যোগ দেয়নি ন্যাশনাল কংগ্রেস, পিডিপি, কংগ্রেস বা সিপিএমের মতো দলগুলি। কিন্তু তাতেও জম্মু-কাশ্মীরের ব্লক উন্নয়ন পরিষদের নির্বাচনে ৩১৬টি ব্লকের মধ্যে মাত্র ৮১টি পেয়ে থেমে থাকতে হল বিজেপিকে। ২১৭টি আসন পেয়েছেন নির্দল প্রার্থীরা।
৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পরে এই প্রথম কোনও ভোট হল জম্মু-কাশ্মীরে। গত প্রায় তিন মাস ধরে কার্যত স্তব্ধ উপত্যকা। নেই ইন্টারনেট-টেলিফোন। বন্ধ স্কুল-কলেজ, সিংহ ভাগ অফিস। এমন আবহেও বৃহস্পতিবার ভোট পড়েছে ৯৮ শতাংশেরও বেশি! ব্লক উন্নয়ন পরিষদের এই নির্বাচনে অবশ্য সাধারণ মানুষ ভোট দেন না। শুধু মাত্র পঞ্চ ও সরপঞ্চরাই এখানে ভোট দেন। কাল সাত হাজার প্রতিনিধি ভোট দিয়েছেন। ফলপ্রকাশের পরে দেখা যায়, কাশ্মীরে ১৮টি, জম্মুতে ৫২টি এবং লাদাখে ১১টি আসনে জিতেছে বিজেপি। ভোটে অংশ নেওয়া গ্রাম প্রধানদের বেশির ভাগই জানিয়ে দিয়েছেন, মূলত বিজেপিকে আটকাতেই গত কাল ভোট দিতে বুথে গিয়েছিলেন তাঁরা। দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই উপত্যকার উন্নয়ন।
কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশেও তুমুল সমালোচনার মুখে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই অবস্থায় গত কালের ভোটে বিজেপির ফল যা-ই হোক, বিষয়টিকে গণতন্ত্রের জয় বলে তুলে ধরতে চাইছে তারা। আজ টুইট করে উপত্যকার বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘৩৭০ বিলোপের পরে জম্মু-কাশ্মীরে এত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হওয়ায় আমি
খুবই খুশি। কালকের ভোটই প্রমাণ করে, দেশের মানুষ এখনও গণতন্ত্রে আস্থা রাখেন।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘এই ভোট জম্মু-কাশ্মীরের জন্য ইতিহাস তৈরি করেছে। ১৯৪৭ সালের পরে এই প্রথম সেখানে ব্লক উন্নয়ন পরিষদের কোনও ভোট হল।’’
ভোট দিতে আসা প্রতিনিধিদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছিল প্রশাসন। তাঁদের আলাদা রাখা হয়েছিল হোটেলে। বুথে পৌঁছনোর জন্য ব্যবস্থা ছিল বিশেষ বাসেরও। গোটা রাজ্যে এত কড়াকড়ির মধ্যেও ৯৮ শতাংশের বেশি ভোট পড়ায় প্রশ্ন উঠছে, এত মানুষ আচমকা ভোট দিতে এলেন কেন? বিশেষ করে বিধানসভা বা লোকসভা ভোটে যেখানে কোথাও কোথাও ২০ শতাংশ ভোটও পড়ে না উপত্যকায়। প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, শ্রীনগরের মতো শহরাঞ্চলে নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি বেশি থাকলেও গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি তেমন নয়। পাশাপাশি এই গোটা ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন মাত্র সাত হাজার গ্রাম প্রতিনিধি। বিধানসভা বা লোকসভা ভোটের ভোটার সংখ্যার তুলনায় যা অনেকটাই কম।
গ্রাম প্রধানেরা জানিয়েছেন, বিজেপির মতো দলকে উপত্যকায় ঢুকতে না দেওয়াটাও বেশি ভোট পড়ার অন্যতম কারণ। জম্মু বরাবরই বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু সেখানেও ফল তেমন ভাল হয়নি। বেশির ভাগ আসনেই জিতেছেন নির্দল প্রার্থীরা।
প্রতিনিধিদের অন্যতম কুপওয়ারার মুখতার আহমেদ পির বলেন, ‘‘রাস্তা, আলো আর জলের জন্যই তো ভোটটা দেওয়া। আর কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধানও দরকার। তবে আগে আমার এলাকার স্কুলের ভবনটিকে দোতলা করতে হবে।’’ শ্রীনগরের সরফরাজ বেগের কথায়, ‘‘আমরা সব দিক থেকে হেরে যাচ্ছি। নির্বাচনে লড়েছি কারণ বিজেপিকে সরানোটা দরকার।’’ সোপোরের শাহিদ সাত্তারের নজর মূলত উন্নয়নে। তবে একই সঙ্গে জানালেন, বিজেপিকে গোটা অঞ্চল থেকে দূরে রাখতে চান তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি কাশ্মীরে নিজেদের জমি শক্ত করতে চাইছে। আমার জেলা বারামুলায় অবশ্য ২৫টা আসন নির্দলরাই পেয়েছেন।’’
গ্রাম প্রতিনিধিদের মুখে যখন ‘বিজেপি হটাও’ স্লোগান, দলের জম্মু-কাশ্মীর শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক কউলের অবশ্য দাবি, বেশির ভাগ নির্দলই নাকি খুব শীঘ্র বিজেপিতে যোগ দেবেন। বললেন, ‘‘দল খুব ভাল ফল করেছে বলা যাবে না, অন্তত আমাদের প্রত্যাশা এমন ছিল না।’’ কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গুল ভাটের ব্যাখ্যা, ‘‘৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ গোটা বিষয়টিতে একটা বড় ভূমিকা নিয়েছে। কাশ্মীরের মানুষ যে এটা একেবারেই ভাল চোখে নেননি, এই ফলই তার প্রমাণ।’’