অসমের ডিটেনশন সেন্টার ওরফে ট্রানজ়িট শিবিরে বন্দি থাকা ঘোষিত বিদেশিদের অবিলম্বে তাঁদের নিজের দেশে পাঠানোর জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু কেন্দ্র হলফনামা জমা দিয়ে জানাল, বিদেশিদের অল্প সময়ের মধ্যে ফেরত পাঠানো কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। কারণ যে দেশের তিনি প্রকৃত নাগরিক সেই দেশের সরকার ওই ব্যক্তির পরিচয় ও ঠিকানা যাচাই করে প্রত্যর্পণ অনুমোদন করলে, তবেই সেই ব্যক্তিকে ওই দেশে ফেরত পাঠানো যেতে পারে। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এএস ওক এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চ অসম সরকার এবং কেন্দ্রকে অবৈধ বিদেশি বিতাড়ন নিয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিল।
সরকারের তীব্র সমালোচনা করে আদালত বলে, সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনও বিদেশিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখা যায় না। বন্দিদের পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেন, আটক ব্যক্তিদের বিদেশি বলে দাগিয়ে দিলেও তাঁরা আদতে কোন দেশের মানুষ তা প্রামাণ্য ভাবে নির্ধারণ করতে পারেনি সরকার। যাঁদের বাংলাদেশি বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তাঁদের নিজের নাগরিক বলে মানতে বা দেশে ফেরাতে নারাজ। আদালত বলে, কাউকে বিদেশি চিহ্নিত করলেই অবিলম্বে তাঁকে নিজের দেশে ফেরানোর দায়িত্ব সরকারের। সে ক্ষেত্রে ঠিকানা না জানা অজুহাত হতে পারে না। তিনি যে দেশের
নাগরিক সেখানকার রাজধানীতে তাঁকে পাঠাতে হবে। এর পরে ওই ব্যক্তিকে নিজের ঠিকানায় পাঠানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশের। সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকাল কাউকে আটকে রাখা মৌলিক অধিকার বিরোধী। তাঁদের জন্য এ ভাবে বছরের পর বছর সরকারি অর্থের অপচর মানা যায় না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাখিল করা হলফনামায় বলা হয়েছে, কোনও ধৃত বিদেশির কাছে তাঁর নিজের দেশের পরিচয় সংক্রান্ত কোনও নথিপত্র থাকলে তাঁর প্রত্যর্পণ দ্রুত হতে পারে। কিন্তু কারও সঙ্গে কোনও কাগজপত্র না থাকলে সংশ্লিষ্ট বিদেশি দূতাবাস থেকে তাঁর পরিচয় যাচাই করা বাধ্যতামূলক। সেই দেশের বিদেশ মন্ত্রক ঠিকানা ও পরিচয় নিশ্চিত করার পরে ওই ব্যক্তিকে ফেরত নিতে রাজি হলে তবেই তাঁকে পাঠানো সম্ভব। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি পরের শুনানি হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)