অতিমারির প্রথম ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি বা জিডিপি-র ৬.৬ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল। ফাইল চিত্র।
কোভিডের ফলে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হতে আরও ১২ বছর লাগবে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মতে, অতিমারির ধাক্কায় অর্থনীতির ক্ষত ২০৩৪-৩৫-এ গিয়ে ভরাট হবে।
কোভিড ও লকডাউনের ফলে দেশের অর্থনীতির গতি কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। অতিমারির প্রথম ধাক্কাতেই দেশের অর্থনীতি বা জিডিপি-র ৬.৬ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল। আজ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক তার বার্ষিক ‘কারেন্সি অ্যান্ড ফিনান্স’ রিপোর্টে বলেছে, আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি এলেও তা সবেমাত্র কোভিডের আগের পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে অর্থনীতি সমান ভাবে ঘুরে দাঁড়ায়নি।
অতিমারির সময়ে কৃষিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। কারখানার উৎপাদন, নির্মাণ ঘুরে দাঁড়ানোর পথে। হোটেল, পরিবহণ, যোগাযোগ, ব্যবসায়িক লেনদেনের মতো ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা গেলেও, এখনও এই ক্ষেত্রগুলি সমস্যায় জর্জরিত। সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতির কাঠামোগত সমস্যা, কোভিডের ক্ষত এখনও চ্যালেঞ্জ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাধা হয়ে উঠেছে। কারণ তার ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে বৃদ্ধির করুণ ছবি এবং লগ্নির অভাবের মতো সমস্যা তৈরি হয়েছে। ভারতের মতো আমদানি করা তেল নির্ভর দেশে সমস্যা আরও বড় হয়ে উঠেছে। কারণ এমনিতেই কোভিডের পরে মানুষের জন্য সুরাহার বন্দোবস্ত করতে গিয়ে সরকারের রাজকোষে টানাটানির দশা চলছে।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মতে, গৃহস্থের আয়ে টান পড়েছে। ফলে সংসার খরচের পরে হাতে কম টাকা থাকছে। শ্রমিকেরা শহর থেকে গ্রামে ফিরেছেন। তার ফলে বাজারে কেনাকাটা কমেছে। ফলে আর্থিক বৃদ্ধির গতিপথই নীচের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আপাতত দেশের আর্থিক বৃদ্ধি ৬.৫ থেকে ৮.৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। তবে তা অর্থনীতিতে একগুচ্ছ সংস্কারের উপরে নির্ভর করছে। জিডিপি-র তুলনায় সরকারি দেনার পরিমাণ কমিয়ে আনা জরুরি। জিডিপি-র তুলনায় সরকারি দেনার হার এখন ৯০ শতাংশ। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মতে, এই হার আগামী পাঁচ বছরে ৬৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। অর্থনীতির হাল ফেরাতে, বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে মূল্যবৃদ্ধি বা জিনিসপত্রের দামও থিতু হওয়া প্রয়োজন।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের উপরেই বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব। কিন্তু এখন তা বিপদসীমার উপরে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এ দিনের রিপোর্টে যে ভাবে বাজারদর থিতু হওয়ার প্রয়োজনের কথা বলেছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মতে, বৃদ্ধি ধরে রাখতে কম খরচে
জমির বন্দোবস্ত, শিক্ষা ও কর্মী প্রশিক্ষণে বেশি খরচ করে শ্রমিকদের মানোন্নয়ন, শহরের পরিকাঠামো উন্নতিতে সংস্কার জরুরি।
কোভিডের প্রথম বছর, ২০২০-২১-এ আর্থিক বৃদ্ধির বদলে জিডিপি-র ৬.৬ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল। অর্থনীতির পরিভাষা মেনে দেশের অর্থনীতি মন্দার কবলে চলে গিয়েছিল। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বক্তব্য, ২০২১-২২-এ ৮.৯ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি, চলতি অর্থ বছর, ২০২২-২৩-এ ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি এবং তার পরে ৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে নিয়ে, ভারত কোভিডের ফলে ক্ষতি ২০৩৪-৩৫-এ কাটিয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান অনুযায়ী, টাকার অঙ্কে, ২০২০-২১-এ অর্থনীতির উৎপাদনে লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৯.১ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২১-২২-এ লোকসানের পরিমাণ ১৭.১ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২২-২৩-এ লোকসান ১৬.৪ লক্ষ কোটি টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy