Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Balakot

ফের ‘সক্রিয়’ বালাকোটের জঙ্গি ঘাঁটি, গোয়েন্দা রিপোর্টে চাঞ্চল্য

গত অগস্টে সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করার পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। কিন্তু, তাতে তেমন ফল মেলেনি।

বালাকোটের জঙ্গি ঘাঁটি।— ফাইল চিত্র।

বালাকোটের জঙ্গি ঘাঁটি।— ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:৪৮
Share: Save:

নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় কাশ্মীর নিয়ে ভারতকে বিঁধতে উদ্যত পাকিস্তান। কিন্তু, এর মধ্যেই প্রকাশ্যে এল বালাকোটে ধ্বংস হয়ে যাওয়া জঙ্গি শিবির নতুন করে গজিয়ে ওঠার ছবি। সাত মাস আগে অভিযান চালিয়ে যে জঙ্গি শিবির ভারতীয় বিমান বাহিনী গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, সেখানে ফের জইশ জঙ্গিদের তৎপরতা দেখা গিয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর।

গত অগস্টে সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করার পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। কিন্তু, তাতে তেমন ফল মেলেনি। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা রয়েছে। সেখানেও যে ইসলামাবাদ একই রকম ভাবে চেষ্টা চালাবে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু, গোয়েন্দা সূত্রে যে তথ্য হাতে এসেছে তা চমকে দেওয়ার মতো। জানা গিয়েছে, কূটনৈতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি, তলে তলে ‘ভিন্ন’ চেষ্টাও চালাচ্ছে পাকিস্তান। পুলওয়ামা হামলার পর জইশ-ই-মহম্মদের বিরুদ্ধে ‘কড়া ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু, গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর পাক ভূমিতে জইশকে ‘ছাড়’ দিয়েছে ইসলামাবাদ। ফলে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে ওই জঙ্গি গোষ্ঠীটি। জানা গিয়েছে, গত ৫ অগস্টের পর পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর হ্যান্ডলারদের সঙ্গে বৈঠকও করেন জইশ কমান্ডার মুফতি আবদুল রউফ আসগর। কাশ্মীর নিয়ে ভারতের পদক্ষেপকে সামনে রেখে সীমান্তের এ পারে নাশকতা চালাতে মুখিয়ে রয়েছে জইশ। তার ছক কষতে গত ৬ অগস্ট রাওয়ালপিণ্ডিতে এ নিয়ে বৈঠকও করে জইশ নেতারা।

আরও পড়ুন: ‘ছোটখাটো বিষয়েও এত নজর!’ বিমানবন্দরে মোদীর বিশেষ সৌজন্য নিয়ে প্রশংসার ঝড়

গোয়েন্দা সূত্রে খবর মিলেছে, শুধু মাত্র জম্মু ও কাশ্মীর নয়, গুজরাত ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যকেও টার্গেট করতে পারে জইশ। নাশকতা চালানোর জন্য ভারতের ভিতরে এবং বাইরে থেকে হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তারই অঙ্গ হিসাবে কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত জঙ্গিদের কাজে লাগাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে জন্য কাশ্মীরি জঙ্গি সংগঠনগুলিকে সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। কাশ্মীরে নাশকতা চালানোর জন্য পাকিস্তানের ভাওয়ালপুর, পেশওয়ার ও জমরুদ এলাকায় ৫০ জন জঙ্গিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মনসেরা, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের কোটলি ও গুলপুরেও জঙ্গিদের ‘কৌশল’ ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আর বালাকোটের জইশ ক্যাম্প থেকেই চালানো হচ্ছে ওই প্রশিক্ষণ শিবির। এছা়ড়াও, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চরসাদা, মর্দান-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে জঙ্গি নিয়োগের ক্ষেত্রেও জোর দিয়েছে জইশ। এমনকি, আফগানিস্তান সীমান্তে থাকা জঙ্গিদেরও কাশ্মীরে নিয়ে আসার ছক কষেছে জইশ। গোয়েন্দাদের মত, কাশ্মীর ইস্যুকে সামনে রেখে ‘সর্বশক্তি’ প্রয়োগ করতে চাইছে জইশ। মনসেরায় জঙ্গি ক্যাম্পের দায়িত্বে রয়েছে হাফিজ সইদের ছেলে তালহা নিজে।

গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ভারতে ঢোকানোর জন্য পুঞ্চ ও রাজৌরি সেক্টরের ওপারে থাকা লঞ্চ প্যাডগুলিতে ইতিমধ্যেই অন্তত ১০০ জঙ্গিকে জড়ো করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের কোথাও হামলা চালানোই তাদের লক্ষ্য। আশঙ্কা করা হচ্ছে, কাশ্মীরের সেনা ব্যারাক বা জাতীয় সড়কে সেনা কনভয়ে হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা। গত ১১ অগস্ট পাকিস্তানের সিয়ালকোটের জঙ্গিদের দলটিকে জইশ কমান্ডার মুফতি আসগর যে এই নির্দেশ দিয়েছে তাও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

আরও পড়ুন: ‘সিদ্ধান্তের জন্যে ধন্যবাদ,’ প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়েই আপ্লুত প্রবাসী কাশ্মীরি পণ্ডিতরা

একই সঙ্গে সক্রিয় করে তোলা হয়েছে হিজবুল মুজাহিদিনের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীকেও। গত ২৬ অগস্ট আইএসআই হ্যান্ডলারদের সঙ্গে বৈঠক করে হিজবুল নেতারা। গুরেজ সেক্টর দিয়ে অনুপ্রবেশ চালিয়ে ভারতে হামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই গোষ্ঠীটিকে।

জইশ জঙ্গিদের তৎপরতা নিয়ে এক জাতীয় নিরাপত্তা আধিকারিক জানিয়েছেন, ফিদায়েঁ বা আত্মঘাতী হামলা হতে পারে। কাশ্মীরে যে টেলিফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ জারি হয়েছে তা ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে জঙ্গিরা। তার পর তারা ঢুকে হামলা চালাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই আধিকারিক।

সম্প্রতি জইশের পাক্ষিক পত্রিকা ‘মদিনা মদিনা’য় উঠে এসেছে কাশ্মীর ও সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ প্রসঙ্গও। ভারতের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে জইশ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে ভয়াবহ হামলা চালায় জইশ। তার পরই পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মনসেরা জেলায় অবস্থিত বালাকোটে বিমানহানায় জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারত। কিন্তু, কাশ্মীর ইস্যুকে সামনে রেখে সাত মাসের মধ্যে ফের সেই ঘাঁটিগুলিকে সক্রিয় তুলেছে জঙ্গিরা। আর তাতে পাকিস্তানের মদত রয়েছে বলেই গোয়েন্দা সূত্রে খবর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy