Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে লড়াই শুরু সুপ্রিম কোর্টে

আইন মন্ত্রক সূত্রের খবর, শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা কোন যুক্তিতে সওয়াল করবেন, তার প্রস্তুতিও চলছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০৯
Share: Save:

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সাংবিধানিক না অসাংবিধানিক! এ বার লড়াই শুরু সুপ্রিম কোর্টে।

বৃহস্পতিবারই এই বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেল আইইউএমএল (ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন অব মুসলিম লিগ)। আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন দলের চার সাংসদ পি কি কুনহালিকুট্টি, ই টি মহম্মদ বশির, আবদুল ওয়াহাব, কে নভস কানি-সহ একাধিক নেতা। তাঁদের অভিযোগ, বিলে পাকিস্তান-বাংলাদেশ-আফগানিস্তানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। কংগ্রেস-সহ আরও বেশ কিছু বিরোধী দল এর পর সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে।

আইন মন্ত্রক সূত্রের খবর, শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা কোন যুক্তিতে সওয়াল করবেন, তার প্রস্তুতিও চলছে। মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এই বিলের উদ্দেশ্য খুবই সীমিত— প্রতিবেশী তিনটি দেশে ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার সংখ্যালঘুদের এ দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া। এই বিলে কারও নাগরিকত্ব খারিজ করা হচ্ছে না। কিছু মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে।

তবে প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল সোলি সোরাবজি মনে করছেন, এই বিল সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে যেতে পারে। বাজপেয়ী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল সাধারণত মোদী সরকারকে আইনি প্রশ্নে সমর্থন করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনিও পাশে নেই। বাজপেয়ী জমানার সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভে অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র কী করতে পারে না। কেউ বলতে পারেন, আরও উদার হয়ে সরকার আরও মানুষকে নাগরিকত্ব দিতে পারত। অন্য দেশের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের পরিপন্থী হতে পারে না।’’

আবেদনে মুসলিম লিগের অভিযোগ, বিল সংবিধানের মূল ভাবনার বিরুদ্ধে। সংবিধান বলে, সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে। কিন্তু এই বিলে ছ’টি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বললেও মুসলিমদের বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই এই বিল সংবিধানের ১৪-তম অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। কিন্তু আইন মন্ত্রকের যুক্তি, এ ক্ষেত্রে সকলে সমান নয়। তিন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে মুসলিমরা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার নন। তাই ১৪-তম অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠছে না। সরকারি আইনজীবীদের যুক্তি, সংবিধানের ১৫-তম অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনের প্রশ্নও উঠছে না। কারণ, এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ধর্ম, জাত, লিঙ্গ, জন্মস্থানের ভিত্তিতে রাষ্ট্র নাগরিকদের মধ্যে ভেদাভেদ করতে পারে না। আইন মন্ত্রকের বক্তব্য, এই বিলটি যাঁরা ভবিষ্যতে নাগরিক হবেন, তাদের জন্য। তাই ১৫-তম অনুচ্ছেদ খাটে না।

আইন মন্ত্রকের জানাই ছিল, এই বিল নিয়ে আদালতে লড়তে হবে। কারণ, অসমের বিশিষ্টজনেরা চলতি বছরের গোড়াতেই সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানান, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দেওয়া হোক। সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, সংসদে বিল পাশ হওয়ার পর এ নিয়ে বিচার হবে। আজ মুসলিম লিগ অভিযোগ করেছে, প্রতিবেশী দেশে নিপীড়িত মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা হচ্ছে।

আইন মন্ত্রকের যুক্তি, ইসলামি রাষ্ট্রের মুসলিমদের সমস্যা মেটানো ভারত সরকারের কাজ নয়। তা ছাড়া, যে কেউ চাইলে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। গত পাঁচ বছরে ভিন দেশের ৫৬৬ জন মুসলিমকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল প্রশ্ন তুলেছিলেন, কারা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার, কারা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী, তা কী ভাবে ঠিক হবে? সরকারি তরফের যুক্তি, বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের কেউ বৈধ নাগরিকত্ব পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেই ভয়ে এই মানুষগুলিকে কোথায় ফেলে দেওয়া হবে?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy