Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Afghanistan

Afghanistan: নামের মায়া কি ফিকে আফগান স্নো-র

ইব্রাহিমের প্রপৌত্র সামির পাটানওয়ালার দাবি, “আমাদের সেই আফগান স্নো কিন্তু গাঁধীজির আশীর্বাদ পেয়েছে।”

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২১ ০৮:২৭
Share: Save:

ভোরের শিশিরকনার মতো স্নিগ্ধ সেই মেয়ের ধবধবে কপালটুকুই চোখে পড়েছিল প্রথমে। আফগানিস্তানের পাহাড়ের বরফের শুভ্রতাটুকু যেন ধারণ করেছে সে। সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘শবনম’ সাক্ষী, আফগানকন্যা ও তার বাঙালি প্রেমিকের সেই প্রথম দেখার।

১৯১৯ নাগাদ ভারতে তৈরি এক প্রসাধনী ক্রিম হাতে আফগানিস্তানের রাজারও নাকি নিজের দেশের শুচিশুভ্র তুষারের কথা মনে পড়ে! সেই থেকে নাম আফগান স্নো! ভারতবাসীর মনে পড়শি দেশ আফগানিস্তানের আদরের ঠাঁইটুকুর স্মারক সেই নামেই। “আমরাই ভারতের প্রথম সাজগোজের ক্রিম। মাল্টিপারপাস ভ্যানিশিং ক্রিম”, মুম্বই থেকে বলছিলেন শতাব্দী-প্রাচীন প্রসাধনী পণ্যটির নির্মাতা সংস্থার ম্যানেজার আশরফ দালাল। বিশ শতকের গোড়ায় রাজস্থানের ঝালোয়ার থেকে মুম্বইমুখী এক তরুণের উদ্ভাবনী দক্ষতাও মিশে সেই ক্রিমে। তাঁর নাম ইব্রাহিম সুলতানালি পাটানওয়ালা। দাউদি বোহরা মুসলিম পরিবারের ছেলেটির
উত্তরপুরুষেরা আজও পারিবারিক ব্যবসার ধারা বহন করছেন।

ইব্রাহিমের প্রপৌত্র সামির পাটানওয়ালার দাবি, “আমাদের সেই আফগান স্নো কিন্তু গাঁধীজির আশীর্বাদ পেয়েছে।” বিদেশি পণ্য বয়কটের দিনে পাটানওয়ালার ‘আফগান স্নো’কে নাকি ছাড় দিয়েছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। গুণমানে বিলিতি প্রসাধনীর সঙ্গে পাল্লা দিলেও আফগান স্নো তখন মুম্বইয়ের কারখানায় তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে গাঁধী শংসাপত্র দেন আফগান স্নো-কে।

সাবেক বিজ্ঞাপনে নারীর সৌন্দর্যের ‘পবিত্রতম স্নিগ্ধতা’, রোদে, ঝড়ে, ধুলোয় বর্ম হিসেবে পরিচিতি। সদ্য স্বাধীন দেশে ভারতসুন্দরী প্রতিযোগিতার ‘স্পনসর’। ১৯৮০এর দশকেও পদ্মিনী কোলাপুরী, পুনম ঢিলোঁর মতো বলিউড সুন্দরীরা আফগান স্নো-র মডেল। মোদ্দা কথা, এ দেশের জনপ্রিয় সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে উঠে আসতে বাধা হয়নি নামের আফগান অনুষঙ্গ। আশরফ সাহেব কিন্তু এখন বলছেন, “আগে আমাদের সংস্থার বিভিন্ন সাবানটাবানের নামেও আফগান শব্দটা থাকত। সৌন্দর্যের মাপকাঠি হিসেবে নামের এই আফগান ছোঁয়াচটুকুই ছিল ইউএসপি। কিন্তু আজকাল আফগান বললে লোকে জঙ্গি ভাবে। তাই বেশির ভাগ প্রসাধনীর নাম থেকেই আফগান শব্দটা সরিয়ে দিতে হয়েছে।”

ইতিহাসের সুরভি মাখা শতায়ু ‘আফগান স্নো’র নামটুকু অবশ্য অটুট। প্রসাধনে আফগানি তুষারের সঙ্গে তুলনীয় সুরভিত মলম। বা কলকাতার খাবারে জনপ্রিয় সাবেক কেবিনের চিকেন বা মাটন আফগানি। সেই ঝোলমাখা কাটলেটের সঙ্গে আফগানিস্তানের কোন বিশেষ পদের যোগ তা অবশ্য বলা শক্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্য যুগ ও আধুনিক ভারতীয় ইতিহাসের অধ্যাপক অমিত দে-র মতে, এই সব নামে ভারতীয় মননে আফগানিস্তানের সমাদরেরই চিহ্ন। ইতিহাসের নানা পর্বে আফগানরা কখনও দিল্লির শাসক বা আক্রমণকারী। তবু বীরত্ব ও ন্যায়ের সঙ্গেও তাঁদের নাম জড়িয়ে। অমিতবাবুর কথায়, “দিল্লির শাসক লোদি বংশ বা শের শাহও আফগান। ন্যায়পরায়ণ হিসেবেও শের শাহের খ্যাতি ছিল। বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়ার প্রবাদটিও শের শাহের আমলের।” পরবর্তীকালে কাবুলিওয়ালা শব্দটিও জনপ্রিয় হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গল্প তো আছেই! অন্যত্রও কাবুলিওয়ালাদের ত্যাগ, বীরত্ব, সহমর্মিতার কথা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। বোলপুরের একটি বাজারে আগুন লাগলে সবাই যখন পিছপা, পরিস্থিতি সামলাতে কাবুলিওয়ালারাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ১৯১৩র একটি বক্তৃতায় তাঁদের ভূয়সী প্রশংসা করেন রবীন্দ্রনাথ। অমিতবাবুর মতেও, “তালিবান উত্থানের জন্য আফগানদের একটি মাত্র পরিচয়কেই বড় করে দেখা ঠিক নয়।"

আজকের ভারতে নানা সংস্থার প্রসাধনীর ছড়াছড়ি। আফগানিস্তানে শবনমদের সঙ্কটের দিনে তবু এক চিরন্তন আফগান পরিচয়ই মেলে ধরছে আফগান স্নো।

অন্য বিষয়গুলি:

Afghanistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy