি আজ বলেছেন, ‘‘পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আমাদের হাতে সম্পদই কম ছিল। সত্তর ও আশির দশক পুরো নষ্ট করা হয়েছে। যার ফলে বৃদ্ধির হার ১ থেকে ২ শতাংশেই আটকে ছিল। জাপান-কোরিয়া-তাইওয়ান যখন অর্থনৈতিক সাফল্য পেয়েছে আমরা তখন নেহরুর এই চিন্তাভাবনায় আটকে থেকেছি যে— কিছু কাজ শুধু সরকার করবে।’’ উদাহরণ হিসেবে জেটলি বলেন, ‘‘১৯৪৭ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত সরকার ভেবেছিল টেলিফোনের পরিষেবা দেওয়া তার কাজ। ফলে স্বাধীনতার প্রথম ৫০ বছরে মাত্র এক শতাংশ ভারতীয়ের টেলিফোন ছিল। বেসরকারি ক্ষেত্র আসার ফলে টেলিফোন যোগাযোগ ২০ বছরে ৮০ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছে।’’
জয়তীর অবশ্য যুক্তি, ‘‘নেহরুর আমলে যে ভারি শিল্প থেকে শুরু করে আইআইটি গড়ে তোলায় জোর দেওয়া হয়েছিল, তাতে ভর করেই পরবর্তী জমানায় তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy